আমাদের কাজ চোর ধরা না, চোরের বর্ণনা দিয়েছি: শ্বেতপত্র কমিটি
সোমবার এনইসি সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্রের চূড়ান্ত খসড়া বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘আমরা যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছি, এখানে ব্যক্তির দোষ খোঁজা নয়; আমরা একটা প্রক্রিয়া তুলে ধরেছি। আমাদের কাজ চোর ধরা না, আমরা চোরের বর্ণনা দিয়েছি।’’
সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্রের চূড়ান্ত খসড়া বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
গতকাল রোববার (১ ডিসেম্বর) অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি তিন মাসের অনুসন্ধান শেষে তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গড়ে প্রতি বছর ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে প্রতিটি খাতে লুটপাট ও দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘এই শ্বেতপত্রটি গবেষণা পদ্ধতির বাইরে গিয়ে আমরা করেছি। এই দলিল করতে গিয়ে যেসব তথ্য-উপাত্ত প্রাসঙ্গিক হিসেবে পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। দেশি-বিদেশিদের সঙ্গে আলোচনাও করেছি। এর গ্রন্থস্বত্ব আমাদের কাছে নয়, সরকারের কাছে থাকবে।’’
তিনি বলেছেন, ‘‘দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা না গেলে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার করা যাবে না। পরবর্তী জাতীয় বাজেট আসার আগে দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারে বর্তমান সরকার কী কী উদ্যোগ নেবে, সেগুলো স্পষ্ট করতে হবে। আরও দায়বদ্ধতা আনতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, এ সরকার পাঁচ বছর দায়িত্বে থাকবে না। তবে, অন্তত আগামী দুই বছরের কর্মপরিকল্পনা সামনে থাকতে হবে।’’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল পুরো কাঠামো। এর উৎস ২০১৮ সালের নির্বাচন। পরবর্তী সময়ে যে ভোট হয়েছে, সেখানে স্বচ্ছতার জায়গা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকারের জবাবদিহিতা নষ্ট করা হয়েছে। জাতিসংঘ এখনো মনে করছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পথে কোনো বাধা নেই।’’
সংবাদ সম্মেলনে ড. এ কে এনামুল হক বলেন, ‘‘দেশের উন্নয়ন প্রকল্পে মোট ব্যয়ের ৪০ শতাংশ ব্যয় তছরুপ বা লুটপাট করা হয়েছে।’’
কমিটির সদস্য ড. আবু ইউসুফ বলেন, ‘‘রাজস্ব বোর্ড যে পরিমাণ টিন সার্টিফিকেট থাকার দাবি করে, সে পরিমাণ রাজস্ব আহরণ হয় না। এমনকি কেউ মারা গেলে সেই সার্টিফিকেট বা নম্বর কী হবে, সেটির কোনো কার্যকর প্রক্রিয়া নেই। রাজস্ব বোর্ড সেটা কমিটিকে দিতে পারেনি। কীভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা খাতকে কর ছাড় দেওয়া হয়েছে, তার কোনো সঠিক কাঠামো নেই।’’
কমিটির সদস্য ড. তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, ‘‘অভিবাসনের জন্য মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়েছে। অভিবাসনের মাধ্যমেও অর্থপাচার হয়েছে।’’
কমিটির আরেক সদস্য ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘‘যেসব খাতে সংস্কার দরকার, সেখানে শক্তিশালী উদ্যোগ নিতে হবে।’’
সদস্য ড. ইমরান মতিন বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ১০ শতাংশ মানুষের কাছে ৮৫ ভাগ সম্পদ আছে।’’
কমিটির সদস্য ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে যেসব টাকা লোপাট করা হয়েছে, পরবর্তী প্রজন্মের ঘাড়ে সেই বোঝা থেকে গেলো।’’
ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘‘সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে হবে। জবাবদিহিমূলক প্রশাসন নিশ্চিত করতে হবে।’’
ঢাকা/হাসান/রফিক