‘এসএমইদের দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করবে আইএফআরএস’

এসএমইদের দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করবে ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল রিপোটিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস)।একইসঙ্গে এসএমইদের অর্থায়ন সহজ করতে, বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রাপ্তিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে আইএফআরএস।
শনিবার (২২ মার্চ) ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এসএমইদের জন্য ‘ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল রিপোটিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) বাস্তবায়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ফাইনান্সিয়াল রিপোটিং কাউন্সিলের (এফআরসি) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. আমির উদ্দিন।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, “আমাদের জিডিপিতে এসএমইদের অবদান ২৫ শতাংশের বেশি এবং আইএফআরএসে এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের অন্তর্ভুক্তি, তাদেরকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রদান করবে, যার মাধ্যমে এ খাতের উদ্যোক্তাদের আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা আনায়নের পাশাপাশি এসএমইদের অর্থনীতির আনুষ্ঠানিক খাতের সাথে সম্পৃক্তকরণে সহায়তা করবে।”
তিনি বলেন, “এসএমই উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন, দক্ষতা উন্নয়ন, আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে ভুল-ভ্রান্তি হ্রাস এবং স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রাপ্তিতে আইএফআরএস সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।”
ডিসিসিআই সভাপতি আরো বলেন, “আইএফআরএস’র মাধ্যমে এসএমই উদ্যোক্তাদের কমপ্লায়েন্স বাড়বে। সেই সাথে এ খাতের উদ্যোক্তাদের অধিকহারে করজালের আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে কর আহরণের হার বৃদ্ধি করবে।”
সর্বোপরি আইএফআরএস বাস্তবায়নে এসএমই উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে আরো অধিকহারে প্রশিক্ষণ প্রদানের ওপর জোরারোপ করেন তিনি।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হোদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট এর ম্যানেজিং পার্টনার এসকে তারিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, “স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা ও দক্ষতার অভাব, হিসাবরক্ষক ও অডিটরদের প্রশিক্ষণের স্বল্পতা এবং এফআরসিএস বাস্তবায়নে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের মাঝে এটি বাস্তবায়নে আগ্রহ কম পরিলক্ষিত হচ্ছে।”
এছাড়া এ খাতের উদ্যোক্তাদের সম্প্রসারণে সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তি, কর ও ভ্যাটের হার হ্রাস, এসএমই স্টার্টআপদের জন্য বিশেষ কর সুবিধা প্রদান এবং কর প্রদানে প্রক্রিয়া সহজ করা জরুরি বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোটিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ বলেন, “আন্তর্জাতিক মান বজায়ে রেখে এসএমইদের জন্য আইএফআরএস অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমাদের সকল এসএমইদের ক্ষেত্রে এটির বাস্তবায়ন বেশ চ্যালেঞ্জিং বিষয়।”
আইএফআরএস বাস্তবায়নে এসএমইদের আগ্রহী করে তুলতে তাদের দক্ষতা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. আমির উদ্দিন বলেন, “বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ভাবমূর্তি উন্নয়নে আইএফআরএস বাস্তবায়নে মনোযোগী হতে হবে। এটি বস্তবায়নে বিশেষকরে কুটির ও ক্ষুদ্র উদ্যেক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ প্রদান একান্ত আবশ্যক।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল পোগ্রামস বিভাগের পরিচালক নওশাদ মোস্তফা বলেন, “বাংলাদেশে পরিচালিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাবরক্ষনের জন্য পর্যাপ্ত হিসাবরক্ষক না থাকায়, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক হিসাবরক্ষণে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমখি হতে হয়। তবে, সরকারি-বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে এবং উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা বিবেচনায় নিয়ে এফআরসিএস বাস্তবায়নে আরো মনোযোগী হতে হবে।
তিনি জানান, বর্তমানে ৮০টি দেশে এফআরসিএস বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ হতে উদ্যোক্তাদের একাউন্টিং সফটওয়্যার প্রদান করা হলেও দক্ষতা এবং আগ্রহের অভাবের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই তা বাস্তবায়িত হয়নি।”
এফআরসিএস’র অধিকতর বাস্তবায়নে তিনি সহজ করা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ঢাকা/এনএফ/এসবি