অর্থ উপদেষ্টা
সংস্কার শেষে পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে যাবে
মঙ্গলবার ডিএসই ভবনে পুঁজিবাজারের অংশীদারদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ
অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “সংস্কারের কারণে পুঁজিবাজার সাময়িকভাবে খারাপ অবস্থায় আছে। সংস্কারকাজ শেষে পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে চলে যাবে।”
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর নিকুঞ্জে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভবনে পুঁজিবাজারের অংশীদারদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। আজ প্রথমবারের মতো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পরিদর্শন করেন অর্থ উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “দীর্ঘ মেয়াদে অর্থায়নে ব্যাংকের সাথে পুঁজিবাজারের সামঞ্জস্য রাখা হবে। ভালো সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা হবে। প্রাকৃতিকভাবে ভালো শেয়ারের মাধ্যমে পুঁজিবাজার দীর্ঘমেয়াদে ভালো হবে।”
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোর জন্য যথেষ্ট সহায়তা করছে সরকার। নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে, আইসিবিকে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে, এসব তো আস্থা ফেরাতেই করা হয়েছে। পৃথিবীর বড় বড় দেশগুলোতে ইন্ডাস্ট্রিগুলোর জন্য লং টার্ম ফাইন্যান্সিং পুঁজিবজার থেকে আসে। ব্যাংকের টাকা হলো জণগণের জমা করা টাকা। তাই, বড় এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য ব্যাংকের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। আজকে আমরা পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকলের কাছ থেকে তাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো শুনেছি। ইতোমধ্যে এগুলোর মাঝে কিছু সমস্যা সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “পুঁজিবাজারে শুধু সূচক বেড়ে ৯ হাজার পয়েন্ট হওয়া ভালো কিছু নয়। সেটা স্বাভাবিক না। সেটা কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়। সেখানে কারসাজির মতো সমস্যা থাকে। উত্থান-পতনের মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবে বাজার ভালো করতে হবে। বর্তমানে ব্যাংকে ৮-৯ শতাংশ পর্যন্ত আমানতের সুদ পাওয়া যায়। যেখানে বাজারে ১২ শতাংশ হলেও অনেক আমানতকারী সেটা নিরাপদ মনে করে সেখানে যায়।”
এ অর্থনীতিবিদ বলেন, “পুঁজিবাজারে অনেক সংস্কার হচ্ছে। এজন্য সাময়িক সময় কিছু সমস্যা মেনে নিতে হবে। পুঁজিবাজারের সাথে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্পর্ক আরো মজবুত করতে আজকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে আসা হয়েছে। আমাদের দেশে বেশিরভাগ ব্যবসা করে ব্যাংক থেকে। ভালো কোম্পানিগুলো শেয়ার ছাড়তে চায় না। ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে আরেকটা সুবিধা আছে, সেটা হচ্ছে, টাকা নিয়ে ফেরত দেওয়া লাগে না। ব্যবসার ক্ষেত্রে ঋণ আর শেয়ারের বিষয়ে সমন্বয় না করলে বাজার ভালো হবে না। এজন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া এবং শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য করতে হবে। সেক্ষেত্রে বাজারে ভালো কোম্পানি আনতে হবে, যেটা বাংলাদেশে হয় না।”
উপদেষ্টা আরো বলেন, “বাজারের মধ্যস্থতাকারীরা পুঁজিবাজারের অংশ। তারা খারাপ নাকি ভালোভাবে ব্যবসা করবে, সেটা তাদের ওপর নির্ভর করে। এতে বাজার ভালোও হতে পারে, খারাপও হতে পারে। এটা গত ১৫ বছরে দেখে এসেছেন। এখন বাজার ভালো করার সময় এসেছে। গত ১৫ বছরে এ সুযোগ পাওয়া যায়নি। তাই, পুঁজিবাজারের ভালো করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের সবাই আগ্রহী। তার জন্য প্রয়োজনে নীতি পরিবর্তন করা হবে। তবে, সেটা দ্রুত করতে হবে। এ সরকার দীর্ঘ মেয়াদে থাকবে না। কিন্তু, বাজরকে দীর্ঘ মেয়াদে ভালো রেখে যেতে হবে। এজন্য দ্রুত কাজ করতে হবে।”
ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের উদ্যোগে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল), ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/এনটি/রফিক