৫ শতাংশ প্রণোদনা: অনিশ্চয়তায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা
দেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় আপৎকালীন বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার সুপারিশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে এ প্রণোদনা দেওয়া হবে। আগামী জুলাই থেকে এটি কার্যকর হবে।
তবে প্রশ্ন উঠছে প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা কী এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মকচারীদের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে কি না সে বিষয়ে। দেশে প্রায় ৬ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মকচারী আছেন। তাদের বিষয়ে সরকারের ভাবনা কী এটা নিয়ে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে শিক্ষক-কর্মকচারীদের মাঝে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ বিষয়ে প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে অর্থ বিভাগ। এখন একটি সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হবে অর্থমন্ত্রীর কাছে। তা অনুমোদনের জন্য যাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। জুলাইয়ের প্রথম দুই সপ্তাহের মধ্যেই সব কাজ শেষ হবে। সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার সব কর্মচারী এটি পাবেন।
আরেকটি সূত্র বলছে, আগামী অর্থবছরের নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের পাশাপাশি আপৎকালীন ভাতা হিসেবে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা এ সুবিধা পাবেন না।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক বেলাল হোসাইন বলেন, প্রধানমন্ত্রী মাত্র ঘোষণা করেছে। এখনও এ বিষয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না। অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবে।
অর্থ বিভাগের উপসচিব আবু দাইয়ান মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ বলেন, এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি যে কারা পাবে কারা পাবে না। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পাচ্ছেন কি না সেটা এখনও বলা যাচ্ছে না। অর্থমন্ত্রীসহ সরকার সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তারাই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবেন।
তিনি বলেন, ঈদের পর ফাইল চূড়ান্ত হবে। তখন বলা যাবে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পাচ্ছেন কি না।
জানা গেছে, স্বাভাবিক নিয়মে সরকারি কর্মচারীদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) হয় অর্থবছরের শুরু থেকে। অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকর হয়। তবে এ বছরের জুলাই মাসে তাদের জন্য এ প্রণোদনার সুখবর দেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৫ সালে ঘোষিত বেতনকাঠামো অনুযায়ী প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে যে বেতন বাড়ে, এবার তার সঙ্গে মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা যোগ হবে।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সরকারি চাকরিজীবীরা বর্তমানের মূল বেতনের চেয়ে ৮.৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি বেতন পাবেন। তবে আপৎকালীন ভাতার ফলে মূল বেতন বাড়বে না। এটি গ্রস বেতনে যুক্ত হবে।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ কার্যকর করার বিষয়ে কাজ চলছে। বাজেট পাস হওয়ার পর দ্রুত এ বিষয়ে পরিপত্র জারি করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে পরিপত্রটি যেদিনই ইস্যু করা হোক না কেন, তা ১ জুলাই থেকেই কার্যকর হবে।
সর্বশেষ জাতীয় পে স্কেল অনুযায়ী, গ্রেড অনুযায়ী সরকারি কর্মীদের ইনক্রিমেন্ট ৩.৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। বর্তমানে ২০টি গ্রেডে প্রায় ১২.৫ লাখ চাকরিজীবী কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে উচ্চতর কয়েকটি গ্রেড বাদে সব গ্রেডে ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট হয়। গ্রেড-১-সহ উচ্চতর কয়েকটি গ্রেডের কর্মকর্তারা ৪.৫ শতাংশ থেকে ৩.৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পেয়ে থাকেন।
সরকারের হিসাব অনুযায়ী, ১৫ থেকে ২০তম গ্রেডে রয়েছেন ৮ লাখের বেশি চাকরিজীবী, যারা ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পান। ফলে বেশির ভাগ কর্মীর বেতনই ১০ শতাংশ হারে বাড়বে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বক্তব্য দেওয়ার সময় সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৫ শতাংশ নতুন করে প্রণোদনা দেওয়ার সুপারিশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি কর্মচারী যারা আছেন, তাদের বিশেষ বেতন হিসেবে মূল বেতনের ৫ শতাংশ আপৎকালীন সময়ে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাচ্ছি। অর্থমন্ত্রী আশা করি, বিষয়টি গ্রহণ করবেন। আমরা ৫ শতাংশ মূল বেতনের সঙ্গে বিশেষ প্রণোদনা হিসেবে তাদের দেব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বাশিস) সভাপতি নজরুল ইসলাম রনি বলেন, সারা দেশে আমাদের এক দফা দাবি চলমান জাতীয়করণ। আমরা জানতে পেরেছি প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ৫ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। আমাদের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের এর আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালন করা হবে।
ইয়ামিন/ইভা