ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৩ মার্চ ২০২৫ ||  ফাল্গুন ২৮ ১৪৩১

রোজার পর মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা হবে: অর্থ উপদেষ্টা 

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৪, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ১৫:৫৫, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
রোজার পর মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা হবে: অর্থ উপদেষ্টা 

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ (ফাইল ফটো)

আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট জুন মাসেই পেশ করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। রোজার পর মূল্যস্ফীতি ৭-৮ শতাংশের ঘরে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। 

রোজা সামনে রেখে অর্থ উপদেষ্টার কাছে মানুষকে আশ্বস্ত করার মতো কোনো খবর আছে কি না? এ প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমাদের কাছে আশ্বস্ত করার খবর হলো, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি রোজার সময় যে নিত্যপ্রয়োজনীয়... রোজা ছাড়াও মানুষের কনজাম্পশন প্যাকেজে যে জিনিসগুলো আছে, সেগুলো এনসিউর করতে। সেজন্য আমরা নিরলসভাবে চাল, ডাল, চিনির সরবরাহ নিশ্চিত করছি। এখন তো চিনির দাম অনেকটাই রিজনেবল অবস্থায় এসেছে। আমরা চেষ্টা করছি বাকিগুলো যাতে রিজনেবল দামে আসে। প্রথমত সরবরাহটা নিশ্চিত করা। সরবরাহ নিশ্চিত করলে অনেক সময় সঠিক দামে ভোক্তারা পায় না। এখানে আবার মার্কেট ডায়নামিকস আছে।”

তিনি বলেন, “আমি কয়েকদিন আগে বলেছি, মজুত যারা করবে, তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান। দরকার হলে সেটা আমরা রিপিট করব। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ছাড়া অন্যান্য যে এজেন্সি আছে... সয়াবিন গুদামে, বেসমেন্ট রেখে দিয়েছে কি না? কিছুটা তারতম্য হতে পারে, কিন্তু একটা ক্রাইসিস হয়ে যাবে, সেটা হওয়ার কথা নয়।”

“আমরা চেষ্টা করছি, রোজার সময় যাতে কোনোভাবে দাম না বাড়ে। মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার উদ্দেশ্য আমাদের আছে। এক পার্সেন্ট কমেছে। সেটা যাতে ধারাবাহিকভাবে কমে আসে। বাজেট দেওয়ার সময় এটা যাতে রিজনেবল অবস্থায় আসে। কারণ, এটা আমাদের একটা চ্যালেঞ্জ।” 

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “মূল্যস্ফীতি হলেই জীবনযাত্রার মান কমে হয়। এবার বড় একটি (পণ্যের) অংশ আমাদের আমদানি করতে হয়েছে। এটা আমাদের বৈদেশিক রিজার্ভের ওপর প্রভাব ফেলেছে।”

বিস্কুটের ওপর ভ্যাট কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “এখন কেউ লেখে না যে বিস্কুট কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। আরও দু'-একটা পণ্যের কথা আমাকে বলেছে, রোজার সময় এই পণ্যগুলো একটু দরকার। আমি দেখব, এটা যতটা কমানো যায়।”

চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে বাজেট দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে, এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আমরা অনেক চিন্তা-ভাবনা করেছি, বাজেটটা জুনের পরে কারো জন্য অপেক্ষা করে না। অনেকগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার হয়েছে, কোনো সময়েই বাজেট অপেক্ষা করেনি। রিভাইজ বাজেট তো আমাদের করতেই হবে। বাজেটটা আমরা জুনের মধ্যেই দেব।” 

বাজেট প্রণয়নে প্রধান অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ করা হবে বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “আমরা জানিয়ে দেব, তারা যদি মনে করে, রিভাইজ করবে। আমরা এখন আগের সরকারের বাজেট রিভাইজ করছি না?”

তিনি বলেন, “আমরা যদি বাজেট না দিই, তাহলে দাতাদের প্রজেকশন আছে। কত কী হবে, সেটা আমরা মিস করতে পারব না।” 

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমি হয়ত কোথাও বক্তৃতা দিয়ে বাজেট পেশ করব। অ্যাপ্রুভাল নেওয়ার তো বিভিন্ন স্টেজ আছে।”

ব্যবসায়ীরা বলে থাকেন, এলসি খোলার ক্ষেত্রে তারা ডলার পান না। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “ব্যবসায়ীদের আপনারা ভালো করে চেনেন। আমি তো আরো ভালো করে চিনি ব্যবসায়ীদের। তারা কিন্তু অনেক সময় একপেশে কথাবার্তা বলেন। এক গ্রুপে এসে বলবে, স্যার আপনি তো এটার ওপর ট্যাক্স দিয়েছেন বা কমিয়ে দিয়েছেন। আরেক গ্রুপ এসে বলবে, স্যার আপনি কমাইয়েন না, যা দিয়েছেন ঠিকই আছে। সুতরাং আমাকে চিন্তা-ভাবনা করে করতে হয়। বাজারে কিন্তু ডলারের সংকট নেই। আমাদের রপ্তানি বেড়েছে। সেটা আমরা জানছি। কারণ, আমাদের ক্যাশ ইনসেনটিভ দিতে হয়।”

অর্থ উপদেষ্টা আরো বলেন, “এখন কারেন্ট ব্যালেন্স অ্যাকাউন্ট পজিটিভ এসেছে। ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট পজিটিভ। এটা ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আইনশৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা দরকার। এটা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। যদিও এটা আমার বিষয় না।” 

“আমি যখন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলি, তারা এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন। ফ্যাক্টরি, মূল্যবান জিনিসপত্র, গুদামের নিরাপত্তা না দিতে পারলে ব্যবসায়ীরা স্বস্তি অনুভব করবেন না। এ বিষয়ে আমরা একমত এবং এটার দ্রুত সমাধান করার জন্য আমরা আলাপ-আলোচনা করেছি।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশে কিছু টাকা পাঠানোর কথা বলেছেন। বাংলাদেশে কোথায় কীভাবে এ টাকা খরচ হয়েছে, এ বিষয়ে আপনি কোনো তদন্ত করবেন কি না? এ প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “এটা যদি আমাদের দেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে হয়, কারো মোটিভেটেড কোনো ইস্যুতে এটা ব্যবহার করে, সেটা দেখার বিষয়। আমরা দেখব, ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের মোটিভেশনাল কাজে টাকা না আসে।”

ঢাকা/হাসনাত/রফিক


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়