ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

জবির শতাধিক শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত

তমাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৬, ১ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জবির শতাধিক শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত

জবি প্রতিনিধি : দেশজুড়ে প্রকোপ বেড়েছে ডেঙ্গুর। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শতাধিক শিক্ষার্থী। ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে জবির শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে নেয়া হচ্ছে না কার্যকর ভূমিকা। এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

জবি মেডিক্যাল সেন্টার ও জবি সংক্রান্ত কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপের জরিপ থেকে জানা যায়, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আইনের ১১ জন, সমাজবিজ্ঞানের ৭ জন, প্রাণিবিদ্যার ৬ জন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ৫ জন, নৃবিজ্ঞানের ৫ জন; ফার্মেসি, ভূগোল ও পরিবেশ, ইসলামিক স্টাডিজ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ৪ জন করে; শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ও গণিত বিভাগের ৩ জন করে, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন, মার্কেটিং, পদার্থবিদ্যা, নাট্যকলা, মনোবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিদ্যা, অর্থনীতি ও লোকপ্রশাসন বিভাগের ২ জন করে; ইংরেজি, সমাজকর্ম, অ্যাকাউন্টিং, সংগীত, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান, রসায়ন, বাংলা, অনুজীব বিজ্ঞান, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন, দর্শন, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, ইংরেজি, সিএসই ও পরিসংখ্যান বিভাগের ১ জন করে শিক্ষার্থী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে।

এসব শিক্ষার্থীর অধিকাংশই চিকিৎসা নিচ্ছেন মিটফোর্ড, সুমনা হাসপাতাল, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে। শিক্ষার্থীদের একাংশের পক্ষ থেকে ছুটির আবেদন করা হলেও নাকচ করে দেন উপাচার্য।

পুরান ঢাকায় ক্যাম্পাসের আশপাশে বিভিন্ন বাসায় থাকতে হয় জবি শিক্ষার্থীদের। পুরান ঢাকায় অপরিচ্ছন্নতা, জলাবদ্ধতার কারণে ডেঙ্গুর আতঙ্কে রয়েছেন জবির শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি সন্ধ্যায় মশা নিধনে স্প্রে করা হচ্ছে। কিন্তু ক্যাম্পাসের অধিকাংশ স্থান  অপরিচ্ছন্ন ও বিভিন্ন স্থানে পরিষ্কার পানি জমে থাকায় মশার প্রকোপ রয়েছে।

ডেঙ্গু আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের ২০-৫০ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। এছাড়াও ডেঙ্গু পরীক্ষা করেছে অধিকাংশ শিক্ষার্থী। সব মিলিয়ে দ্বিমুখী সংকটে শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার। শিক্ষার্থীরা বলছেন, পূর্ণাঙ্গ মেডিক্যাল সেন্টার থাকলে চিকিৎসার খরচ কম হতো তাদের।

কিছুদিন আগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১৩তম আবর্তনের শিক্ষার্থী অমিত কুমার। তিনি বলেন, আমার প্রায় ২০ হাজার টাকা চিকিৎসার জন্য খরচ হয়েছে।

ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে মাথাব্যথা নেই প্রশাসনের। দীর্ঘদিনেও পরিষ্কার করা হয় না ড্রেনগুলো। পানি জমে থাকে প্রায় সবগুলো ড্রেনেই। সবচেয়ে নোংরা অবস্থা ইডটিলিটি ভবনের দুই গেটের ড্রেনের। এমনকি জবিতে অবস্থিত দেশের একমাত্র গুচ্ছ ভাস্কর্যটিতেও সবসময় জমে থাকে পরিষ্কার পানি। ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির পরও পানি অপসারণের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

কলাভবনে অবস্থিত মসজিদের সামনে বসানো হয়েছে ডাস্টবিন। ডাস্টবিন থেকে আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে ডাস্টবিনের বাইরে। নতুন ভবনের বেজমেন্টে সারা বছরই পানি জমে থাকে। বেজমেন্টে ডেঙ্গুর ভয়ে মোটরসাইকেল-গাড়ি রাখে না কেউ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারেও মিলছে না ডেঙ্গুর কোনো সেবা। ফলে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ডেঙ্গুর ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও রক্ত পরীক্ষার সুযোগ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

মেডিক্যাল সেন্টার থেকে বলছে, প্যাথলজিস্ট না থাকায় ডেঙ্গু পরীক্ষা সম্ভব নয়।

বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসা কর্মকর্তা মিতা সবনম বলেন, প্রতিদিন ৪০-৬০ জন শিক্ষার্থী জ্বর নিয়ে আসছেন। যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডেঙ্গুর জ্বরের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে তাদের পরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছি।

ডেঙ্গু পরীক্ষার সুযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে প্যাথলজিস্ট নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকেও প্যাথলজিস্ট নিয়োগের বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

ডেঙ্গুর প্রকোপের কারণে সকল পরীক্ষা বন্ধ করেছে আইন বিভাগ। এ বিষয়ে আইন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সরকার আলী আককাস বলেন, আমার ছাত্ররা কষ্ট করে থাকে, পরীক্ষার কারণে যদি তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিছুদিন পরও তো পরীক্ষা নিতে পারি।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, জবিতে কোনো মেডিক্যাল সেন্টার নেই। যেটা আছে সেটা প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র। কারো ভর্তি করার প্রয়োজন হলে আমরা ন্যাশনাল মেডিক্যালে রেফার করি।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ আগস্ট ২০১৯/তমাল/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়