দেশের প্রশাসন রাজনৈতিকভাবে জিম্মি ছিল: শ্বেতপত্র কমিটি
বক্তব্য রাখছেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
বিগত সরকারের আমলে দেশের প্রশাসন রাজনৈতিকভাবে জিম্মি ছিল বলে দাবি করেছেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
রোববার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ দাবি করেন।
আজ সরকারের ৮৫ জন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করেছে শ্বেতপত্র কমিটি। বৈঠকে ৩২ জন সচিব ও সিনিয়র সচিব উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন তিনি।
ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রশাসন রাজনৈতিকভাবে জিম্মি ছিল। অর্থ লুটপাটের জন্য প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নেও রাজনৈতিক প্রভাব ছিল বলে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটিকে তৎকালীন সচিব ও সিনিয়র সচিবরা জানিয়েছেন। এখন তারা স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দাবি করেছেন বলেও জানান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন প্রকল্প নেওয়ার আগেই জমি কেনার অনিয়ম পাওয়া গেছে। প্রকল্পের দরকারি যন্ত্রপাতি কিনতে দুর্নীতি করা হয়েছে। ঠিকাদার নিয়োগেও অনিয়ম করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলে সব প্রকল্প অনুমোদনে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব ছিল। সেই সময় উন্নয়নের নামে যে বয়ান সৃষ্টি করা হয়েছিল, এর বিপক্ষে কেউ কিছু করতে গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আলোচনায় বক্তারা জানান, তারা পুরোটাই পরিস্থিতির শিকার ছিলেন। কেউ কেউ হেনস্থার শিকার হয়েছেন বলেও জানান তারা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) দুর্বলতা কাটানো দরকার জানিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা ও চলমান সংস্কার কাজ ঠিক মতো হলে জবাবদিহি নিশ্চিত হবে।
শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে শ্বেতপত্র প্রধান উপদেষ্টার হাতে তুলে দেওয়া হবে। এরপর সরকার সিদ্ধান্ত নেবে, এটি নিয়ে কী করা হবে।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, আমলাদের পেশাগত সমিতিগুলো কেন সুরক্ষা দিতে পারেনি, শ্বেতপত্র কমিটির এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেছেন, আমলাতন্ত্রের পেশাগত কাঠামো ভেঙে ফেলা হয়েছিল। সংগঠনগুলোর দলীয়করণ করা হয়েছিল। সংগঠনের নেতারা সুবিধাবাদী রাজনীতির অংশ হয়ে গিয়েছিলেন। ফলে যৌথভাবে ভূমিকা পালনের অবকাশ ছিল না।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের ত্রিমুখী সংযোগের কারণে দুর্নীতি হয়েছে।
আজকের বৈঠকে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রকল্প নিয়েও আলোচনা হয়েছে; যেমন হাইটেক পার্ক, কর্ণফুলী টানেল, জ্বালানি খাত, সামাজিক সুরক্ষা, রাজস্ব সংগ্রহ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা। ব্যাংকব্যবস্থায় সরকারের ভূমিকা ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ নিয়েও কথা হয়েছে বলে জানান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
ঢাকা/হাসনাত/এনএইচ