ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

বাজেটে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কৌশলগত নির্দেশনা থাকতে হবে: সিএসই

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০০, ২ জুন ২০২৪   আপডেট: ১৫:০২, ২ জুন ২০২৪
বাজেটে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কৌশলগত নির্দেশনা থাকতে হবে: সিএসই

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেছেন, একটি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক বাজার কাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে পুঁজিবাজারের গুণগত সম্প্রসারণ এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য যথাযথ কৌশল নির্ধারণ করে দিকনির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এজন্য বেশকিছ সুপারিশ প্রস্তাব করেছে সিএসই।

রোববার (২ জুন) চট্টগ্রাম কার্যালয়ে প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিএসইর পরিচালক এমদাদুল ইসলাম, পরিচালক মোহাম্মদ নাকিব উদ্দিন খান, পরিচালক মোহাম্মদ আক্তার পারভেজ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

তিনি বলেন, আগামী ৬ জুন অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য বাজেট উপস্থাপন করবেন। আমরা আশা করি চলমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জসমূহ বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় তার সুযোগ্য অর্থমন্ত্রী একটি টেকসই ও গতিশীল বাজেট উপস্থাপন করবেন। একটি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক বাজার কাঠামো তৈরি করার ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। জাতীয় বাজেট দেশের জন্য শুধুমাত্র একটি বাৎসরিক আয় ব্যয়ের হিসাব নয়, বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত দিক নির্দেশনাও বটে। বর্তমান সরকারের কৌশলগত উন্নয়ন পরিকল্পনায় বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নিতকরণ এবং ২০৪১ সালে একটি উন্নত রাষ্ট্রে উন্নিতকরণের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তার সাথে সামঞ্জস্য রাখার জন্য একটি যথোপযুক্ত অর্থ বাজার কাঠামো তৈরি করা খুবই গুরুত্বপুর্ণ। একটি টেকসই বাজার কাঠামোর জন্য অর্থ বাজার, পুঁজিবাজার এবং অন্যন্ন প্রাসঙ্গিক কাঠামোর একটি সমন্বিত ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমাদের আর্থিক বাজার কাঠামো কার্যত অনেকাংশে ব্যাংক ব্যবস্থা তথা অর্থ বাজারের উপর নির্ভরশীল। যার বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব আমাদের অর্থনীতিতে ইতিমধ্যে প্রতীয়মান হচ্ছে। তাই আগামী বছরের জাতীয় বাজেটে পুঁজিবাজারের গুণগত সম্প্রসারণ এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য যথাযথ কৌশল নির্ধারণ করে দিকনির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

পুঁজিবাজার উন্নয়ন কৌশলপত্রে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণে সিএসইর প্রস্তাবগুলো হলো-

তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বৃদ্ধিকরণ
বর্তমানে ৩৪৯টি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আছে। স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের জন্য গুণগত মান সম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ সংখ্যা একটি সন্তোষজনক সংখ্যায় উন্নীতকরন করা প্রয়োজন।

একটি কার্যকর কর্পোরেট বন্ড মার্কেট চালুকরণ
দেশে ক্রমবর্ধমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের লক্ষ্যে একটি স্থিতিশীল শক্তিশালী বন্ড মার্কেট অতীব জরুরি। একটি শক্তিশালী বন্ড মার্কেট  গঠন ও নতুন বন্ডের তালিকাভুক্তির মাধ্যমে বাজারে পণ্যের বৈচিত্রতা আনয়নের নিমিত্তে বন্ড হতে উদ্ভুত আয়কে কর অব্যহতি প্রদান করা প্রয়োজন।

মার্কেট ক্যাপ জিডিপি রেশিও বৃদ্ধিকরণ
বাংলাদেশের অর্থনীতি সমসাময়িক দেশগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে মার্কেট ক্যাপ জিডিপি রেশিও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্থানীয় এবং বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করার একটি প্যারামিটার হিসেবে বিবেচিত হয়।

পুঁজিবাজারের জন্য বাজার মধ্যস্থতাকারী ও বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বৃদ্ধিকরণ: বর্তমানে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে দক্ষ বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের সংকট রয়েছে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যহারে কম। এই সংখ্যা একটি কাঙ্খিত স্তরে উন্নিত করা প্রয়োজন।

পুঁজিবাজারে পণ্য বৈচিত্র্যকরণ
বর্তমান পুঁজিবাজার শুধুমাত্র ইকুইটি মার্কেটনির্ভর। যার ফলে বাজারে যেমন অনাকাঙ্ক্ষিত অস্থিরতা পরিলক্ষিত হয়, তেমনি এটি  পুঁজিবাজার সম্প্রসারণের অন্তরায়। এই লক্ষ্যে কার্যকর কৌশলের মাধ্যমে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন।

এসব লক্ষ্য সমূহ স্বল্প ও মধ্যমেয়াদে বাস্তবায়ন করা গেলে একটি কার্যকর পুঁজিবাজার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে বলে মনে করে সিএসই।

এদিকে বাজেট প্রস্তবে সিএসই চেয়ারম্যান বলেন, গুণগত মান সম্পন্ন তালিকাভুক্ত কোম্পনির সংখ্যা বৃদ্ধি করতে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট কর হারের ব্যবধান নূন্যতম ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে। নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পনিকে ২ বা ৩ বছরের জন্য কর অব্যাহতি প্রদান করতে হবে। আমাদেরকে কার্যকরি বেসরকারি বন্ড মার্কেট প্রস্তুত করতে হবে। দেশের কর্পোরেট বন্ড মার্কেটের আকার খুবই ছোট। উপযুক্ত প্রণোদনার মাধ্যমে একটি যথপোযুক্ত বন্ড মার্কেট প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। বর্তমানে কর্পোরেট বন্ড মার্কেটের আকার দেশের জিডিপির তুলনায় এক শতাংশের কম। যা একটি দুর্বল আর্থিক খাতের নির্দেশক। কার্যকর বন্ড মার্কেট প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তালিকাভুক্ত বন্ডের সুদকে বিনিয়োগকারী নির্বিশেষে কর অব্যহতি প্রদান করার প্রস্তাব করছি। পাশাপাশি দেশীয় এবং বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ উৎসাহিত করণের লক্ষ্যে ব্লু বন্ড এবং গ্রিন বন্ডকে সম্পূর্ণ কর অব্যাহতিসহ কর রেয়াত প্রদান করা হলে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমাভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাপক অংশে বৃদ্ধি করা সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের জনসংখ্যার তুলনায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা খুবই কম। যা গত কয়েক বছর ধরে নিন্মমুখী ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাজারের প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য লভ্যাংশের উপর দ্বৈত কর প্রত্যাহার, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর মূলধনী লাভের ওপর কর প্রত্যাহার, মিউচুয়াল ফান্ড এবং ইটিএফ ইত্যাদি কালেকটিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কীমে কর রেয়াতি সুবিধা বৃদ্ধিকরণ এবং মূলধনী লাভের উপর কর  কর্তন করা হলে তা চূড়ান্ত করদায় হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। স্টক এক্সচেন্জ সমূহের দ্রুততার সাথে পণ্য বৈচিত্রকরনের সুবিধার্থে সদ্য প্রচলিত অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড এবং স্মল ক্যাপ বোর্ডে তালিকাভুক্ত উৎসাহিত করে লক্ষ্যে প্রথম ২ বা ৩ বছরের জন্য কর অব্যাহতি প্রদান, কমোডিটি এবং ইকুইটি ডেরিভেটিভ সহজ ভাবে চালুকরনের লক্ষ্যে বিনিয়োগকৃত হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার এর উপর সকল ধরনের কর প্রত্যাহারের ঘোষণা প্রদান এবং সহজভাবে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কমোডিটি এক্সচেঞ্জকে পাঁচ বছেরের জন্য কর অব্যাহতি প্রদান করতে হবে। এছাড়া ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি করতে গেলে পূর্বে উল্ল্যেখিত কৌশলগুলোর মধ্যে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বৃদ্ধিকরন, তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার হ্রাস করন, মূলধনী লাভকে কর অব্যাহতি প্রদান এবং লভ্যাংশ আয়কে করমুক্ত করার মধ্যমে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা উল্ল্যেখযোগ্য।

/এনটি/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়