স্ত্রী-বোনসহ সাঈদ খোকনের বিও হিসাব অবরুদ্ধ
ঢাকা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন, তার স্ত্রী ও ছোট বোনের পরিচালিত বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ রাখতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) নির্দেশ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযুক্তদের নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবসমূহে অস্বাভাকি লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। উক্ত অভিযোগ সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের পরিচালিত বিও হিসাবের সকল ধরনের লেনদেন বন্ধ বা অবরুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি বিএসইসিকে অনুসন্ধানের স্বার্থে বিও হিসাবের লেনদেন অবরুদ্ধকরণ বা স্থগিতকরণ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছে দুদক।
যাদের বিও হিসাব স্থগিত করা হয়েছে তারা হলেন ঢাকা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন, তার স্ত্রী ফারহানা সাঈদ এবং তার বোন শাহানা হানিফ।
দুদকের সহকারী পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এতদ্বারা জানানো যাচ্ছে যে, উল্লিখিত অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য উপ-পরিচালক মো. মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে সহকারী পরিচালক আসাদ্দুজ্জামান ও সহকারী পরিচালক মো. নাজমুল ইসলামের সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।’
চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, ‘‘শাহানা হানিফ এবং ফারহানা সাঈদের নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবসমূহে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। উক্ত অভিযোগ সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে উল্লিখিত ব্যক্তির নামে সিডিবিএলের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানের সাথে সাঈদ খোকন, তার স্ত্রী ফারহানা সাঈদ এবং তার বোন শাহানা হানিফের থাকা বিও হিসাবের সব ধরনের লেনদেন বন্ধ বা অবরুদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন। এ অবস্থায়, উক্ত অভিযোগ অনুসন্ধানের স্বার্থে অর্থের স্থানান্তর রোধে উল্লিখিত ব্যক্তির নামে সব বিও হিসাবের লেনদেন অবরুদ্ধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আপনাকে (বিএসইসি) বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।”
এদিকে সিডিবিএলকে দেওয়া বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “উপযুক্ত বিষয়ে অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আদালত/বিএফআইইউ/সুদক/আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক প্রেরিত আদেশের চাহিদা অনুযায়ী সূত্রে উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গের বিষয়ে প্রযোজ্য ক্ষেত্র অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসিকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল।”
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম রাইজিংবিডিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই তিনজনের ব্যাংক হিসাব ও বিও হিসাবে সন্দেহজনক লেনদেন খতিয়ে দেখতে অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
লেনদেন স্থগিত করার এ নির্দেশের ক্ষেত্রে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালার সংশ্লিষ্ট ধারা প্রযোজ্য হবে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া যেসব বিও হিসাব স্থগিত করা হয়েছে, সেগুলোর সংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল, যেমন: হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ফরম ও হিসাব খোলার তারিখ থেকে হালনাগাদ লেনদেন বিবরণীর তথ্য চাইতে পারে দুদক।
সাঈদ খোকনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
এর আগে গত ২৩ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়া দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাঈদ খোকন ও তার মা শাহানা হানিফ, স্ত্রী ফারহানা সাঈদ এবং জাবেদ আহমেদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।
এদিন মামলার অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক (মানিলন্ডারিং) মো. মাসুদুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মীর আহাম্মদ আলী সালাম শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন।
আবেদনে বলা হয়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট শাহানা হানিফ, সাঈদ খোকন ও জাবেদ আহমেদের নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবগুলোতে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনসহ অন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাদের পদের অপব্যবহার করে ও রাজনৈতিক পরিচয়ের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ও বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন মর্মে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। দেশের বর্তমান বাস্তবতায় শাহানা হানিফ, মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, জাবেদ আহমেদ ও ফারহানা সাঈদ দেশ ত্যাগ করতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমন রহিত করা আবশ্যক।
সাঈদ খোকনের বন্ড, ঋণপত্র ও শেয়ারে বিনিয়োগ
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৬ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন সাঈদ খোকন। নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ব্যবসায়ী উল্লেখ করে সাঈদ খোকন হলফনামায় লিখেন, ২০১৫ সালে ডিএসসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাঈদ খোকনের কাছে নগদ ছিল ১ কোটি ১০ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এবার তার নগদ রয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ওই সময় তার স্ত্রীর হাতে ৩০ লাখ টাকা নগদ থাকলেও এখন রয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এছাড়া, সাঈদ খোকনের বন্ড, ঋণপত্র ও শেয়ারে বিনিয়োগ রয়েছে ৬৫ কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
ঢাকা/এনটি/এসবি