শিক্ষা পরিবারের আনন্দময় দিন
আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে খুলেছে স্কুল-কলেজ। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে স্কুল খোলার কার্যক্রমের সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এরপর তিনি লেক সার্কাস স্কুল পরিদর্শন করেন।
অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ জাকির হোসেন মতিঝিল আইডিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। সব প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি। সবার মাঝে আনন্দের ছাপ। মনে হয় বহুদিনের হারানোর কোন জিনিস যেন সবাই ফিরে পেয়েছেন।
নিজেদের প্রিয় পরিচিত প্রাঙ্গণে ফিরতে পেরে ভীষণ খুশি শিক্ষার্থীরা। সন্তানদের আনন্দ দেখে খুশি অভিভাবকরাও। আনন্দের ছাপ শিক্ষকদের চোখে মুখেও। বহুদিন পর সন্তান তুল্য প্রিয় শিক্ষার্থীদের দেখে খুশি তারা।
রোববার সরেজমিনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের বাঁধভাঙ্গা উল্লাশ। নিজেদের পরিচিত বন্ধুদের পেয়ে সবাই কতই না খুশি। ক্লাসের পাশাপাশি খেলাধুলা, নাচগান, আনন্দ উল্লাসে উদযাপনে কাটে স্কুলের প্রথম দিনটি।
রাজধানীর ভিকারুন্নিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার মুক্তা বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে বাসায় বসে থাকতে থাকতে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা ছিল। স্কুলে ফিরে এসে কি যে ভাল লাগছে বলে বুঝাতে পারব না।
আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মাইশা তামান্না জানান, আজকে বহুদিন পর ক্লাসের বান্ধবীদের ফিরে পেয়েছি। যদিও অনেকের সাথে ফোনে যোগাযোগ ছিল তবে সবাইকে সামনা সামনি দেখার যে আনন্দ তা অন্যরকম। সরকার স্কুল খুলে দিয়েছে। এজন্য ধন্যবাদ।
উদয়ন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী সরোয়ার জামান শাকিল বলেন, কলেজ খুলে দেওয়ার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ। দীর্ঘদিন পর প্রিয় প্রতিষ্ঠানে এসেছি। শিক্ষক, বন্ধুদের সাথে দেখা হচ্ছে। আর যেন বন্ধ না করে এ অনুরোধ রইল।
তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছোট্ট শিশু সাবিকুন নাহার নিপা বলছিল, আম্মুর সঙ্গে ক্লাসে এসেছি। সবাইকে দেখে ভাল লাগছে।
অভিভাবক আরজু আক্তার রিপা বলেন, সত্যি বলতে আরো আগেও স্কুল-কলেজ খোলা দরকার ছিল। বাচ্চাকে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করে কোন পরীক্ষাই দেওয়াতে পারিনি। সরাসরি ক্লাসও পায়নি খুব একটা। ও এখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠেছে। কিন্তু স্কুল তার জন্য এখনো অনেক অচেনাই রয়ে গেছে।
আরেক অভিভাবক আবু ওবায়দা বলেন, অনেক দিন পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। বাচ্চারা তাদের রেগুলারিটির মধ্যে আসবে আশা করছি। সরকারকে অনুরোধ করবো আর যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না করা হয়। অতিরিক্ত প্রেশার ক্রিয়েট না করে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে যেন সবকিছু চালিয়ে নেওয়া হয়।
জোনায়েদ সিদ্দিক নামের এক অভিভাবক বলেন, স্কুল খোলার ঘোষণার পরপরই প্রতিষ্ঠান বেতন, ফির নোটিশ দেওয়া শুরু করেছে। এটি সরকারের উচ্চপর্যায়ে নজরে আনতে হবে।
প্রথমদিনের স্কুল খোলার কার্যক্রম পরিদর্শন করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, করোনা সংক্রমণের হার কিছুটা কমে আসায় আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবো, যদি পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে যায় আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। এক্ষেত্রে জোন ভিত্তিতে হয়তো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা যেতে পারে। তবে আশা করছি, সেটির আর প্রয়োজন হবে না।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, আজ থেকে দেশের সব স্কুল-কলেজ খুলে দিলেও বন্যা কবলিত এলাকায় কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সেগুলো চালুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ঢাকা/ইয়ামিন/এমএম