‘ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তে নতুন সংকটে পড়বে ব্যবসা-বাণিজ্য’
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
তৈরি পোশাক, এসি রেস্তোরাঁ, নন এসি হোটেল, মিস্টিসহ ৪৩ ধরনের পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ছে। কোনো আলোচনা ছাড়া ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি অবিবেচনাপ্রসূত। এতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমবে। নতুন করে সংকটে পড়বে ব্যবসা-বাণিজ্য।
রবিবার (১২ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি সামিম আহমেদ এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিপিজিএমইএ সাবেক সভাপতি এ এস এম কামাল উদ্দিন, ফেরদৌস ওয়াহেদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি কে এম ইকবাল হোসেন, সহ-সভাপতি কাজী আনোয়ারুল হক, পরিচালক সৈয়দ নাসির উদ্দিন, সাবেক পরিচালক ঝন্টু কুমার সাহা, বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর কামরুল ইসলাম, ডিউরেবল প্লাস্টিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌকিরুল আলম, আকিজের পরিচালক মফিজুল ইসলাম ইরাজ উপস্থিত ছিলেন।
সামিম আহমেদ বলেন, “জ্বালানি সংকটে ইতোমধ্যে বন্ধ হয়েছে ২০০ কারখানা। ঝুঁকিতে আছে আরো ৩০০ প্লাস্টিক কারখানা। বছরজুড়ে মূল্যস্ফীতির কারণে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি ছিল। মানুষ নাকাল, এমন পরিস্থিতিতে পণ্যের ওপর ভ্যাট কম হলে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে।”
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি, জ্বালানি বিভাগের অনুমোদন নিয়ে গ্যাসের মূল্য বাড়াতে গত ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ টাকা বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। প্রস্তাবিত দাম শিল্পের জন্য খুবই কঠিন হবে। দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত শিল্পায়নকে নিরুৎসাহিত করবে। শিল্পে নতুন বিনিয়োগ আসবে না, কর্মসংস্থানও হবে না। বিদেশি বিনিয়োগও আসবে না।”
বিপিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “পেট্রোবাংলা দুটি উৎস থেকে গ্যাস সংগ্রহ করে। দেশি গ্যাস কিনে নেয় বিভিন্ন কোম্পানি থেকে। এতে প্রতি ইউনিটে তাদের গড়ে খরচ হয় ৬ টাকা ৭ পয়সা। কিন্তু তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে খরচ হচ্ছে ৭৫ টাকার বেশি। এতে লোকসানে আছে সংস্থাটি। ভর্তুকি দিতে রাজি নয় সরকার। তাই এখন এলএনজি আমদানির খরচ পুরোটাই শিল্পের ওপর চাপাতে চাইছে পেট্রোবাংলা। এলএনজি আমদানি করে চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) ১৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা ঘাটতি হতে পারে বলে একটি হিসাব দিয়েছে পেট্রোবাংলা। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেনা এলএনজির খরচ হিসাব করে প্রতি ইউনিটের দাম প্রস্তাব করেছে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা। এর মধ্যে আমদানি খরচ ৬৩ টাকা ৫৮ পয়সা। আর বাকিটা শুল্ক, কর ও পরিচালন খরচ। আমরা মনে করি আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও অন্যান্য বিষয় বাস্তবায়ন করার আগে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে কোনো চুক্তি বা ব্যবস্থা দেশবাসী গ্রহণ করবে না।”
সামিম আহমেদ বলেন, “২০২৪ সালের ২০ জুন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১৭টি সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক পণ্য ফেস আউট করার লক্ষ্যে একটি তালিকা সম্বলিত গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। সম্প্রতি এক সার্কুলার অনুসারে মন্ত্রণালয় থেকে সব সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক বন্ধ করার প্রচেষ্টা চলছে।”
“পরিবেশের উন্নত করা-আমরাও চাই। সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধ হলে প্লাস্টিক খাতের ৬ হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।সরকারের কোষাগারে প্রতি বছর আনুমানিক ৪০ হাজার কোটি টাকা জমা হয় এই খাত থেকে, এসব রাজস্ব আহরন বন্ধ হবে।”
গ্যাস ও এলএনজির ব্যাপারে প্লাস্টিক খাত থেকে বেশ কিছু প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো-নতুন কূপ খননে আরো বিনিয়োগ ও বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সরকারের ১৫০টি কূপ খননের প্রস্তাব সমর্থনযোগ্য কিন্তু সেগুলো দ্রুত খনন শেষ করতে হবে। মিয়ানমার থেকে চায়না এবং থাইল্যান্ড প্রচুর পরিমাণে গ্যাস পাইপ লাইনের মাধ্যমে আমদানি করে। কিন্তু বাংলাদেশ মিয়ানমারের প্রতিবেশী রাষ্ট্র হলেও বিগত ৫০ বছরে মিয়ানমারের কাছ থেকে কোনো গ্যাস আমদানি করতে পারেনি। এ ব্যাপারে চুক্তিও সম্পন্ন হয়নি। বর্তমান সরকারকে এ ব্যাপারে প্রচেষ্ঠা গ্রহণের আহ্বান।
সংকট সমাধানে এলএনজি আমদানি থেকে শুল্ক-কর প্রত্যাহার করা, নতুন এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করে আমদানি বাড়ানোর প্রস্তাব। দেশের শিল্পায়ন ও বিনিয়োগের স্বার্থে বর্তমান গ্যাসের মূল্য ৩০ টাকা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব। স্টেকহোল্ডারদের সাথে বিস্তারিত আলাপ আলোচনা করে বাস্তবতার নিরিখে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব।
সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যাপারে প্লাস্টিক খাতের প্রস্তাবনা:
প্লাস্টিকের পুনঃচক্রায়নের মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর, ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানো এবং মহাসাগরীয় প্লাস্টিক দূষণ রোধ করার ব্যবস্থা নেওয়া, ইকোনমিক ইমপেক্ট কি হবে তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বিডা, এফবিসিসিআই এবং অন্যান্য সংস্থা এর সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া। যেহেতু ২০৩০ সাল পর্যন্ত ইউএনইএ রেজুলেশন সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ফেস আউট করার সিদ্ধান্ত আছে, সে অনুযায়ী বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া।
সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের যে ১৭টি আইটেম বন্ধ করার কথা বলা হচ্ছে এটা বাস্তবায়ন করলে জিডিপি অনেক কমে যাবে এবং এফডিআই আসবে না বলে মনে করেন ব্যবসায়িরা। যারা আছে চলে যেতে বাধ্য হবেন। কারণ কোনো পণ্য প্যাকেজিং ছাড়া বাজারজাত সম্ভব নয়।
ঢাকা/এনএফ/এসবি