সোনালী সিকিউরিটিজের কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি
পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসইর) সদস্যভুক্ত ট্রেকহোল্ডার সোনালী সিকিউরিটিজ লিমিটেডের (ট্রেক নম্বর-২৬১) বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ আইন যথাযথভাবে পরিপালন না কারর অভিযোগ উঠেছে। সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী, ব্রোকারেজ হাউজটির নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) পরিশোধিত মূলধনের ৭৫ শতাংশের বেশি রাখার বিধান রয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে এনএভি কম থাকায় প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটিকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
বিএসইসির গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন-বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক উম্মে সালমা, সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান এবং সহকারী পরিচালক মো. রায়হান কবির।
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি তদন্তের আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। ওই তদন্তের আদেশ সোনালী সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম রাইজিংবিডিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিগত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
বিএসইসির আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে সোনালী সিকিউরিটিজ লিমিটেডের কার্যক্রম তদন্ত করা প্রয়োজন। নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, প্রতিষ্ঠানটির নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) পরিশোধিত মূলধনের ৭৫ শতাংশের কম রয়েছে। ২০২৩ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে প্রতিষ্ঠানটির এনএভি পরিশোধিত মূলধনের ৬৯.২০ শতাংশ রয়েছে। যেখানে প্রতিষ্ঠানটির এনএভি সর্বদা পরিশোধিত মূলধনের ৭৫ শতাংশের উপর রাখতে হবে। এ শর্ত পরিপালন করতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট) রুলস ২০২০ এর রুল ৭(২) এর অধীনে ট্রেক সার্টিফিকেট বাতিল করার বিধান রয়েছে।
আদেশে আরো উল্লেখ রয়েছে, তাই সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নং-১৭) এর ধারা ২১ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ আইন, ১৯৯৩-এর ধারা ১৭(ক) এর প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগে কমিশন উল্লিখিত বিষয়ে একটি তদন্ত করার আদেশ জারি করেছে। এজন্য বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক উম্মে সালমা, সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান এবং মো. রায়হান কবিরকে উক্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য কমিশন নিয়োগ দিয়েছে। সেই সঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তাদের এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হলো।
উল্লেখ্য, সোনালী সিকিউরিটিজ লিমিটেড পুঁজিবাজারে পেপার ও প্রিন্টিং খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেডের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে টেরা রিসোর্সেস ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জিয়া ইউ আহমেদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি ‘অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি’ গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। গঠিত এ কমিটি পুঁজিবাজারের বিগত সময়ের অনিয়ম, কারসাজি ও দুর্নীতি অনুসন্ধান করবে।
গঠিত তদন্ত কমিটিকে যেসব বিষয় খতিয়ে দেখার কথা বলা হয়েছে-তার মধ্যে সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেডের নাম রয়েছে। কোম্পানির অনিয়ম ও কারসাজি এবং ২০২০ সালে কোম্পানিকে ওভার-দ্য-কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেট থেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান বোর্ডে পুনরায় তালিকাভুক্তকরণ সংক্রান্ত অনিয়ম ও কোম্পানির শেয়ারমূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
ঢাকা/এনটি/এসবি