ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

ঢাবির হল ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৬, ১৭ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ২০:৪৬, ১৭ জুলাই ২০২৪

অবশেষে পুলিশের ব্যারিকেডের মধ্যে পড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে একে একে হল ছাড়তে ‘বাধ্য’ হন। গোটা ক্যাম্পাস এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। মল চত্বর থেকে শুরু করে হল পাড়া হিসেবে পরিচিত বিজয় একাত্তর হল, জসীম উদ্দিন হলসহ পুরো এলাকায় র‍্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। চারটি বাহিনীর কঠোর অবস্থান এবং মারমুখী অবস্থানের মুখে বিকেল থেকেই ‘বাধ্য হয়ে’ হল ছাড়তে শুরু করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। 

বুধবার (১৭ জুলাই) ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে মঙ্গলবার নিহত ৬ জনের গায়েবানা জানাজা শেষে বিকেল চারটা ১০ মিনিটে চার-পাঁচটি কফিন নিয়ে মিছিল শুরু করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ভিসির বাসভবনের সামনে পুলিশের ব্যারিকেড অতিক্রম করে তারা এগিয়ে যায়। 

এ সময় পুলিশকে উদ্দেশ করে তারা ‘ভুয়া ভুয়া’, ‘গো ব্যাক’ দুয়োধ্বনি দিতে থাকেন। একপর্যায়ে মিছিলটি বেগম রোকেয়া হলের সামনে এলে পুলিশ মিছিলে সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এর জবাবে শিক্ষার্থীরাও পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে।

এরপর মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় একাধিক সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।

এরপর বিকেল পাঁচটার দিকে আবারও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে দিতে ভিসি চত্বরে একত্রিত হতে থাকে। একসময় শিক্ষার্থী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মুখোমুখি হয়ে পড়লে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্লোগান দিতে দিতে যৌথবাহিনীর মুখোমুখি হলে পুলিশ শিক্ষার্থীদের সরানোর জন্য সাউন্ড গ্রেনেড এবং কাঁদানো গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে শিক্ষার্থীরা বেপরোয়া হয়ে পড়লে, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরাসরি বেশ কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড এবং কাঁদানো গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে বেশ কিছু শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী আহত হন।

এ সময় পুলিশ ধাওয়া দিলে শিক্ষার্থীরা ভিসি চত্বর থেকে মল চত্বর হয়ে বিভিন্ন হলের দিকে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর শিক্ষার্থীরা আবারও একত্রিত হয়ে ভিসি চত্বরের দিকে আগাতে থাকলে পুলিশ তাদের পাল্টা ধাওয়া দিয়ে অমর একুশে হল, মহসিন হল, জসিমউদ্দিন হল, মুজিব হলের দিকে নিয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা এসব হলে আটকা পড়লে পুলিশ তাদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। কোনও উপায় না দেখে যার যার ব্যাগ নিয়ে শিক্ষার্থীরা মহসিন হলের গেট দিয়ে নীলক্ষেত- নিউ মার্কেট হয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়।

আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক মাহিন সরকার বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, গত দুই দিন আগে ছাত্রলীগ আমাদের ওপর যেভাবে হামলা চালিয়েছিল, সে কায়দায় তারা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আবার আমাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। হলে কোনও শিক্ষার্থী নেই। আমাদের কাছে তথ্য আছে, হলেও পুলিশ আজ আক্রমণ চালাতে পারে। 

আন্দোলনকারীদের মধ্যে কতজন হামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মাহিন বলেন, নির্দিষ্ট সংখ্যা জানি না। আমার চোখের সামনে অজস্র আহত হয়েছে। আমরা বাইরেও নিরাপদবোধ করছি না। তারা আমাদের মারার জন্য রেডি আছে। আমরা পুলিশের হাতে ধরা দিতে চাচ্ছি না। 

হল ছাড়লেও আন্দোলন শেষ হয়ে যায়নি জানিয়ে মাহিন বলেন, আমরা ফেরত আসব। আমাদের সমন্বয়কদের অনেকে আহত হয়েছেন। ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তারা কোথায় আছেন, আগে খোঁজ নিতে হবে। হলে এখন খুবই কম শিক্ষার্থী আছে। আমাদের সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা যেন হল ত্যাগ করেন। তবে ঢাকাতে যেন থাকেন। 

মাহিন বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন এখানেই সমাপ্ত নয়। ক্যাম্পাস খুলবে। আমরা আমাদের মতো থাকব। আমাদের দাবিও দাবির জায়গাতেই থাকবে। 

সন্ধ্যা সোয়া ৬টার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নীলক্ষেত, ভিসি চত্বর, দোয়েল চত্বর, টিএসসি, শাহবাগসহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া তেমন কাউকে নজরে পড়েনি।

এমএ/এনএইচ

ঘটনাপ্রবাহ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়