ঢাকা     শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১২ ১৪৩১

লভ্যাংশ কম দেওয়া কোম্পানিগুলোর কাছে ব্যাখ্যা চাইবে বিএসইসি

নুরুজ্জামান তানিম ও নাজমুল ইসলাম ফারুক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২২, ২৩ নভেম্বর ২০২১   আপডেট: ০৭:৪৫, ২৪ নভেম্বর ২০২১
লভ্যাংশ কম দেওয়া কোম্পানিগুলোর কাছে ব্যাখ্যা চাইবে বিএসইসি

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩২টি কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশের নিচে লভ্যাংশ দিয়েছে। এর মধ্যে অনেক কোম্পানি ভালো ব্যবসা করেও শেয়ারহোল্ডারদের স্বল্প পরিমাণ লভ্যাংশ দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর সত্যতা যাচাই করতে ৫ শতাংশের নিচে কম লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানিগুলোর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। শিগগিরই কোম্পানিগুলোকে চিঠি দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশের নিচে লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে- ০.৫০ শতাংশ করে লভ্যাংশ দিয়েছে ৩টি কোম্পানি। কোম্পানিগুলো হলো-একটিভ ফাইন কেমিক্যালস, এএফসি এগ্রো বায়োটেক ও সমতা লেদার কমপ্লেক্স। ১ শতাংশ করে লভ্যাংশ দিয়েছে ৮টি কোম্পানি। কোম্পানিগুলো হলো- অলিম্পিক এক্সেসরিজ, রহিমা ফুড করপোরেশন, প্যাসিফিক ডেনিমস, ফার কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, হাক্কানি পাল্প অ্যান্ড পেপার মিলস, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা। ২ শতাংশ করে লভ্যাংশ দিয়েছে ১০টি কোম্পানি। কোম্পানিগুলো হলো-বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, প্রাইম টেক্সটাইল স্পিনিং মিলস, আনলিমা ইয়ার্ন ডাইং, আলিফ ম্যানুফেকচারিং, ইভেন্স টেক্সটাইল, সালভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, অ্যাডভেন্ট ফার্মা ও ফু-ওয়াং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ।

আরো পড়ুন:

এছাড়া ২.৫০ শতাংশ করে লভ্যাংশ দিয়েছে ৩টি কোম্পানি। কোম্পানিগুলো হলো- তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ও শাইনপুকুর সিরামিকস। গোল্ডেন সন দিয়েছে ২.৭৫ শতাংশ লভ্যাংশ। ৩ শতাংশ করে লভ্যাংশ দিয়েছে ২টি কোম্পানি। কোম্পানিগুলো হলো- রংপুর ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রডাক্টস এবং মোজাফ্ফর হোসাইন স্পিনিং মিলস। অগ্নি সিস্টেমস লভ্যাংশ দিয়েছে ৩.৫০ শতাংশ। ৪ শতাংশ করে লভ্যাংশ দিয়েছে ৩টি কোম্পানি। কোম্পানিগুলো হলো- বাংলাদেশ অটোকারস, বঙ্গজ, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও ইন্দো বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস।

জানা গেছে, ব্যবসায়িক মুনাফায় থাকা সত্ত্বেও সম্প্রতি বেশকিছু কোম্পানি সর্বশেষ হিসাব বছরের (২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর এবং ২০২১ সালের ৩০ জুন) নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের স্বল্প পরিমাণ লভ্যাংশ দিয়েছে। এতে সারা বছর বিনিয়োগ করে আশানুরূপ লভ্যাংশ না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন তারা। ফলে বিষয়টি শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ পরিপন্থি বলে মনে করছে কমিশন। তাই কোম্পানিগুলো মুনাফা গোপন করেছে কি না তা কেস টু কেস খতিয়ে দেখা হবে। কোম্পানিগুলোর মুনাফার তুলনায় লভ্যাংশ দেওয়ার হার যাচাই করা হবে। এছাড়া কোম্পানির উৎপাদনের সঙ্গে আয়ের সঙ্গতি আছে কিনা তাও যাচাই করা হবে। আর এসব কিছুই কোম্পানিগুলোর বার্ষিক সাধারণ সভার আগেই খতিয়ে দেখবে বিএসইসি।

শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের অভিমত, যেসব কোম্পানি মুনাফা করেও শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ কম দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। একইসঙ্গে যেসব কোম্পানি লোকসানের কারণে লভ্যাংশ দেয়নি, তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক বিএসইসি’র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সর্বশেষ হিসাব বছরে যেসব কোম্পানি লভ্যাংশ দিচ্ছে না, সেসব কোম্পানি বিএসইসির নজরদারিতে রয়েছে। লভ্যাংশ না দেওয়ার কি কারণ, সেই বিষয়ে কোম্পানিগুলোর কাছে ব্যাখা চাওয়া হবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যাতে লভ্যাংশ পেতে পারে সেজন্য কমিশন খুবই আন্তরিক। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে কমিশন করণীয় সবকিছুই করবে।’

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘যেসব কোম্পানি মুনাফা করেও শেয়ারহোল্ডারদের আশানুরূপ লভ্যাংশ দেয়নি এবং যেসব কোম্পানি লোকসানের কারণে লভ্যাংশ দেয়নি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণ দর্শানোসহ আর্থিক প্রতিবেদন তদন্ত করে দেখার দাবি জানাই। লভ্যাংশ না দেওয়ার বিষয়ে সন্তোষজনক ব্যাখ‌্যা না পেলে, কোম্পানিগুলোকে সন্তোষজনক লভ্যাংশ দিতে বাধ্য করতে হবে।’

উল্লেখ্য, ২০২০ সালে লভ্যাংশ না দেওয়ায় একাধিক কোম্পানিকে তলব করেছিলো বিএসইসি।

এনটি/এনএফ/এসবি


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়