লুণ্ঠনকারীদের সম্পদ ফেরাতে না পারলে কীসের বিপ্লব: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে সম্পদ গড়ে তোলা হয়েছে। এগুলো কেন বাজেয়াপ্ত হলো না?’’
তিনি বলেন, ‘‘দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের যে পাহাড় গড়ে উঠেছে, সেখান থেকে জনগণের সম্পদ ফিরিয়ে আনতে না পারলে কীসের বিপ্লব?’’
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর পল্টনে অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইআরইফ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংলাপে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান এসব কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ইআরএফ ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান র্যাপিড এর যৌথ আয়োজনে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও বাজেটের উন্মুক্ততা নিয়ে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আর্থিক খাতসহ নানা বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ আছে, তবে কেন যেন উদ্বেগটা কাটছে না।’’ এর কারণ ব্যাখ্যা করে সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান বলেন, ‘‘সরকার যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে তার ফল আসছে না, মানুষ অত ধৈর্য রাখতে পারছে না। কিংবা আস্থার সংকট হচ্ছে।’’
এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারে থাকাকালীন ইআরএফের এক অনুষ্ঠানে এই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন ‘ডাল মে কুচ কালা হে’। এই উদ্বৃতি আবারও উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘আগামী রবিবার বলতে পারবো-কোন কোন ডাল পচা, আর কোন কোন ডাল ভালো ছিল। দেশের দুটি ফুসফুস ব্যাংক ও জ্বালানি খাত।’’
এই দুই খাতে বড় ধরনের অনিয়মের কথা উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ব্যাংক ও জ্বালানি খাতে বেশি লুটপাট হয়েছে। এসব তুলে ধরা হবে প্রতিবেদনে।’’
দুর্নীতি প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের যে ধারণা আছে-তার চেয়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল। এমন একটি অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কোনও উত্তরাধিকার সরকারের করার কিছু থাকে না। ব্যাংকিং খাতে সমস্যা বেশি ছিল। তা তাৎক্ষণিক দূর করার চেষ্টা চলছে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর যতটা উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে, তা যদি সরকার দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতে না পারে, তবে দেশের মানুষকে ততটাই হতাশ করা হবে। এজন্য বছর শেষে সরকারকে ৫ মাসের মূল্যায়ন উপস্থাপন করতে হবে-সরকারের দিক থেকে কী কী করা হয়েছে। এগুলো একত্রিত করে প্রকাশ করতে হবে। বাজেটের আগে চলমান পরিস্থিতিতে আগামী ছয় মাসের পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে। এর মধ্যে মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ, সরকারি ব্যয়, রাজস্ব আয় ও বৈদেশিক খাতের ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা তুলে ধরতে হবে। আগামী জানুয়ারিতে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই উন্নয়ন ফোরাম গঠন করতে পারলে আগামী বাজেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারবে।’’
দেবপ্রিয় বলেন, ‘‘আর্থিক স্বস্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে সংস্কার করা কঠিন হবে।’’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ সরকার এমনভাবে রেখে গেছে-তার খেসারত আমরা গুনছি। বেপরোয়া অনেক নীতি নিয়ে ছিল। ফলে মূল্যস্ফীতি হয়েছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘এখন ব্যাংক থেকে টাকা লুটপাট ও চুরি বন্ধ হয়েছে। এর সুফল পাওয়া যাবে। ব্যাংকের আমানত সংগ্রহ ও রফতানি বেড়েছে। বর্তমানে নেওয়া নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সারা দেখতে পাচ্ছি। তবে আর্থিক ব্যবস্থাপনা কঠিন হবে। কারণ আগামী ছয় মাস অত্যন্ত কঠিন সময় যাবে। এর মধ্যে রিজার্ভ বাড়াতে হবে। রিজার্ভ না বাড়লে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হবে না।’’
জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন র্যাপিড এর নির্বাহী পরিচালক আবু ইউসুফ বলেন, ‘‘সরকারের ব্যয় স্বচ্ছতার সঙ্গে হচ্ছে কিনা জনগণ খুবই কম জানতে পারছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘বাজেট ব্যয়ে স্বচ্ছতা ৩৭ শতাংশ। যা যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে পিছিয়ে আছে। কেবল পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। বাজেটে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ১১ শতাংশ, আর বাজেট বাস্তবায়ন তদারকি হচ্ছে ৩৭ শতাংশ।’’
ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
ঢাকা/হাসনাত/সাইফ