‘রোজার আগে নিত্যপণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন ও ঋণসীমা উঠিয়ে দেওয়া হবে’
রোজাকে সামনে রেখে সাময়িকভাবে বড় বড় আমদানিকারক বা কোম্পানির ক্ষেত্রে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন ও ঋণসীমা উঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মুনসুর।
তিনি বলেছেন, এটা শুধু রোজায় সাময়িক সময়ের জন্য করা হবে। ছোলা, চিনি, গম, ভোজ্যতেলসহ ৪-৫টি পণ্য ছাড়া অন্য কোনো পণ্যের জন্য তা প্রযোজ্য হবে না।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মূল্যস্ফীতি ও পণ্যের মূল্য বিষয়ে সভা শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, সাপ্লাই চেইন নিয়ে অনেক আলোচনা করা হয়েছে। আমরা প্রতিটা নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে আলোচনা করেছি। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের ডিউটি জিরো করে দেওয়া হয়েছে। আরো কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমাদের এলসির মার্জিন তো আগেই উঠিয়ে দিয়েছিলাম। এখন আমরা আগামী রোববার একটি সার্কুলার ইস্যু করব যে, নিত্যপণ্যের ওপর যেন কোনো মার্জিন না দেওয়া হয়। আমরা উঠিয়ে দিয়েছিলাম বলতে ব্যাংকের ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। তবে, ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত করব, যাতে নিত্যপণ্যের ওপর আগামী রোজা পর্যন্ত এলসি মার্জিন চার্জ না করে। এটা একটা উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত, এটা আমরা করব।
তিনি বলেন, আরেকটা জিনিস হলো— আমাদের বড় বড় আমদানিকারক আছে, যারা অনেক পণ্য আমদানি করে। তাদের জন্য সিঙ্গেল বরোয়ার লিমিট (ঋণসীমা) একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা এড়ানো উচিত নয়, যা ব্যাংকের জন্য রিস্ক হয়ে যায়। এজন্য ব্যাংকের ক্যাপিটারি বাড়ানো উচিত, সেটাই আমরা চেষ্টা করব। সেটা ব্যাংকিং খাত সংস্কারের মাধ্যমে করা হবে। তবে, সাময়িকভাবে আগামী রোজাকে সামনে রেখে ব্যাংকের একক ঋণসীমা যেন কোনোভাবে সমস্যা না করে, সেজন্য আমরা সাময়িকভাবে দুই তিন মাসের জন্য উঠিয়ে দেবো। এটা সাময়িক সিদ্ধান্ত, শুধু নিত্যপণ্যের জন্য। অন্য কিছুর ক্ষেত্রের জন্য এটা প্রযোজ্য হবে না।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, ব্যাংকের একক ঋণসীমা আগামীতে কোনোভাবে ভায়োলেট হতে দেবো না। যাতে ব্যাংকগুলো কোনো একটি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির ওপর না বাড়ায়। যেটা সাময়িকভাবে আমি মডিফাই করছি। ছোলা, ভোজ্যতেল, চিনি—এসব পণ্য আমদানি ক্ষেত্রে এটা করা হবে৷
কোন কোন কোম্পানির জন্য আমদানিতে ঋণসীমা উঠিয়ে দেওয়া হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা এ ধরনের পণ্য (নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য) আমদানি করবে, তারাই শুধু; অন্য কেউ নয়। আমাদের ৫-৬ টি বড় কোম্পানি আছে, তারাই মূলত বাজারে পণ্য সরবরাহ ও নিয়ন্ত্রণ করে। চিনি, ভোজ্যতেল ও গম তারাই সরবরাহ করে। এজন্য আমরা ৫-৬টি কোম্পানিকে সব সময় এনগেজমেন্টে রাখব এবং বাজারের সঙ্গে তাদের দামের মনিটর করব। কারণ, যে কেউই আমদানি করতে পারবে। এতে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে যাতে ন্যাচারাল মনোপলি না করতে পারে।
গভর্নর বলেন, ধরেন, আমি আপনি পণ্য আনলে এক থেকে ১০ হাজার টন পণ্য আনব; কিন্তু তারা ৭০ থেকে ৮০ হাজার টন পণ্য আনবে। তারা যে দামে কিনবে, আপনারা জীবনে সে দামে কিনতে পারবেন না।
সাপ্লাই চেইন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চিনি, গম, ভোজ্যতেল এই পণ্যগুলো সাধারণত বড় বড় কোম্পানি আমদানি করে। আমরা প্রাইজ লেবেল কমাতে চাই না। এটা করলে ডিপ্রেশনে পড়ে যাবে, যারা উৎপাদন করে তারা। আমাদেরকে ধৈর্য ধরতে হবে। আমাদের ফরেন এক্সচেঞ্জের কোনো সমস্যা নেই। যে কেউ এলসি খুলতে পারবে। প্রাইজ লেবেল কমানো যাবে না। পৃথিবীর কোনো দেশেই সেটা করে না। তবে, আমরা মূল্যস্ফীতি কমিয়ে প্রাইজ কমিয়ে আনা চেষ্টা করব। এটা করতে দুই- তিন বছর লেগেই যায়।
হাসনাত/রফিক