চলতি বাজেটে প্রথম প্রান্তিকেই ঋণের সুদ পরিশোধে ১২ শতাংশের বেশি ব্যয়
কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ৪২ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। যা অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে পরিচালন ব্যয়ের অর্ধেকেরও বেশি। এ সময়ে পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় ছিল ৮২ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাজেট বাস্তবায়নের হার আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ শতাংশ বেড়েছে। চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বাজেট বাস্তবায়নের হার ১২ শতাংশ। টাকার অঙ্কে মোট ব্যয় হয়েছে ৯৬ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার হচ্ছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এর আগে গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের একই সময়ে বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল প্রায় ১১ শতাংশ। ওই অর্থবছরে ব্যয় হয়েছিল ৭৯ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মোট পরিচালন ব্যয় বা অনুন্নয়ন ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৮২ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি ব্যয় হয়েছে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে। এর পরেই প্রশাসনিক খাতে ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ ও সামাজিক খাতে ২০ দশমিক ১ শতাংশ ব্যয় হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আলোচ্য সময়ে ঋণের সুদ পরিশোধে ৪২ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এটি তিন মাসের পরিচালন ব্যয়ের ৫১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং বাজেটে এ খাতে মোট বরাদ্দের ৩৭ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে দেশীয় ঋণের সুদ পরিশোধে ৩৯ হাজার ২৫২ কোটি টাকা ও বিদেশী ঋণের সুদ পরিশোধে ৩ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
অন্যখাতগুলোর মধ্যে শিক্ষা খাতে ১০ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা (বাজেটে এ খাতে মোট বরাদ্দের ১৮ শতাংশ); পাবলিক অর্ডার ও সেফটি খাতে ৫ হাজার ৩৪ কোটি টাকা (বাজেটে এ খাতে মোট বরাদ্দের ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ), প্রতিরক্ষা খাতে ৫ হাজার ৩৪ কোটি টাকা (বাজেটে এ খাতে মোট বরাদ্দের ১২ দশমিক ৪ শতাংশ) এবং স্থানীয় সরকার খাতে ১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা (বাজেটে এ খাতে মোট বরাদ্দের ১৫ দশমিক ১ শতাংশ) ব্যয় হয়েছে।
প্রতিবেদনের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার ৪ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা ১০ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। বাজেটে মূল এডিপি’তে মোট বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরের (২০২৩-২০২৪) একই সময়ে এডিপি ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ২৯০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সার্বিক রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ৩২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৭৬ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা (বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ) এবং কর-বহির্ভুত রাজস্ব (এনটিআর) আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ২৩ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা (বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ৫২ দশমিক ১ শতাংশ)। এনবিআর আওতাধীন রাজস্বের মধ্যে আয়কর খাতে ২৩ হাজার ২৬১ কোটি টাকা, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) খাতে ৩০ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা ও সম্পূরক শুল্ক খাতে ৯ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।
জানা গেছে, রাজস্ব আদায়ে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। তবে বাজেটে ঘোষিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে প্রবৃদ্ধির হার ১৮ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। চলতি অর্থবছরের এনবিআর আওতাধীন মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এটি গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৩ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং আদায়কৃত রাজস্বের তুলনায় ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংক-বহির্ভূত সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা নিট ঋণ নেয়া হয়েছে এবং ব্যাংক-বহির্ভূত অন্যান্য খাতে ৯ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে সার্বিকভাবে ব্যাংক-বহির্ভূত খাতে তিন মাসে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি টাকা। অন্য দিকে আলোচ্য সময়ে ব্যাংক খাত থেকে সরকার ২৫ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ নিয়েছে এবং এ খাতের ২৬ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা স্বল্প মেয়াদি ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে।
ঢাকা/টিপু