অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ডিএসইর সাবেক সিটিওকে পুনর্বহালের উদ্যোগ
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) মো. জিয়াউল করিমকে পুনরায় তার পদে বহাল করার উদ্যোগ নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্দেশে বিএসইসি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২০২২ সালে ডিএসইর ট্রেডিং সিস্টেমে কারিগরি সমস্যা হওয়ার অযুহাতে দেখিয়ে প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে বাধ্যতামূলক ছুটিতে প্রেরণ করা হয় বলে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন জিয়াউল করিম। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি তদন্তের আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
এ তদন্তের আদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, একজন সিনিয়র সহকারী সচিব এবং ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পাঠানো হয়েছে।
গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন-বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ শামসুর রহমান, উপ-পরিচালক মুহাম্মাদ ওয়ারিসুল হাসান রিফাত এবং সহকারী পরিচালক নাভিদ হাসান খান।
জানা গেছে, ডিএসইর ট্রেডিং সিস্টেমে কারিগরি সমস্যা হওয়ার অজুহাতে দেখিয়ে প্রচলিত আইন ভেঙে তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে প্রেরণ করা হয় বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বরাবর আবেদন করেছেন মো. জিয়াউল করিম। ওই আবেদনটি আমলে নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিএসইসিকে সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর ডিএসইর সিটিও মো. জিয়াউল করিমকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। ওই দিন কমিশন সভা করে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বিএসইসি এমন সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সময় বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল-ইসলাম।
কমিশন সভা শেষে বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন সময়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে নিরবচ্ছিন্ন লেনদেন বাধাগ্রস্ত হয় এবং পূর্বেও বিভিন্ন কমিটি ডিএসইর আইটি কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে। তাই পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কমিশন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এছাড়া কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, এ তদন্ত সংক্রান্ত বিষয়ে সম্পূর্ণ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ডিএসইর সিটিও বাধ্যতামূলকভাবে ছুটিতে থাকবেন।
বিএসইসির তদন্তের আদেশ
“অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের গত ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) মেজর (অব.) মো. জিয়াউল করিমের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিশনকে অনুরোধ করা হয়েছে।
জিয়াউল করিম, গত ০৪-০১-২০১৬ যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেজের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তার নিয়মিত পদে যোগদান করেন এবং ডিএসই সার্ভিস রুল অনুযায়ী চাকরির মেয়াদ ২৯-১০-২০২৭ পর্যন্ত বলবৎ এবং যেহেতু ডিএসই এর ট্রেডিং সিস্টেমে কারিগরি সমস্যা হওয়ার সুযোগ নিয়ে প্রচলিত আইন ডেঙে তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে প্রেরণ করা হয়। জিয়াউল করিম, ডিএসই এর প্রধান কর্মকর্তার নিয়মিত (স্থায়ী) পদে পুনর্বহালের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বরাবর আবেদন করেছেন।”
“এ বিষয়ে তদন্তের নিমিত্তে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২১ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন তিন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। উক্ত তদন্ত কমিটি এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৩০ দিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করতে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করবে।”
নতুন সিটিও নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
এদিকে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর চলতি বছরের ২৭ নভেম্বর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও), প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা (সিওও) এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ডিএসই। এরই ধরাবাহিকতায় ডিএসইর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ গত ৩ অক্টোবর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের দায়িত্ব গ্রহণ করে। এর নেতৃত্বে আছেন চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম। দায়িত্ব গ্রহণের পরেই তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দীর্ঘদিন শূন্য থাকা শীর্ষস্থানীয় তিনটি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেন। তারই অংশ হিসেবে ডিএসইর তিন পদে নিয়োগের জন্য জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রত্যেকটা পদের জন্য আবেদনের শেষ তারিখ ছিল ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর সাবেক প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) মো. জিয়াউল করিম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘আমি পদত্যাগ করিনি। আমাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে প্রেরণ করা হয়। আমার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। তখন ডিএসই ও বিএসইসতে দায়িত্বে ছিলেন, তারা আমার কথা শুনেননি। সার্ভিস রুল অনুযায়ী ২০৩২ সাল পর্যন্ত আমার চাকরির মেয়াদ রয়েছে। এজন্য আমি ডিএসইর সিটিওর স্থায়ী পদে পুনর্বহালের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে আবেদন করেছি। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষতে অর্থ মন্ত্রণালয় বিএসইসিকে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছে। ইতোমধ্যে বিএসইসি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কার্যক্রম এখনও চলছে।’’
জিয়াউল করিম ডিএসইতে যোগদানের আগে তিনি ফাইবার অ্যাট হোম কোম্পানির (Fiber@Home Ltd.) বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন। জিয়াউল করিম ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সিগন্যাল কোরে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি প্রায় ২৪ বছর দক্ষতা ও সাফল্যের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন।
ঢাকা/এনটি/এসবি