ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

সরকারি কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসবে ডিএসই

নুরুজ্জামান তানিম  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ২ জুন ২০২৪  
সরকারি কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসবে ডিএসই

সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগ (এসওই) বা সরকারি সংস্থা ও কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করতে চায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এ জন্য সময় চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগকে স্টক এক্সচেঞ্জ চিঠি দিয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

চিঠিতে অর্থ বিভাগের সচিব মো. খায়রুজ্জামান মজুমদারের সঙ্গে ডিএসইর দুই জন কর্মকর্তা দেখা করার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জটির কর্মকর্তা দুই জন হলেন ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এজিএম সাত্তিক আহমেদ শাহ এবং বাজার উন্নয়ন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. সামিউল ইসলাম।

ডিএসইর চিঠিতে দেশের অর্থনীতি ও পুঁজিবাজার সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়, কার্যকর পুঁজিবাজার অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী এবং প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টেকসই দেশ নিশ্চিত করতে পরিবর্তনকারী ভূমিকা পালন করতে পারে। ডিএসই বাংলাদেশের প্রধান পুঁজিবাজার। যেটা উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট এবং মধ্যস্থতাকারীদের একত্রিত করতে এবং সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সারিবদ্ধভাবে কাজ করে পুঁজিবাজারকে গতিশীল রাখে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোকে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। যেটা তালিকাভুক্ত হওয়া রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোকে দায়িত্বশীল, দক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করবে। এতে কোম্পানির করপোরেট গভর্নেন্স এবং স্বচ্ছতাও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ডিএসইর বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তির প্রয়োজনীয়তা অনুসারে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এই বিষয়ে আপনার সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তির বিষয়ে ডিএসই আপনার সঙ্গে আলোচনা করতে চায়। তাই ডিএসইর দুইজন কর্মকর্তার আপনাদের সঙ্গে দেখা করে আলোচনা করা জন্য সময় ও অনুমতি প্রয়োজন। বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানান। 

গত ৯ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

দীর্ঘদিন ধরেই পুঁজিবাজারে সরকারি কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছে ডিএসই। সরকারি কোম্পানিগুলোর অনাগ্রহের কারণে কয়েক দফা চেষ্টা করেও পুঁজিবাজারে আনা সম্ভব হয়নি। অবশেষে পুঁজিবাজারের মাধ্যমে অর্থনীতিকে গতিশীল করতে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তালিকাভুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে অর্থ বিভাগকে সহযোগিতা করতে চায় ডিএসই। এরই ধারাবাহিকতায় সচিবের সঙ্গে দেখা করতে চায় তারা।

প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেওয়ার চার দিন আগে অর্থাৎ ৫ মে সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি লক্ষ্যে সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজন করতে চেয়ে অর্থ বিভাগকে চিঠি দেয় ডিএসই। সরকারি কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে এ আয়োজন করতে চায় ডিএসই।

বাজার প্রতিযোগিতামূলক করতে কোন কোন সম্ভাবনাময় সরকারি প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা যায়, তা নিয়ে কাজ করতে অর্থ বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার আগে সম্ভাবনাময় সরকারি কোম্পানিগুলোকে যথাযথ যাচাই-বাছাই করে নির্বাচন করতে বলা হয়েছে। বিষয়টি চূড়ান্ত করতে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাবে অর্থ বিভাগ। এ কাজে অর্থ বিভাগকে প্রস্তাবনা দিয়ে সহযোগিতা করতে চায় ডিএসই। কীভাবে প্রস্তাবনা দেওয়া যায়, সেজন্য ডিএসইর ম্যানেজমেন্টকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ব্রোকারেজ হাউজদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনকেও (বিএমবিএ) এ বিষয়ে প্রস্তাব দিতে বলেছে ডিএসই। শিগগিরই এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানো হবে। এ বিষয়ে সম্মিলিতভাবে অর্থ বিভাগকে সহযোগিতা করবে ডিএসই।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে মাত্র ২০টি সরকারি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এগুলোর বাজার মূলধন ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান। এরপর নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও আর কাজে আসেনি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো হলো, এটলাস বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড (বিডি সার্ভিস), বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস কোম্পানি (বিএসসিসিএল), বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ইস্টার্ন কেবলস, ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইবিসি), যমুনা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ন্যাশনাল টিউবস, পদ্মা অয়েল, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, রূপালী ব্যাংক, শ্যামপুর সুগার মিলস, তিতাস গ্যাস, উসমানিয়া গ্লাস সিট ফ্যাক্টরি ও জিলবাংলা সুগার মিলস।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু রাইজিংবিডি-কে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী পুঁজিবাজার উন্নয়নের সরকারি কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির যে নির্দেশ দিয়েছেন তা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আগে থেকে ডিএসই কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির লক্ষ্যে সচেতনতামূলক কর্মসূচি আয়োজন করতে চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগকে চিঠি দিয়েছি। এছাড়া, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারে, এমন সম্ভাবনাময় সরকারি কোম্পানিগুলোকে যাচাই-বাছাই করার ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগকে প্রস্তাবনা দিয়ে সহায়তা করবে ডিএসই। এজন্য ডিএসই ম্যানেজমেন্ট, ডিবিএ ও বিএমবিএ সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। আগামী সপ্তাহে এ সংক্রন্ত প্রস্তাব প্রস্তুত করে প্রধানমন্ত্রীসহ অর্থ বিভাগের কাছে পাঠানো হবে।’ 

ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়