ঢাকা     শুক্রবার   ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২০ ১৪৩১

বিমা গ্রাহকদের খুদে বার্তা পাঠানোর প্ল্যাটফর্ম প্রশ্নবিদ্ধ

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩০, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ২২:৩১, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
বিমা গ্রাহকদের খুদে বার্তা পাঠানোর প্ল্যাটফর্ম প্রশ্নবিদ্ধ

বিমা গ্রাহককের পলিসি সংক্রান্ত তথ্য জানাতে মোবাইল ফোনে এসএমএস ( খুদে বার্তা) পাঠানোর জন্য চালু করা হয়েছে ইউনিফাইড মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম (ইউএমপি)। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারীর বিশেষ আগ্রহে ২০২০ সালে পুরোদমে চালু করা হয় এই প্ল‌্যাটফর্ম। মেসেজ পাঠানোর এই কাজটি দেওয়া হয়েছে দুয়ার সার্ভিসেস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে। কোনো প্রকার দরপত্র আহ্বান ছাড়াই অস্বাভাবিক মূল্য নির্ধারণ করে প্রতিষ্ঠানটিকে এই কাজ দেওয়া হয়। এর ফলে ২০২০ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বিমা কোম্পানিগুলোর শত কোটি টাকা চলে গেছে দুয়ার সার্ভিসেস পকেটে।

তৃতীয় পক্ষ একটি প্রতিষ্ঠানের হাতে গ্রাহকের সব তথ্য তুলে দেওয়া ও এসএমএস এর মূল‌্য নিয়ে বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলো আপত্তি তুললেও চাপ প্রয়োগ করে তা কার্যকর করা হয়।

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকেই বিমা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে ইউএমপি বাতিলের দাবি জানানো হলেও তাতে কর্ণপাত করছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। তবে চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে বিমা কোম্পানিগুলো ইউএমপি সেবার বিপরীতে অর্থ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

আরো পড়ুন:

বিমা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নিজ উদ্যোগে গ্রাহকদের বিমা পলিসি সংক্রান্ত তথ্য জানাতে মোবাইল ফোনে যে এসএমএস দেওয়া হয়, তার জন্য ব্যয় হয় ০.৪৪ টাকা। সেখানে ইউএমপির নামে দুয়ার সার্ভিস দিয়ে যে ম্যাসেজ দেওয়া হচ্ছে, তার জন্য কোম্পানিগুলো থেকে ৩.৯০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। অর্থৎ কয়েকগুণ বেশ অর্থ নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া দরপত্র ছাড়াই এভাবে দুয়ার সার্ভিসকে কাজ দেওয়া কাজ দেওয়া বড় ধরনের অনিয়ম বলে মনে করে সংশ্লিষ্টরা।

তারা আরও বলছেন, গ্রাহকদের এসএমএস দেওয়ার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোনোভাবেই বিমা কোম্পানির কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে পারে না। এটা বিমা আইন ২০১০ এর লঙ্ঘন। বিমা কোম্পানিগুলো শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে। কিন্তু চাপ প্রয়োগ করে এই প্রকল্প চালু করা হয়। এর মধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ইউএমপি গ্রাহকবান্ধব। এটা বন্ধ করা হবে না। বিমা কোম্পানিগুলোর অনিয়ম বিশৃঙ্খলা করার জন্য ইউএমপি বাতিলের দাবি করা হচ্ছে। বিমা কোম্পানিগুলো শুরু থেকেই ইউএমপির বিরোধিতা করছে। কিন্তু বিমা কোম্পানিগুলোর বিরোধিতা আমলে না নিয়েই আইডিআরএ’র তৎকালীন চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারী ইউএমপি চালু করতে ২০১৯ সালের ২১ নভেম্বর তিন পৃষ্ঠার একটি চিঠি দেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে। মুস্তফা কামালও তাতে অনুমোদন দেন। অনুমোদনের আগেই এটি চালু হয়। তবে ২০২০ সালের শুরুর দিকেই পুরোদমে চালু হয়ে যায় ইউএমপি।

এ প্রগতি লাইফের সিইও মো. জালালুল আজিম বলেন, ‘‘এই সার্ভিসটা (ইউএমপি) যেভাবে আসছে, তা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আসেনি। কারণ সরকারের যেকোনো জিনিস ক্রয় করতে গেলে, সরকারের ক্রয় নীতিমালা আছে। এই নীতিমালা অনুযায়ী পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ দিতে হবে, টেন্ডার করতে হবে এবং কমপক্ষে তিনটি টেন্ডার পাওয়ার পর, সেখান থেকে সবকিছু বিচার-বিবেচনা করে কাজ দিতে হয়। কিন্তু এখানে কিছুই করা হয়নি। দুয়ার সার্ভিস নামে একটি প্রতিষ্ঠান কোথা থেকে এসে বসে গেছে। এটা নিয়ে তখনই আমরা আপত্তি করেছি।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘ইউএমপি প্ল্যাটফর্মের যে কাজের কথা বলা হচ্ছে, সেই কাজ কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ না। এই কাজ করবে কোম্পানি। যেমন আপনার ব্যাংক হিসাব আছে, আপনি ব্যাংক হিসাবে লেনদেন করলে এসএমএস কে দেয়? এসএমএস দেয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক কি দেয়? বাংলাদেশ ব্যাংক দেয় না। এখানে (বিমা কোম্পানিতে) একজন গ্রহক টাকা জমা দিলো, তাকে এসএমএস দেবে কোম্পানি। আইডিআরএ দেবে না।’’

আইডিআরএ’র মুখপাত্র মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘‘জীবন বিমা কোম্পানিগুলো যেটার বিরোধিতা করবে, সেটার পক্ষ অবলম্বন করা আমাদের মৌলিক দায়িত্ব। কারণ তারা সব সময় অনিয়ম বিশৃঙ্খলা প্রশ্রয় পাওয়ার জন্য ব্যস্ত থাকে। আমাদের যেসব পদক্ষেপ তাদের অনিয়ম করার বিপক্ষে যায়, সেখানেই তারা শক্ত করে বাতিল করার চেষ্টা করে। ইউএমপি বাতিল হবে না, এটা চলবেই। জনবান্ধব একটি বিমা খাত প্রতিষ্ঠান করতে হবে এটা আমাদের অঙ্গীকার।’’

ঢাকা/এনটি/এসবি

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়