ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

আমানতকারীদের আতঙ্ক, উৎকণ্ঠায় পেরিয়ে গেল বছর

নাজমুল ইসলাম ফারুক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১০, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১১:১৪, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
আমানতকারীদের আতঙ্ক, উৎকণ্ঠায় পেরিয়ে গেল বছর

নিরাপদ অর্থ সংরক্ষণ করতেই ব্যাংকমুখী হয় আমানতকারীরা। আমানতকারীদের অর্থ ব্যাংক বিনিয়োগের মাধ্যমে মুনাফা করে তার অংশ দেয় আমানতকারীদের। আর ব্যাংকের অর্থ যখন লুটপাট হয় তখন তারল্য সংকটে পড়ে ব্যাংক। তখন আমানতকারীদের রক্ষিত অর্থ চাহিদা অনুযায়ী দিতে পারে না ব্যাংক। ব্যাংকের ওপর আতঙ্ক, উৎকন্ঠা ও আস্থা সংকট দেখা দেখ আমানতকারীদের মধ্যে। 

ব্যাংক খাতে নানা অনিয়ম, খেলাপি ঋণ, নামে বেনামে ঋণের মাধ্যমে অর্থ লুটপাটের কারণে দেশের ব্যাংকগুলোতে ২০২৪ সালে দেখা দেয় তারল্য সংকট। চাহিদা অনুযায়ী আমানতকারীদের অর্থ দিতে ব্যর্থ হয় তারল্য সংকটে পড়া ব্যাংকগুলো। আর এমন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের নানা পদক্ষেপে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ, সহায়তায় ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট কাটতে শুরু করেছে। নতুন বছর ব্যাংক খাতে আঁধার কেটে আলো আসবে এমনই প্রত্যাশা আমানতকারী ও ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের।

আরো পড়ুন:

ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে কিছু ব্যবসায়ি নামে বেনামে শেয়ার ধারণ করে বেশ কয়েকটি ভালো ব্যাংকের মালিকানা দখল করে নেয়। নিজেদের দখলে নিয়েই শেষ হয়নি, সেসব ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ঋণের নামে অর্থ লুটপাট করে নেয় কয়েকটি ব্যবসায়ি গ্রুপ। এতো দিন বিষয়গুলো চাপা থাকলেও ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ধীরে ধীরে সেগুলো সামনে আসে। কি পরিমাণ অর্থ লুটপাট করা হয়েছে সে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ব্যাংক খাতে অর্থ লুটপাটসহ নানা অনিয়ম খতিয়ে প্রকৃত চিত্র বের করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরমধ্যে ব্যাংক খাতের সংস্কারে গঠন করা হয়েছে টা্স্কফোর্স। 

এছাড়া ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখতে ও আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে ও তাদের আস্থা ফেরাতে শুরুতেই ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্যারান্টার হয়ে তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংক থেকে অর্থের যোগান দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় টাকা ছাপিয়েও সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হয়েছে। ফলে তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে সংকট কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছে। নতুন বছর ব্যাংকগুলো সংকট কাটিয়ে স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে যেতে পারবে বলে আশা করছেন তারা।

বাংলাদেশের অর্থনৈতির শ্বেতপত্র প্রণয়নে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে ব্যাংক খাতে। রাজনৈতিক প্রভাবে ব্যাংক ঋণ এ খাতের সংকট তীব্র করেছে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতের সমস্যাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে স্বীকৃত খেলাপি ঋণ ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। পুনঃতপশিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ ২ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। ঋণ অবলোপন হয়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকার।

ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন :

২০২৪ সালের ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটের কারণে আমানতকারীদের চাহিদা অনুযায়ী আমানত ফিরিয়ে দিতে পারছিল না। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর ড. আহসান এইচ মনসুরকে নতুন গভর্নরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও ব্যাংকগুলোতে সুশাসন প্রতিষ্ঠান করতে দুর্বল ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করে দেয়। যাতে ব্যাংকগুলো সংকট কাটিয়ে উঠে সুশাসন নিশ্চিত করতে পারে। একই সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টার হয়ে তারল্য সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তাতে দিন দিন তারল্য সংকট কটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে ব্যাংকগুলো। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকগুলো তাদের তারল্য সংকট পুরোপুরি কাটিয়ে উঠে নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে পারবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

যে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেগুলো হলো – ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন, ন্যাশনাল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক। এই ৮টি ব্যাংক এস আলমের দখলে ছিল। এর বাইরে ইউসিবি, এক্সিম ব্যাংক এবং আইএফআইসি ব্যাংকের পর্যদ পুনর্গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা:

প্রথমে সবল ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংককে গ্যারান্টার রেখে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়। তাতে সংকট না কাটায় শেষ পর্যন্ত টাকা ছাপিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হয়েছে। সংকটে থাকা ন্যাশনাল, এক্সিম, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংককে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আমরা টাকা না ছাপানোর যে সিদ্ধান্ত আগে নিয়েছিলাম সেখান থেকে ফিরে এসেছি। এসব ব্যাংকের আমানতকারীরা যেন তাদের টাকা ফেরত পান, সেই চিন্তা থেকেই আমরা স্বল্প সময়ের জন্য টাকা ছাপিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে দিয়েছি। তবে এ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে বাজার থেকে তুলে নেওয়া হবে, যাতে মূল্যস্ফীতি না বাড়ে।”

ব্যাংক খাতে টাস্কফোর্স:

আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে ব্যাংকিং খাতের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি, মন্দ সম্পদ, প্রধান ঝুঁকিগুলো নিরূপণ করবে এই টাস্কফোর্স। এ ছাড়া দুর্বল ব্যাংকগুলোর আর্থিক সূচক পর্যালোচনা, ঋণের প্রকৃত অবস্থা নিরূপণ, নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি নিরূপণ, তারল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা, নিট মূলধন নির্ণয়, সম্পদের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মন্দ সম্পদকে পৃথকীকরণ–সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবে ব্যাংক খাতের টাস্কফোর্স।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, টাস্কফোর্স মাধ্যমে সংকটকালীন প্রতিঘাত সক্ষমতা অর্জনে ব্যাংকের সুশাসন ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার প্রক্রিয়ার আওতায় নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার উন্নয়ন, ব্যাংকের সিদ্ধান্ত গ্রহণে রাজনৈতিক ও করপোরেট প্রভাব সীমিত করা, ব্যাংকের মালিকানা সংস্কার ইত্যাদি সংক্রান্ত প্রস্তাব পেশ করবে। সমস্যায় থাকা ব্যাংকের অর্থ উদ্ধার এবং বিধিকাঠামো ও সংশ্লিষ্ট নীতিমালা প্রস্তুত করা, দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য বিভিন্ন নীতিগত ব্যবস্থা বা পদক্ষেপও গ্রহণ করবে এই টাস্কফোর্স। দাতাসংস্থাগুলো ব্যাংক খাত সংস্কারে ঋণ দেবে।

এদিকে, ব্যাংকিং খাত সংস্কার টাস্কফোর্স থেকে ‘দ্য স্পেশাল রেগুলেশনস অব বাংলাদেশ ব্যাংক–২০২৪’ নামে একটি নীতিমালা জারি হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকের সম্পদ মূল্যায়নে বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ দিতে পারবে। দুর্বল ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ মূল্যায়ন করে প্রকৃত মূলধনের প্রয়োজনীয়তা বের করা এবং দুর্বল হওয়া ব্যাংকের অবস্থার উন্নয়ন করাই এই পরামর্শক নিয়োগের মূল উদ্দেশ্য।

রেমিট্যান্স প্রবাহ:

আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে রেমিট্যান্সে বড় ধরনের ভাটা পড়েছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেকটাই বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি অর্থবছর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৫ মাসে দেশে এক হাজার ১১৩ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। জুলাইয়ে রেমিট্যান্স ২০০ কোটি টাকার নিচে আসলেও আগস্ট থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৮৭৯ কোটি মার্কিন ডলার। আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু তাই নয়, ডিসেম্বর মাসের ২১ দিনে দেশে বৈধ পথে রেমিট্যান্স এসেছে ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি।

ডলারের বিনিময় হার:

২০২৪ সালের শুরুতে ডলারের বিনিময় হারে বড় ধরনের অস্থিরতা ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন গভর্নরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। নতুন গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার পর ডলারের বিনিময় বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়, তাতে ডলার বিনিময় স্থিতিশীলতা দেখা যায়। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, করোনা মহামারীর পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে ডলারের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের অধিকাংশ সময় দেশের ডলার বিনিময় হার (দাম নির্ধারণ) ঘন ঘন নির্ধারণ করতে হয়েছে। সংকট কাটাতে ডলার বিক্রির মাধ্যমেও যোগান দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবুও ২০২৩ সালে ডলারের দাম বেড়ে আন্ত:ব্যাংক ১১১ টাকা এবং খোলাবাজারে ১২৫-১২৬ টাকা বেচাকেনা হয়ে রেকর্ড গড়েছিল। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে ডলারের দর বেশ কয়েকবার পরিবর্তন করা হয়, সর্বশেষ জুলাইয়ে ডলারের বিনিময় হার ছিল ১১৮ টাকা। ডলারের যোগান দিতে গিয়ে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমেছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ডলার বিনিময় হার বার বার পরিবর্তন হয়নি, অস্থিরতা অনেকটা কেটেছে। যদিও সম্প্রতি রেমিট্যান্সের ডলার রেট কিছু ব্যাংক অতিরিক্ত দরে ক্রয় করেছে। এছাড়া পুরানো আমদানি দায় পরিশোধ করতে গিয়ে কিছু ব্যাংক অতিরিক্ত দরে ডলার কিনছে। সেসব ব্যাংকগুলোর বিষয়ে খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনিটরিং টিম।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ:

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পূর্বে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে দর নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তখন রিজার্ভ তলানিতে নেমে যায়। অতর্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি কমেছে। ২২ ডিসেম্বর দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আইএমএফের বিপিএম হিসাব অনুযায়ী তা ১৯ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার।  

তিন শতাধিক হিসাব জব্দ :

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের তিন শতাধিক ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। সন্দেহজনক লেনদেন ও বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এসব হিসাব জব্দ করে। তাদের হিসাবে ১৫ হাজার কোটি টাকা পাওয়া গেছে। জব্দ করা হিসাবে লেনদেনের তথ্য গড়মিল পাওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে তদন্ত রিপোর্ট সিআইডি এবং দুদকে পাঠানো হয়েছে।

খেলাপি ঋণ :

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে তা খেলাপিতে পরিণত করেছে নামধারী ব্যবসায়িরা ও কিছু ব্যবসায়ি গ্রুপ। বার বার নিয়ম পরিবর্তন করে খেলাপি ঋণ কাগজে-কলমে কম দেখানো হতো। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রকৃত খেলাপি ঋণের চিত্র বেরিয়ে আসছে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। এতে সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। যা ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮২১ কোটি টাকা।

বেশ কিছু আমানতকারীর সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, নিরাপদ ভেবেই একজন গ্রাহক ব্যাংকে নিজের সঞ্চয়ের অর্থ আমানত হিসেবে রাখছে। আর এই অর্থ যদি গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী অসুস্থ অবস্থায় বা নানা বিপদের সময় না পায় তাহলে ব্যাংক বিমুখ হয়ে পড়বে সাধারণ মানুষ। তাই ব্যাংকের প্রতি যাতে আস্থা রাখা যায়, ব্যাংক থেকে কোনো উপায়ে যেন গ্রাহকের অর্থ বেহাত না হয় সেদিকে নজর দেওয়ারও দাবী জানান তারা।

আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক মতিঝিল শাখায় আলাপকালে ব্যাংকটির গ্রাহক আজমল হোসেন বলেন, “৫ আগস্টের পর বেশ কয়েকবার নিজের আমানতের অর্থ নিতে এসেছিলাম কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী অর্থ পাইনি। এখন কিছুটা চাহিদা অনুযায়ী টাকা উত্তোলন করতে পারছি।”

ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক জাহিদ ইকবাল বলেন, “সরকার পরিবর্তনের পর ইসলামী ব্যাংকের হিসাব থেকে বার বার টাকা তুলতে ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু বর্তমানে টাকা তুলতে পারছি। আমাদের কথা হলো- আমরা ব্যাংকে আমানত হিসেবে টাকা রাখছি। ব্যাংক এই টাকা দিয়ে ব্যবসা করছে। একই সঙ্গে বছর শেষে আমাদের হিসাবে মুনাফার অর্থ যোগ হয়। কিন্তু যখন চাহিদা অনুযায়ী টাকা না পাই তখন খুব কষ্ট লাগে। তাই আমানতকারীরা যাতে জমানো অর্থ চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংক থেকে উত্তোলন করতে কোনো বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে নজর দেওয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানাই।  

অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, দলীয় সরকারের সময় নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে ব্যাংক খাতকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। তারল্য সংকটে পড়ে ব্যাংকগুলো আমানতকারীদের অর্থ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোর প্রতি আমানতকারীদের আস্থা কমেছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গভর্ণর নিয়োগ দিয়েছেন। এরপর থেকে ব্যাংক খাতের সংস্কার শুরু হয়েছে। ব্যাংক খাতের সংস্কারে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এ সংস্কার অব্যাহত থাকলে ও নামে-বেনামে ঋণের নামে লুটপাট ও অর্থ পাচার বন্ধ করে সুশাসন নিশ্চিত করতে পারলে আমানতকারীরা আবারও ব্যাংকের প্রতি আস্থা ফিরে পাবে। সুরক্ষা পাবে আমানত। উন্নতি হবে ব্যাংক খাতের তথা দেশের।

ঢাকা/টিপু 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়