যমুনা লাইফের সিইও হতে উপদেষ্টা নাহিদের স্বাক্ষর জাল!
কামরুল হাসান খন্দকার
বিমা খাতের কোম্পানি যমুনা লাইফ ইনস্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) পদে দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগের জন্য জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন কামরুল হাসান খন্দকার।
তিনি বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের স্বাক্ষর জাল করে সুপারিশপত্র পাঠিয়েছেন। তবে এ সুপারিশপত্রের স্বাক্ষরটি জাল বলে জানিয়েছে উপদেষ্টার দপ্তর।
বর্তমানে কামরুল হাসান খন্দকার যমুনা লাইফ ইনস্যুরেন্সের সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে ওই পদে থাকতে তার নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র চূড়ান্ত অনুমোদন প্রয়োজন। এর আগে কোম্পানিটির সিইও পদে দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগের বিষয়ে তার প্রথম দফার আবেদন নামঞ্জুর করেছে আইডিআরএ। এরপর দ্বিতীয় দফায় গত ২৪ ডিসেম্বর উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের জাল সুপারিশসহ তিনি আবেদন করেন।
এ বিষয়ে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম’র একান্ত সচিব র হ ম আলাওল কবির বলেন, “এ ধরনের কোনো সুপারিশ করা হয়নি। উপদেষ্টাকে বিব্রত করতে তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।”
এদিকে ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অফিসার মুহম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, “এ সুপারিশটি জাল। উপদেষ্টা মহোদয় তার সকল ডিওতে বাংলায় স্বাক্ষর দেন। ওই সুপারিশে ইংরেজিতে স্বাক্ষর করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ জাল। এ বিষয়ে সবাই সতর্ক থাকবেন।”
এদিকে পুনঃ নিয়োগের আবেদনে কামরুল হাসান জানান, ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি কোম্পানিটির সিইও হিসেবে কাজ করেছেন। তার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে পুনঃ নিয়োগের জন্য পর্ষদ থেকে ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বর আবেদন করা হয়।
এতে তিনি আরো দাবি করেন, বিভিন্ন ‘অযৌক্তিক ও মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয়’ এমন ইস্যু তৈরি করে কৌশলে তার পুনঃ নিয়োগ অনুমোদন করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দায়িত্ব পালনের সময় কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে গ্রাহকের বিমার টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষাগত যোগ্যতার জাল সনদ থাকার প্রমাণও পেয়েছে আইডিআরএ। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থা তার আবেদন নামঞ্জুর করেছে।
আইডিআরএ’র তথ্য মতে, শিক্ষাসনদ ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় গত বছরের ১৯ মার্চ কামরুল হাসান খন্দকারের নিয়োগ নবায়নের আবেদন নামঞ্জুর করা হয়। বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হলে দীর্ঘ শুনানি শেষে গত বছরের ২ জুন সেই রিভিউ আবেদনও নামঞ্জুর করে আইডিআরএ।
কামরুল হাসান খন্দকার সংশোধিত প্রবিধানমালা অনুযায়ী তার বিদেশি এমবিএ ডিগ্রির মানের সমতাকরণ করেননি। এ ছাড়া পরবর্তী সময়ে দাখিল করা ইবাইস ইউনিভার্সিটির দুটি সনদপত্রের বৈধতার বিষয়েও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে পারেননি। এ দুটি কারণে নিয়োগ নবায়নের আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট চিঠিতে উল্লেখ করে আইডিআরএ।
নিয়োগ নবায়নের প্রথম আবেদনে কামরুল হাসানের শিক্ষাগত যোগ্যতায় উল্লেখ করা হয়, তিনি ভারতের উত্তর প্রদেশের ডিমড ইউনিভার্সিটি থেকে ২০০২ সালে দূরশিক্ষণে এমবিএ পাস করেছেন। ওই আবেদনের পর আইডিআরএকে পাঠানো চিঠিতে কামরুল হাসান ইবাইস ইউনিভার্সিটির দুটি সনদ দাখিল করে সেগুলো তার শিক্ষাগত যোগ্যতায় যুক্ত করার অনুরোধ জানান। ইবাইস ইউনিভার্সিটির ওই সনদপত্র অনুসারে কামরুল হাসান খন্দকার ২০১৯ সালে বিএসএস এবং ২০২১ সালে এমবিএ পাস করেছেন। এরপর আইডিআরএ কর্তৃপক্ষ কামরুল হাসানের বিদেশি এমবিএ ডিগ্রির মানের সমতাকরণ এবং ইবাইস ইউনিভার্সিটির সনদপত্র দুটির বৈধতার বিষয়ে ইউজিসির প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে বলে। তবে কামরুল হাসান এর কোনোটিই করতে পারেননি।
এছাড়া ২০২২ সালে যমুনা লাইফের ৯৩ জন গ্রাহকের ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছিল কামরুল হাসানসহ চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। আইডিআরএ’র তদন্তে আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যায়। অভিযুক্ত চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রাহকেরা একাধিক মামলা করেছেন।
এ বিষয়ে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ আইডিআরএ'র পরিচালক (উপসচিব) সালেহীন তানভীর গাজী বলেন, “যমুনা লাইফের সিইও হিসেবে অনুমোদনের জন্য ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার স্বাক্ষরিত একটি সুপারিশ জমা দিয়েছেন কামরুল হাসান। বিষয়টি নিয়ে বুধবার (১ জানুয়ারি) আইডিআরএর চেয়ারম্যান ও চার সদস্য বৈঠক করেছেন।”
এ বিষয়ে কামরুল হাসান খন্দকারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
ঢাকা/টিপু