আগামী এডিপি হতে পারে ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার
আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জন্য বাস্তবায়নযোগ্য ও তুলনামূলক ‘ছোট’ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। প্রাথমিকভাবে এডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের মূল এডিপির চেয়ে মাত্র ৫ হাজার কোটি টাকা বা ২ শতাংশ বেশি। এর আগে কখনো এক বছরের ব্যবধানে নতুন এডিপির আকার এতটা কম হয়নি। অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
চলতি অর্থবছরের জন্য যে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি হাতে নেওয়া হয়েছিল, বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে দেখা যাচ্ছে, এর সিংহভাগ অর্থই খরচ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে মোটা অঙ্কের কাটছাঁট করা হচ্ছে। কাটছাঁটের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। ফলে, মূল এডিপির তুলনায় সংশোধিত এডিপির আকার কমেছে ১৮ শতাংশ, যা একটি রেকর্ড। এর আগে খুব কম সময়ে এডিপির পরিমাণ এত কমানো হয়নি।
পরিকল্পনা কমিশনের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে, চলতি অর্থবছরে প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) এডিপি বাস্তবায়নের হার মাত্র ৬ শতাংশ। এই সময়ে যেখানে ব্যয় হওয়ার কথা ছিল ৮৮ হাজার ৩৩ কোটি টাকা, সেখানে ব্যয় করা সম্ভব হয়েছে মাত্র ২৩ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা। তাই, সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য অবাস্তবায়নযোগ্য উচ্চাভিলাষী এডিপি প্রণয়ন না করতে নির্দেশনা দিয়েছে।
২০১৫-২০১৬ থেকে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের এডিপি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মূল এডিপি তো নয়ই, সংশোধিত এডিপিও পুরোটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। সংশোধিত এডিপির সর্বোচ্চ ৯৫ ভাগ বাস্তবায়ন করা গেছে।
অর্থ বিভাগের করা ‘অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২২’ অনুযায়ী, এ সময়ে সবচেয়ে বেশি এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে ২০১৭-২০১৮ এবং ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে। এই দুই অর্থবছরে সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৯৫ শতাংশ। অন্যদিকে, সবচেয়ে কম বাস্তবায়ন হয়েছিল ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে। এ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল মাত্র ৮০ শতাংশ। এর পরের দুই অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল যথাক্রমে ৮৬ ও ৮৭ শতাংশ।
এডিপি বাস্তবায়ন বাড়াতে অর্থ বিভাগের সুপারিশ
এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়াতে ২০১৮ সালে বাজেট মনিটরিং কমিটির বৈঠকে কিছু সুপারিশ দিয়েছিল অর্থ বিভাগ। এ সুপারিশগুলোর মধ্যে ছিল—অনুমোদিত ব্যয়সীমার মধ্যে প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগের অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্পগুলোর বিপরীতে অর্থায়ন নিশ্চিত করা। নতুন অগ্রাধিকার প্রকল্পের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত অর্থের সংস্থান না হলে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে বা স্থগিত রেখে নতুন প্রকল্পে অর্থায়ন করা। সর্বোচ্চ বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্ত ১০০টি প্রকল্পে বৈদেশিক সাহায্যের ছাড় ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ কর্তৃক নিয়মিত পরিবীক্ষণ সভা করা। দক্ষ প্রকল্প পরিচালকের অভাব পূরণে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে চুক্তিভিত্তিক প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করা। প্রবৃদ্ধি সহায়ক ১০টি বড় প্রকল্প সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করা ইত্যাদি।
তবে, এসব সুপারিশ এখন পর্যন্ত পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। তাই, সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন লক্ষ্য অনুযায়ী হচ্ছে না।
ঢাকা/হাসনাত/রফিক