ঢাকা     শনিবার   ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২০ ১৪৩১

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণে ব্যয় হবে ৩১৬ কোটি টাকা

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৫, ১ জানুয়ারি ২০২৫  
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণে ব্যয় হবে ৩১৬ কোটি টাকা

ফাইল ফটো

বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের প্যাকেজ ডব্লিউ৩: বিদ্যমান মিটারগেজ লাইনকে ডুয়েলগেজ লাইনে রূপান্তর করা এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে নতুন ডুয়েলগেজ লাইনের বাকি কাজ সমাপ্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় ওয়ান স্টেজ টু ইনভেলপ টেন্ডারিং মেথড (এনসিটি) পদ্ধতিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৩১৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে ১৭.১১ কিলোমিটার (মেইন লাইন ১২.০১ কিলোমিটার এবং লুপ লাইন ৫.১০ কিলোমিটার) ডুয়েলগেজ রেললাইন এবং আনুষঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণের লক্ষ্যে ৩৭৮.৬৫৫৭ কোটি টাকা (জিওবি ১২৯.১১০৬ কোটি টাকা এবং ডিআরজিএ-সিএফ ২৪৯.৫৪৫১ কোটি টাকা) ব্যয়ে ২০১৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ৩০ জুন মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি গত ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি তারিখে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। পরবর্তী সময়ে স্কোপ অব ওয়ার্ক পরিবর্তনসহ বিভিন্ন যৌক্তিক কারণে ৬৫৮.৩৪৬০ কোটি টাকা (জিওবি ৪০৮.৮০০৯ কোটি টাকা এবং ডিআরজিএ-সিএফ ২৪৯.৫৪৫১ কোটি টাকা) ব্যয়ে ২০১৫ সালের ১ জুন থেকে ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটির ১ম সংশোধিত ডিপিপি ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল তারিখে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। প্রথম সংশোধিত ডিপিপির আওতায় প্রকল্পটির অনুকূলে মোট ২৮.৭২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ করা হবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্পটির অনুকূলে ১২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৪৭.৫০ শতাংশ এবং আর্থিক অগগ্রতি ৩৬.৫৬ শতাংশ। 

উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন প্রক্রিয়াকরণের বিদ্যমান পরিপত্র (জুন, ২০২২) অনুযায়ী ডিআরজিএ-সিএফের অর্থায়ন জিওবি অর্থায়নের অনুরূপ বলে বিবেচিত হয়।

মূল প্রকল্পের নির্মাণ প্যাকেজ ডব্লিউডিআইর জন্য নিয়োজিত ঠিকাদার ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ তারিখে নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রেখে প্রকল্প সাইট ত্যাগ করে। ফলে, উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ২০২৩ সালের ৭ আগস্ট তারিখে প্রকল্পের পিআইসি এবং ২০২৩ সালের ৯ আগস্ট তারিখে পিএসসি সভা করা হয়। পিএসসি সভায় ডব্লিউডিআইর অসমাপ্ত কাজ এবং নতুন প্যাকেজ ডব্লিউডি৩ এর কাজকে একত্র করে প্যাকেজ ডব্লিউডি৩ নাম করে নতুন দরপত্র আহ্বান করে প্রকল্প বাস্তবানের সিদ্ধান্ত হয়। প্যাকেজ ডব্লিউডি৩-এর কাজ শেষ করার জন্য ৩০ মাস নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে নির্মাণ কাজ ১৮ মাস  ও ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড ১২ মাস। প্রকল্পটি ২০২৬ সালের ৩০ জুন তারিখে শেষ হবে। তাই, ডিপিপির সংস্থান অনুযায়ী নির্মাণ ঠিকাদার নিয়োগের চুক্তি সম্পাদন করা হলে সেটি প্রকল্পের অনুমোদিত মেয়াদকে অতিক্রম করবে।

প্রকল্পের আওতায় নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রণীত ডিটেইলড ডিজাইন অনুযায়ী ইউআইসি ৬০ কেজি রেল দিয়ে ২৮.৭২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের সংস্থান রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত অ্যালাইনমেন্টের ভিত্তিতে আলোচ্য প্যাকেজে অপরিহার্য হিসেবে বিবেচিত পাঁচটি নতুন স্টেশন ভবন (শ্যামপুর, পাগলা, ফতুল্লা, চাষাঢ়া এবং নারায়ণগঞ্জ), প্ল্যাটফর্মসহ প্ল্যাটফর্ম শেড এবং ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের সংস্থান রয়েছে। প্যাকেজ ডব্লিউডি৩ এর আওতায় ২৫ টন এক্সেল লোড বহন ক্ষমতাসম্পন্ন মাইনর সেতু পূর্ববর্তী ঠিকাদার ইতোমধ্যে নির্মাণ করেছে। একীভূত প্যাকেজ ডব্লিউডি৩-এর আওতায় বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের মাইনর সেতুগুলোকে ২৫ টন এক্সেললোড বিশিষ্ট ব্রডগেজ স্ট্যান্ডার্ড সেতুতে পুনঃনির্মাণ করা হবে। ডব্লিউডি১ প্যাকেজের চুক্তিমূল্য ছিল ৩৪৮.১৬ কোটি টাকা। ডব্লিউডি১ প্যাকেজের আওতায় মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭৬.৭৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে পূর্ববর্তী ঠিকাদারকে বিল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ১৫৯.৩৫ কোটি টাকা এবং পাওনা রয়েছে ১৭.৪০ কোটি টাকা। ফলে, ডব্লিউডি১ প্যাকেজের অব্যয়িত অর্থের পরিমাণ ১৭১.৪১ কোটি টাকাসহ সংশোধিত ডিপিপিতে ডব্লিউডি১ ও ডব্লিউডি৩ প্যাকেজের বিপরীতে সর্বমোট (১৭১.৪১+১৬১.৪৭২৮)=৩৩২.৮৮২৮ কোটি টাকার সংস্থান রয়েছে।

বিবেচ্য কাজের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে প্যাকেজ দুটিকে একত্রীকরণ করে ডব্লিউডি৩ পুনঃনির্ধারণ করা হয়। ডব্লিউ৩ প্যাকেজটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনাতে (এপিপি) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হয়। ডব্লিউডি৩ প্যাকেজের জন্য বিপিপিএর (সিপিটিইউ) সংশ্লিষ্ট আদর্শ দরপত্র দলিল ব্যবহৃত হয়েছে এবং দরপত্র দলিলে প্রকল্প বাস্তবায়নকালে মূল্য সমন্বয়ের সংস্থান রাখা হয়নি। বিবেচ্য কাজ সম্পাদনের জন্য পিপিআর-২০০৮, উপ-বিধি ১৬(৫) (ক) অনুসারে দাপ্তরিক ব্যয় প্রাক্কলন প্রণয়নের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি কর্তৃক অফিশিয়াল কস্ট এস্টিমেট প্রণয়ন করা হয়েছে, যা হোপ কর্তৃক অনুমোদিত হয়। অনুমোদিত দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্য ৩৫৮ কোটি ৩৩ লাখ ২৯ হাজার ২০৭ টাকা। এর মধ্যে ১৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা প্রভিশনাল-সাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং কোনো কন্টিনজেন্সির সংস্থান নেই।

বিবেচ্য কাজের জন্য প্রকল্প পরিচালক কর্তৃক উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র দলিল অনুসারে দরপত্র দাখিলের সর্বশেষ তারিখ ছিল ২০২৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি।

দরপত্র বিজ্ঞপ্তির নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১২টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দলিল ক্রয় করে। তার মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। নির্ধারিত দরপত্রটি উন্মুক্ত করে বিড ওপেনিং শিট প্রস্তুত করা হয়। দরপত্রটির কারিগরি মূল্যায়নে সহায়তা করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে টেকনিক্যাল সাব-কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটি দরপত্র দলিলের চাহিদার ভিত্তিতে দরদাতাদের দাখিলকৃত টেকনিক্যাল বিটগুলো পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে ২০২৪ সালের ৪ মার্চ তারিখে প্রতিবেদন দাখিল করে। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি) ২০২৪ সালের ১৩ মার্চ এবং ৮ ও ৯ এপ্রিল তারিখে মূল্যায়ন সভায় মিলিত হয়ে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি, দরপত্র দলিলের এমপ্লয়ার্স রিকোয়ারমেন্ট  ও শর্তসমূহ, দরদাতাদের দাখিলকৃত দলিলাদি, টিএসসি কর্তৃক দাখিলকৃত প্রতিবেদন এবং আনুষঙ্গিক বিষয়াদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে। এছাড়াও দাখিলকৃত দরদাতাদের গ্রহণযোগ্যতাসহ কারিগরি প্রস্তাবের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। ২৩ এপ্রিল তারিখে টিইসির সভায় পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ২ মে তারিখে সংশোধিত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দেওয়া প্রকল্প ব্যবস্থাপকসহ গুরুত্বপূর্ণ জনবলের যোগ্যতায় কোনো ঘাটতি না পাওয়ায় দাখিলকৃত টিইসির প্রতিবেদনের সঙ্গে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সব সদস্য একমত পোষণ করেন।

দরপত্র দাখিলকারী পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সব আনুষঙ্গিক বিষয় পর্যালোচনা ও বিশদ আলোচনার পর টিইসি কর্তৃক দরপত্র দাখিলকারী পাঁচটি প্রতিষ্ঠানেরই টেকনিক্যাল অফার রেসপনসিভ বিবেচিত হয়। দরপত্র জামানত হিসেবে দাখিলকৃত ব্যাংক গ্যারান্টিসমূহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে যাচাই করা হয়। রেসপন্সিভ দরদাতা প্রতিষ্ঠাগুলোর মধ্যে যৌথভাবে জিপিটি ইনফ্রাপ্রজেক্টস লিমিটেড -স্ট্যান্ডার্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডকে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে সুপারিশ করা হয়।

এনসিটিপদ্ধতিতে আহ্বান করা দরপত্রের বিপরীতে মূল্যায়িত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা জিপিটি ইনফ্রাপ্রজেক্টস লিমিটেড-স্ট্যান্ডার্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এর উদ্ধৃত দর ২৯৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং প্রভিশনাল সাম ১৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকাসহ সর্বমোট ৩১৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা মূল্যের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির অনুমোদনের জন্য কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

ঢাকা/হাসনাত/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়