শুল্ক ও গ্যাসের দাম বাড়ানো অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী: ডিসিসিআই
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা
“বাংলাদেশ সংকটময় মুহূর্ত ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এর মূল কারণ সীমিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আমদানি খরচ বৃদ্ধি, উচ্চ জ্বালানি ব্যয়, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ঋণ প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতাসহ উচ্চ সুদহার। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে শতাধিক পণ্যের ওপর ভ্যাট ও বেশকিছু পণ্যের ওপর কর বৃদ্ধি এবং শিল্পে গ্যাসের মূল্য দ্বিগুণের বেশি বাড়ানোর উদ্যোগ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ সামগ্রিক অর্থনীতর জন্য আন্তঘাতী সিদ্ধান্ত।”
শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন ডিসিসিআইর সভাপতি তাসকীন আহমেদ। এ সময় তিনি ২০২৫ সালে ডিসিসিআইর কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ডিসিসিআইর ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী এবং সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মানসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ডিসিসিআইর সভাপতি বলেন, “বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় অর্থনীতিতে এর প্রভাব, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আমদানি খরচ বৃদ্ধি, উচ্চ জ্বালানি ব্যয় ও নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ঋণ প্রাপ্তিতে বাধা ও সুদের উচ্চ হার, উচ্চ শুল্ক হার, ভ্যাট হার বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি প্রভৃতি কারণে দেশের বেসরকারি খাত বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে আছে। এ বছর ঢাকা চেম্বার সুদের হার কমানো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করছে।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সিএসএমই খাতে অনেকে ঋণ পায়, কিন্তু তা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নয়। এটি আরও বাড়াতে হবে এবং এ খাতের উদ্যোক্তারা যেন সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ পান, তা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, আমাদের এসএমই খাত সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে থাকে।”
তিনি বলেন, “দীর্ঘমেয়াদী সহায়ক কর কাঠামো থাকলে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে উৎসাহিত হন। সেক্ষেত্রে হঠাৎ মাঝপথে শুল্ক-কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত উদ্যোক্তাদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়, যা মোটেই কাম্য নয়।”
এলডিসি থেকে উত্তরণ সম্পর্কে ডিসিসিআইর সভাপতি বলেন, “আমরা অর্থনৈতিকভাবে মোটামুটি সঠিক পথেই অগ্রসর হচ্ছিলাম। তবে, কোডিভ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা, স্থানীয় রাজনৈতিক অস্থিরতা-পরবর্তী পট পরিবর্তনসহ আর্থিক খাতে তারল্য সংকটের ফলে এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি বেশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমরা কতটা প্রস্তুত, তা নির্ধারণে সরকারি-বেসরকারি ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের মাঝে বিশদ আলোচনার ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। বিষয়টি যদি পেছানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়, তবে দেশের সার্বিক অর্থনীতির কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকার এলডিসি উত্তরণে আরো কিছুটা সময় নিতে পারে। এ লক্ষ্যে সকলের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের কোনো বিকল্প নেই। তবে, মনে রাখতে হবে, ২০২৬ সালে আমাদের এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ হতে বেসরকারি খাতকে সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।”
তাসকীন আহমেদ বলেন, “এমনিতেই আমাদের জিডিপিতে করের অবদান বেশ কম। এরকম পরিস্থিতিতে বিদ্যমান অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলায় সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রতাসাধনের বিকল্প নেই। সরকারকে এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।”
ঢাকা/এনএফ/রফিক