১ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানিতে দরপত্রের সময় কমছে
ফাইল ফটো
জরুরি ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ১ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি নিশ্চিত করতে দরপত্রের সময়সীমা কমানো হচ্ছে। দরপত্রের সময়সীমা পত্রিকায় দরপত্রের বিজ্ঞাপন ছাপা হওয়ার দিন থেকে ৪২ দিনের পরিবর্তে ১৫ দিন করা হচ্ছে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি ৮৩ (১) (ক) প্রয়োগ করে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে কেনার লক্ষ্যে ক্রয় প্রক্রিয়ার সময় কমানোর একটি প্রস্তাব অর্থনীতি বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার উদ্দেশ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় অভ্যন্তরীণ উৎসের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক উৎস থেকে চাল সংগ্রহ করে থাকে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। মজুত বৃদ্ধি করে সরকারি খাদ্য বিতরণ নিশ্চিত করতে আমদানির ক্ষেত্রে বহুবিধ উৎস থাকলে দ্রুত খাদ্যশস্য আমদানি করা সহজ হয় এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ মূল্যে খাদ্যশস্য ক্রয় করা সম্ভব হয়। তাই, খাদ্য মন্ত্রণালয় প্রতিবছর জি টু জি ভিত্তিতে এবং আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে চাল সংগ্রহ করছে।
চলতি অর্থবছরে ইতোমধ্যে দুটি আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে এবং জি টু জি ভিত্তিতে চাল আমদানির জন্য গত ১৩ নভেম্বর ও ২৪ নভেম্বর মিয়ানমারের সঙ্গে নেগোসিয়েশন সভা করা হয়েছে। সভায় আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের চেয়ে বেশি মূল্যের প্রস্তাবের কারণে চাল ক্রয় করা সম্ভব হয়নি। তবে, মিয়ানমারসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে নেগোসিয়েশন কার্যক্রম চলমান আছে।
সূত্র জানায়, খাদ্যের নিরাপত্তা মজুত গড়ে তোলা ও কৃষকদের উৎসাহ মূল্য দেওয়ার লক্ষ্যে গত ৬ নভেম্বর এফপিএমসি সভায় চলতি ২০২৪-২০২৫ আমন মৌসুমে ৩ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধান এবং ৬ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত ৭৪ মেট্রিক টন ধান এবং ৪ হাজার ৩১০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। আমন সংগ্রহ কার্যক্রম ২০২৫ সালের ১৫ মার্চ তারিখ পর্যন্ত চলবে।
সাম্প্রতিক বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে আমনের উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে মর্মে বিভিন্ন পর্যায় থেকে আভাষ পাওয়া যাচ্ছে। এতে আগামী আমন সংগ্রহ কার্যক্রমে শতভাগ সফল হওয়া অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়েছে।
চলতি অর্থবছরে বাজেটে খাদ্যশস্যের মোট চাহিদা ধরা হয়েছে ৩০ লাখ ৫৪ হাজার ১৬২ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ২৪ লাখ ১৪ হাজার ৫১৪ মেট্রিক টন চাল এবং ৬ লাখ ৩৯ হাজার ৬৪৮ মেট্রিক টন গম। এছাড়া, নিরাপত্তা মজুত হিসেবে ১০ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল ও ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন গমসহ মোট ১৩ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুত রাখতে হবে।
গত ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি সংরক্ষণারে ৭ লাখ ৪০ হাজার ৫০৫ মেট্রিক টন চাল ও ৪ লাখ ২৬ হাজার ২৬৫ মেট্রিক টন গমসহ মোট ১১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৪৪ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুত আছে।
রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে জি টু জি ভিত্তিতে ৩ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির জন্য পিপিআর, ২০০৮ এর বিধি ৭৬ (২)-এ উল্লিখিত মূল্যসীমার ঊর্ধ্বে ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে অনুসরণ এবং ২ লাখ মেট্রিক টন চাল আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র অনুসরণ করে আমদানির লক্ষ্যে পিপিআর, ২০০৮ এর বিধি ৮৩(১) (ক) অনুযায়ী দরপত্র দাখিলের সময়সীমা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের তারিখ থেকে ৪২ দিনের পরিবর্তে ১৫ দিন নির্ধারণের বিষয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি অনুমোদন দিয়েছে।
সরকারি খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখা, চালের বাজারমূল্য ভোক্তা সাধারণের জন্য সহনীয় ও স্থিতিশীল রাখা এবং সর্বোপরি জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে অতি জরুরি ভিত্তিতে আরও ১ লাখ মেট্রিক টন চাল আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি অনুসরণ করে ক্রয় করা প্রয়োজন।
পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮ এর সর্বশেষ সংশোধনী মোতাবেক বিধি ৮৩ এর উপ-বিধি (১) এর দফা (ক) এ বিধান রয়েছে: (ক) দরপত্র দাখিলের সময়সীমা এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে, যাতে সম্ভাব্য সব দরপত্রদাতার কাছে দরপত্র দাখিলের আহ্বান পৌঁছায় এবং তাহারা দরপত্র প্রস্তুত ও দাখিলের জন্য পর্যাপ্ত সময় পায়। পুনরায় দরপত্র আহ্বানের ক্ষেত্রে তফসিল-২ এ বর্ণিত ন্যূনতম সময় দিতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে, সরকার আইন এর ধারা ৬৮-এ বর্ণিত রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে বা বিপর্যয়কর কোনো ঘটনা মোকাবিলার জন্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে জনস্বার্থে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশক্রমে ক্রয় প্রক্রিয়ার সময়সীমা হ্রাস করতে পারবে।
রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে যথাসময়ে ঝুঁকিহীনভাবে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের স্বার্থে খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য দ্রুততম সময়ে সংগ্রহের জন্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি ৮৩ (১) (ক) অনুযায়ী ক্রয় প্রক্রিয়ার সময়সীমা হ্রাস করা আবশ্যক বিধায় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির নীতিগত অনুমোদনের প্রয়োজন।
এ অবস্থায় চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য আন্তর্জাতিক উৎস থেকে চাল সংগ্রহের প্রস্তাব অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির কাছে অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি অনুসরণ করে ১ লাখ মেট্রিক টন চাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি ৮৩ (১) (ক) অনুযায়ী দরপত্র দাখিলের সময়সীমা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের তারিখ থেকে ৪২ দিনের পরিবর্তে ১৫ দিন নির্ধারণ করার প্রস্তাবাটি অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনীতি বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় অনুমোদনের জন্য কমিটির পরবর্তী সভায় উত্থাপন করা হবে।
ঢাকা/হাসনাত/রফিক