বাজেট কাটছাঁটের প্রক্রিয়া শুরু
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সরকারের কৃচ্ছ্রতাসাধন নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সরকারি কর্মকর্তাদের ভ্রমণ ব্যয়ের ওপর বিদ্যমান বিধি-নিষেধ বলবৎ থাকছে। ইতোমধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলনের কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে একটি পরিপত্র জারি হয়েছে। পরিপত্রে বলা হয়েছে, শুধু জরুরি ও অপরিহার্য ক্ষেত্রে ভ্রমণ করা যাবে এবং সরকারি ভ্রমণের ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত অর্থের ৫০ ভাগ ব্যয় করা যাবে। এখানে অব্যয়িত অর্থ কোনোভাবেই অন্য কোনো খাতে ব্যয় করা যাবে না। এছাড়া সংশোধিত বাজেটে কোনো মন্ত্রণালয় তাদের জন্য অতিরিক্ত অর্থ দাবি করতে পারবে না।
অর্থ বিভাগ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার অবশ্যই মূল বাজেটে উল্লেখিত মোট ব্যয়সীমার (পরিচালন ও উন্নয়ন) মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে এবং কোনোভাবেই অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করা যাবে না। একই সঙ্গে উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে কোনো অর্থ অব্যয়িত থাকবে বলে অনুমিত হলে ওই অব্যয়িত অর্থ কোনোক্রমেই পরিচালন বাজেটে স্থানান্তর করা যাবে না।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলনে সব মন্ত্রণালয়/বিভাগকে এসব নির্দেশনা দিয়ে গত বৃহস্পতিবার একটি ‘বাজেট পরিপত্র’ জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। সব মন্ত্রণালয়/বিভাগকে নিজ নিজ সংশোধিত বাজেটের প্রাক্কলন নির্ধারিত ফরমে আগামী ২৮ নভেম্বরের মধ্যে অর্থ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে।
‘মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো পদ্ধতির আওতাভুক্ত মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহের ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন (পরিচালন ও উন্নয়ন) প্রণয়ন’ শীর্ষক বাজেট পরিপত্রে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নীতি ও উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রয়োজনে চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে উল্লেখিত মোট ব্যয়সীমার মধ্যে সংকুলান সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ বিভিন্ন অপারেশনাল ইউনিট বা আইটেম/ অর্থনৈতিক কোডের বরাদ্দ কমাতে/বাড়াতে পারবে। সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতিমালার আলোকে সব ধরনের মোটরযান ক্রয় বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তবে ১০ বছরের পুরনো টিওআই অ্যান্ডডিভুক্ত গাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের পূর্বানুমতি নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে।
বাজেট পরিপত্রে সংশোধিত রাজস্ব ও মূলধন প্রাপ্তি প্রাক্কলনের হিসাবের বিষয়ে বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে গত দুই (২০২২-২০২৩ ও ২০২৩-২০২৪) অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম চার-পাঁচ মাসের রাজস্ব আদায়ের ধারা বিবেচনায় নিতে হবে।
বাজেট পরিপত্রে সংশোধিত ‘বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি’ (এডিপি) প্রণয়নে ১৩ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- সংশোধিত এডিপি-তে প্রকল্প সংখ্যা সীমিত রাখতে হবে এবং মূল সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দহীন কোনো প্রকল্প রাখা যাবে না। সরকারের কৌশলগত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের আলোকে অগ্রাধিকার বাছাই করে অন্যান্য কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দিতে হবে। সংশোধিত এডিপির মূল অংশে বরাদ্দবিহীন কোনো প্রকল্প রাখা যাবে না। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের এডিপি-বহির্ভূত যেসব প্রকল্প ইতোমধ্যে অনুমোদিত হয়েছে এবং যেসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেসব প্রকল্প সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
চলতি অর্থবছরে বাস্তবায়ন কাজ শেষ হবে এমন সব প্রকল্পের বিপরীতে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রাখতে হবে। বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পের ক্ষেত্রে প্রকল্প সহায়তার অংশ সম্পূর্ণ ব্যয় করা যাবে, তবে এ ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয়ের অংশে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রাখতে হবে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, অপ্রত্যাশিত খাত থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দ হয়ে থাকলে সংশোধিত বাজেটে এর প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হবে। নির্দেশনায় বলা হয়, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি খাতের বরাদ্দের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। আবাসিক, অনাবাসিক এবং অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ খাতে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ থাকবে। বিদেশ ভ্রমণ ব্যয় স্থগিত থাকবে। ধীরগতি প্রকল্প থেকে বরাদ্দ কমিয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ, কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, বন্যা-উত্তর পুনর্বাসন, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতি সংক্রান্ত প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অন্যান্যের মধ্যে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প, বন্যা-উত্তর পুনর্বাসন সম্পর্কিত প্রকল্প এবং এলাকা/অঞ্চলভিত্তিক সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত প্রকল্পগুলোকে সংশোধিত এডিপিতে অন্তর্ভুক্তকরণে অগ্রাধিকার দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/হাসনাত/সাইফ