তদন্ত কমিটি গঠন
অলটেক্সের সম্পদ ও ব্যবসায়িক সক্ষমতা খতিয়ে দেখবে বিএসইসি
পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সম্পদ, ব্যবসা ও আর্থিক সক্ষমতাসহ সার্বিক বিষয় যাচাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এ বিষয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন—বিএসইসির যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল হক, সহকারী পরিচালক মাহমুদুর রহমান ও মো. মাহমুদুল হাসান।
তদন্তের বিষয়টি অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম রাইজিংবিডিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিএসইসি থেকে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পুঁজিবাজার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সার্বিক বিষয় তদন্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করে বিএসইসি। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ধারা ২১ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন কোম্পানিটির সার্বিক বিষয়ে তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএসইসির যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল হক, সহকারী পরিচালক মাহমুদুর রহমান এবং মো. মাহমুদুল হাসানকে তদন্ত কমিটিতে রাখ হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তাদের এ আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। এ সংক্রান্ত একটি তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।
তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনায় বিএসইসির নির্দেশনা
তদন্ত কমিটি অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সম্পদ, কারখানা এবং সরঞ্জাম যাচাই করবে।
মজুদ পণ্য এবং বিক্রিত পণ্যের খরচ যাচাই করবে তদন্ত কমিটি। সেই ঙ্গে এর সত্যতা নিশ্চিত করবে।
কারখানা নির্মাণে পণ্যসামগ্রী কেনার জন্য অগ্রিম টাকা পরিশোধ করা এবং পণ্য বিক্রি করে যে আয় হয়েছে, তা যাচাই করবে।
জমি ও কারখানার সরঞ্জামের পুনর্মূল্যায়ন সঠিকভাবে হয়েছে কি না এবং বিলম্বিত কর (ডেফার্ড ট্যাক্স) ইস্যুর সত্যতা যাচাই করবে।
দীর্ঘ মেয়াদী ও স্বল্প মেয়াদী ঋণ এবং তা পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই করবে। একইসঙ্গে সহযোগী কোম্পানির মধ্যে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড যেসব লেনদেন করেছে, তার সত্যতা যাচাই করবে।
ভবিষ্যতে কোম্পানিটি ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবে কি না, তা যাচাই করবে।
কোম্পানিটির ব্যবসা পরিচালনায় সক্ষমতা সম্পর্কিত অন্য যে কোনো বিষয় যাচাই করবে তদন্ত কমিটি।
সম্পদ মূল্য বৃদ্ধি
চলতি বছরের ৩ সেপ্টেম্বর অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড তাদের সম্পদ পুনর্মূল্যায়নের তথ্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই-সিএসই) ওয়েবসাইট প্রকাশ করেছে। সম্পদ পুনর্মূল্যায়নের পর কোম্পানিটির সম্পদমূল্য বেড়েছে ৮১ কোটি টাকা। নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান এ কাশেম অ্যান্ড কোং অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের ভূমি ও ভূমি উন্নয়ন পুনর্মূল্যায়ন করেছে। তাতে কোম্পানিটির জমি সংক্রান্ত সম্পদমূল্য ১৩৭ কোটি ৩৯ লাখ ৭ হাজার ৭৩ টাকা থেকে বেড়ে ২১৮ কোটি ৮২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ পুনর্মূল্যায়নের পর কোম্পানিটির সম্পদমূল্য বেড়েছে ৮১ কোটি ৪২ লাখ ৯২ হাজার ৯২৭ টাকা। বেড়ে যাওয়া সম্পদমূল্য অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের নিট অ্যাসেট ভ্যালুতে (এনএভি) যুক্ত হবে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি।
কার্যালয় ও কারখানা পরিদর্শন
ইতোমধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জকে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রধান কার্যালয় ও কারখানা সরেজমিন পরিদর্শনেরও নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। গত ২৬ মার্চ বিএসইসি এ নির্দেশনা জারি করে। দীর্ঘ সময় ধরে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকা, বার্ষিক সাধারণ সভা ( এজিএম) করতে ব্যর্থ হওয়া এবং বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে না পারা দুর্বল এ কোম্পানির সামগ্রিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম যাচাই করতে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা
২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ‘নো ডিভিডেন্ড’ বা লভ্যাংশ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সর্বশেষ ৩০ জুন, ২০২৪ হিসাববছরে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে ০.০১ টাকা। আগের হিসাববছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল (২.৭০) টাকা। ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৯.৯২ টাকা। আগামী ১৫ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) হবে। এ লক্ষ্যে কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডার নির্বাচনে রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০ নভেম্বর।
সার্বিক পরিস্থিতি
অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ঋণে জর্জরিত একটি প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরে লভ্যাংশ দেওয়ার নাম-গন্ধও নেই। আবার অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের লেনদেন হচ্ছে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বার্ষিক সাধারণ সভা করতে ব্যর্থ হওয়ায় ছয় মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এছাড়া, সম্পদের চেয়ে দায় বেশি থাকায় এ কোম্পানিকে চলতি বছরের গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হয়।
অতিরিক্ত ঋণে জর্জরিত অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ২০১৬ সালে বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা এ কোম্পানিকে ২০২১ সালে ১০ বছরের জন্য ভাড়া নেয় চীনা কোম্পানি হুয়াক্সিন টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এছাড়া, কোম্পানিটি একাধিকবার উৎপাদন শুরু করার তথ্য প্রকাশ করলে পুনরায় আবার তা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রথম দফায় ২০২০ সালের ২ নভেম্ববর থেকে ৪৫ দিন কোম্পানিটির কারখানা বন্ধ থাকে। এরপর গত ২০ ডিসেম্বর থেকে আরও ১ মাস কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটি পুনরায় উৎপাদনে ফিরে।
প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৯৬ সালে। দীর্ঘদিন ধরে বাজারে থাকলেও ২০১৬ ও ২০২২ সালে এটি যথাক্রমে ৪.০ শতাংশ ও ১.০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এর দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৪ কোটি ৩২ লাখ ও স্বল্প মেয়াদি ঋণ ২৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির পুঞ্জীভূত লোকসান দাাঁড়িয়েছে ২৫ কোটি ১ লাখ টাকা। অথচ, শেয়ারবাজারে এটির দর বাড়ছে অস্বাভাবিক গতিতে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কোম্পানি সচিব মো. জিয়াউল হক রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেছেন, ‘‘আমরা বিএসইসি থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। চিঠিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেহেতু, বিএসইসি তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে, সেহেতু এ বিষয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।’’
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেছেন, ‘‘অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সার্বিক পরিস্থিতি যাচাই করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে কমিটি তাদের প্রতিবেদন বিএসইসিতে জমা দেবে। এটা কমিশনের রুটিন ওয়ার্ক।’’
ঢাকা/এনটি/রফিক