বছরজুড়ে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে বিদেশি বিও
দেশের পুঁজিবাজারে গত কয়েক বছর ধরে ধরাবাহিক মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট ও দেশের রাজনৈতিক অস্থিরিতার কারণে এ মন্দা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারছে না পুঁজিবাজার। এ অবস্থায় চলতি বছরে বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব খোলার পরিমাণ গত বছরের তুলনায় ৪.৯৪ শতাংশ কমেছে। তবে বছরজুড়ে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে কমেছে।
তথ্য মতে, ২০২০ সালে বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংক্রামণের প্রভাবে পতনমুখী প্রবণতায় দেখা দেয়। এরপর পুঁজিবাজার কিছুটা স্বাভবিক অবস্থায় আসতে শুরু করলেও ২০২১ সালের অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পুঁজিবাজার ফের পতনমুখী প্রবণতায় দেখা দেয়। এরপর ২০২২ সালের শুরু থেকে বৈশ্বিক মন্দাসহ বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে মন্দা আরো মাথাচাড়া দেয়। আর এরপর থেকে চলতি বছরের শেষ সময় পর্যন্ত ধরাবাহিক মন্দাভাব থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি দেশের পুঁজিবাজার।
মন্দা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে কমিশন (বিএসইসি) নানান উদ্যোগ নিলেও তা কাজে আসেনি। ফলে পুঁজিবাজারের পতনমুখী প্রবণতা ও বিভিন্ন কারণে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিও হিসাব সংখ্যা ৫.২৭ শতাংশ কমেছে। একইসঙ্গে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ৫.০২ শতাংশ। নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব খোলার পরিমাণ কমেছে ৬.০৩ শতাংশ। এছাড়া, স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব সংখ্যা কমেছে ৪.৯৪ শতাংশ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব সংখ্যা কমেছে ১৫.৪৪ শতাংশ।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈশ্বিক সংকট ও দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব সংখ্যা।
পুঁজিবাজারের তথ্য ভাণ্ডার হিসবে পরিচিত সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৫৬ হাজার ৪৪০টি। আর ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৬৩ হাজার ৮৮০টিতে। সে হিসাবে বছরের ব্যবধানে বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা কমেছে ৯২ হাজার ৫৬০টি বা ৫.২৭ শতাংশ।
এর আগে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৩২৯টি। আর ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছিল ১৭ লাখ ৫৪ হাজার ১২৩টি।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি একক বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৪২ হাজার ৯৫৮টি। আর ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত একক বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৯৮ হাজার ৩৬৬টি। সেই হিসাবে একক বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা কমেছে ৪৪ হাজার ৫৯২টি বা ৩.৫৯ শতাংশ।
এর আগে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি একক বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৮৩ হাজার ৭২৬টি। আর ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত একক বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৪১ হাজার ৪০৬টি।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি যৌথ বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ১৩ হাজার ৪৮২টি। আর ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যৌথ বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫১৪টি। সে হিসাবে যৌথ বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা কমেছে ৪৭ হাজার ৯৬৮টি বা ৯.৩৪ শতাংশ।
এর আগে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি যৌথ বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৬১ হাজার ৬০৩টি। আর ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যৌথ বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ১২ হাজার ৭১৭টি। সেই হিসাবে যৌথ বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবে সংখ্যা কমেছে ৪৮ হাজার ৮৮৬টি বা ৮.৭০ শতাংশ।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি পুরুষ বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ২৬ হাজার ৯৫৩টি। আর ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরুষ বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৬০ হাজার ২৮৮টি। সে হিসাবে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা কমেছে ৬৬ হাজার ৬৬৫টি বা ৫.০২ শতাংশ।
এর আগে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি পুরুষ বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবে সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৯০ হাজার ২২২টি। আর ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরুষ বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ২৫ হাজার ২৭৪টি। সে হিসেবে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা কমেছে ৬৪ হাজার ৯৪৮টি বা ৪.৬৭ শতাংশ।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি নারী বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২৯ হাজার ৪৮৭টি। আর ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত নারী বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩ হাজার ৫৯২টি। সে হিসাবে নারী বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবে সংখ্যা কমেছে ২৫ হাজার ৮৯৫টি বা ৬.০৩ শতাংশ।
এর আগে ২০২৩ সালের জানুয়ারি নারী বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৫৫ হাজার ১০৭টি। আর ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নারী বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৬২৬টি। সে হিসাবে নারী বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা কমেছে ২৬ হাজার ২৫৮টি বা ৫.৭৭ শতাংশ।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ১ হাজার ১৫৫টি। আর ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ১৭ হাজার ১৩৬টি। সে হিসাবে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা কমেছে ৮৪ হাজার ১৯টি বা ৪.৯৪ শতাংশ।
এর আগে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৮২ হাজার ৯৫টি। আর ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৮০ হাজার ২০৬টি। সেই হিসাবে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবে সংখ্যা কমেছে ৮৩ হাজার ৩৯৮টি বা ৪.৬৮ শতাংশ।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা ছিল ৫৫ হাজার ২৮৫টি। আর ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৭৪৪টি। সে হিসাবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা কমেছে ৮ হাজার ৫৪১টি বা ১৫.৪৪ শতাংশ।
এর আগে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা ছিল ৬৩ হাজার ২৩৪টি। আর ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ৯৮৯টি। সে হিসাবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব কমেছে ৭ হাজার ৮০৮টি বা ১২.৩৫ শতাংশ।
তবে বছরজুড়ে নিষ্ক্রিয় বিও হিসাবের পরিমাণ কমে এসেছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি নিষ্ক্রিয় বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৭২ হাজার ৩৬১টি। আর ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিষ্ক্রিয় বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৬ হাজার ৬৮৯টি। সে হিসাবে নিষ্ক্রিয় বিও হিসাবের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬৭২টি বা ৭.৮৪ শতাংশ।
এর আগে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি নিষ্ক্রিয় বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৭৬ হাজার ২২৪টি। আর ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিষ্ক্রিয় বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭১ হাজার ২১৬টি।
ঢাকা/এনটি/ইভা