মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামো হালনাগাদে নির্দেশনা
মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামো হালনাগাদ করার তাগিদ, আগামী ২০২৫ সালের ২৩ জানুয়ারি মধ্যে তা সম্পন্ন করতে হবে। সরকারের কৌশলগত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো অর্জন নিশ্চিত করতে এবং সরকারি ব্যয়ের দক্ষতা ও কার্যকারিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামো পদ্ধতিতে বাজেট প্রণয়ন করছে সরকার।
সরকারের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজেট কাঠামো অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগ এবং পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট সেক্টর ডিভিশনে এক প্রস্থ করে পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামো সংশোধন ও হালনাগাদ বিষয়ে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে। সেখানে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে সই করেছেন অতিরিক্ত সচিব বিলকিস জাহান রিমি। পরিপত্রে উল্লেখিত ছকে প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, সরকারের কৌশলগত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ অর্জন নিশ্চিতকরণ এবং সরকারি ব্যয়ের দক্ষতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামো পদ্ধতিতে বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া তিনটি প্রধান পর্যায়ে বিভক্ত; কৌশলগত পর্যায়, প্রাক্কলন পর্যায় এবং বাজেট অনুমোদন পর্যায়।
কৌশলগত পর্যায়ের প্রথম ধাপে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যমান মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামো হালনাগাদ করতে হয়। এ পরিপত্রে বিবৃত প্রক্রিয়া/পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান তাদের বাজেট কাঠামো সংশোধন/হালনাগাদ করে অর্থ বিভাগ ও পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করবে। পরবর্তীতে অর্থ বিভাগ ও পরিকল্পনা কমিশন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা করে বাজেট কাঠামো চূড়ান্ত করবে।
এতে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বাজেট কাঠামো সংশোধন বা হালনাগাদকরণের উদ্দেশ্য মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহের বাজেট কাঠামো সংশোধন/হালনাগাদ করার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে সরকারের মৌলিক নীতি নির্ধারণী দলিলসমূহে প্রতিফলিত কৌশলগত নীতি ও অগ্রাধিকারের সাথে বাজেট বরাদ্দের যোগসূত্র স্থাপন করা; মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অধীনস্থ দপ্তর/সংস্থাসমূহের কর্মকৃতির সাথে বাজেট বরাদ্দের যোগসূত্র অধিকতর শক্তিশালী করা এবং মধ্যমেয়াদে প্রাপ্য সম্পদের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি বাস্তবসম্মত ব্যয় পরিকল্পনা প্রস্তুত করা।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, রাজস্ব ও প্রাপ্তির প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা এবং প্রাথমিক সম্ভাব্য ব্যয়সীমা রাজস্ব ও প্রাপ্তির প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক রাজস্ব আহরণের মধ্যমেয়াদী লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা। প্রাথমিক সম্ভাব্য ব্যয়সীমা নির্ধারণের উদ্দেশ্য হচ্ছে মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহ মধ্যমেয়াদে কী পরিমাণ সম্পদ পেতে পারে সে সম্পর্কে আগাম ধারণা প্রদান করা এবং প্রদত্ত ব্যয়সীমার মধ্যে পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় সম্বলিত একটি সমন্বিত বাজেট কাঠামো প্রস্তুত করা।
মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহের রাজস্ব ও প্রাপ্তির প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা এবং প্রাথমিক সম্ভাব্য ব্যয়সীমা এ প্রদর্শন করা হল। এছাড়াও মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহের সম্ভাব্য বৈদেশিক ঋণ/অনুদানের প্রাক্কলন/প্রক্ষেপণ। যা প্রাথমিক সম্ভাব্য ব্যয়সীমার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক ব্যয় প্রাক্কলন ও প্রক্ষেপণ প্রণয়নকালে উক্ত বৈদেশিক ঋণ/অনুদানের পরিমাণ হ্রাস পেলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সম্ভাব্য ব্যয়সীমা সে পরিমাণ কমে যাবে। তবে বৈদেশিক ঋণ/অনুদান বৃদ্ধি পেলে সম্ভাব্য ব্যয়সীমা সে পরিমাণ বেড়ে যাবে।
বাজেট কাঠামোর প্রথম ভাগ সংশোধন ও হালনাগাদকরণ অংশে বলা হয়েছে মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বাজেট ব্যবস্থাপনা শাখা/অধিশাখা/অনুবিভাগের কর্মকর্তাগণ খসড়া বাজেট কাঠামো সংশোধন ও হালনাগাদ করবেন। বাজেট ব্যবস্থাপনা অধিশাখা/অনুবিভাগের প্রধান মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামো সংশোধন ও হালনাগাদ কাজের সার্বিক সমন্বয় ও তদারকি করবেন।
রাজস্ব ও প্রাপ্তির প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা এবং প্রাথমিক সম্ভাব্য ব্যয়সীমা নির্ধারণ মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বাজেট কাঠামোর প্রথম ভাগ-এর প্রয়োজনীয় সংশোধন ও হালনাগাদ করা ছাড়াও মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সচিবালয় অংশ এবং নিয়ন্ত্রণাধীন অধিদপ্তর, অধস্তন দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও সরকারি সহায়তা প্রাপ্ত/বিনিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠানসমূহের রাজস্ব ও প্রাপ্তির প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ও প্রাথমিক সম্ভাব্য ব্যয়সীমা ফরম ১ ও ২ পূরণপূর্বক নির্ধারণ করতে হবে। অধিদপ্তর, অধস্তন দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও সরকারি অনুদান প্রাপ্ত/বিনিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠানসমূহের রাজস্ব ও প্রাপ্তির প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা এবং প্রাথমিক সম্ভাব্য ব্যয়সীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংযোজনী-৩ এ বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক ব্যয় প্রাক্কলন ও প্রক্ষেপণ প্রণয়নকালে সমগ্র সম্পদসীমাকে পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ে বিভক্ত করতে হবে। অতঃপর অধীনস্থ অধিদপ্তর/সংস্থাভিত্তিক প্রাথমিক ব্যয়সীমা (পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় পৃথকভাবে প্রদর্শন করে) নির্ধারণ করতে হবে। একইভাবে, আয়ের লক্ষ্যমাত্রাও অধীনস্থ অধিদপ্তর/সংস্থাভিত্তিক নির্ধারণ করতে হবে।
বাজেট ওয়ার্কিং গ্রুপ কর্তৃক বাজেট কাঠামোর প্রথম ভাগ পরীক্ষাকরণ বাজেট ওয়ার্কিংগ্রুপ রাজস্ব ও প্রাপ্তির প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা এবং প্রাথমিক সম্ভাব্য ব্যয়সীমাসহ খসড়া বাজেট কাঠামোর প্রথম ভাগ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করবে এবং বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির জন্য সুপারিশমালা প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে পরিপত্রে।
বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটি কর্তৃক বাজেট কাঠামোর প্রথম ভাগ পরীক্ষা ও অনুমোদন বাজেট ওয়াকিং গ্রুপের বিশ্লেষণ/পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশসহ বাজেট কাঠামোর প্রথম ভাগের খসড়া বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় পেশ করতে হবে। বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটি বাজেট কাঠামোর প্রথম ভাগে অন্তর্ভুক্ত অংশ এবং ফরমসমূহ, বিশেষ করে কৌশলগত উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম, প্রধান কর্মকৃতি নির্দেশক এবং রাজস্ব ও প্রাপ্তির প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ও প্রাথমিক সম্ভাব্য ব্যয়সীমার খসড়া প্রস্তাব বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা করবে এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন/পরিমার্জনের পর অনুমোদন করবে। এভাবে মোট ১২টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পরিপত্রের দিক-নির্দেশনা ও সময়সীমা অনুসরণ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এ পরিপত্রের সকল দিকনির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণপূর্বক বাজেট কাঠামো, রাজস্ব ও প্রাপ্তি এবং ব্যয় প্রাক্কলন ও প্রক্ষেপণসমূহ হালনাগাদ/প্রণয়ন করে ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫ এর মধ্যে অর্থ বিভাগ ও পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ নিশ্চিত করার জন্য (মন্ত্রণালয়/বিভাগের সিনিয়র সচিব/সচিব ও প্রধান হিসাবদানকারী অফিসারগণকে) বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ঢাকা/হাসনাত/এনএইচ