ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ঈদে লোকশূন্য নিস্তব্ধ বিএফডিসি

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ৫ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঈদে লোকশূন্য নিস্তব্ধ বিএফডিসি

রাহাত সাইফুল : ঈদ ধনী-গরিব সব মানুষের মহামিলনের বার্তা বহন করে। এক কাতারে দাঁড়িয়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে একসঙ্গে নামাজ পড়ার সুযোগ এনে দেয় ঈদ। ঈদ মানেই পরম আনন্দ ও খুশির উৎসব। এই দিনটিতে রুপালী জগতের মানুষের কর্মস্থল বিএফডিসি কেমন থাকে? কীভাবে কাটে বিএফডিসির মানুষগুলোর ঈদ? এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে রাইজিংবিডির এই প্রতিবেদক কথা বলেছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে।

একটি সিনেমার সঙ্গে জড়িত থাকেন প্রযোজক, পরিচালক, নায়ক, নায়িকা, এক্সট্রা শিল্পীসহ অন্যান্য কলাকুশলীরা। একটা সময় এফডিসি শিল্পী ও কলাকুশলীদের পদচারণায় মুখরিত থাকতো। চলচ্চিত্রের এই মন্দা অবস্থায় এখন আর সেই মুখর এফডিসির দেখা মেলে না। ঈদে এফডিসি হয়ে পড়ে লোকশূন্য, নীরব, নিস্তব্ধ। নিরাপত্তা কর্মী, স্টান্টম্যান, এক্সট্রা শিল্পীদের জীবনে ঈদ আসে অনেকটা দুঃখ নিয়ে। আর্থিক সংকট এর অন্যতম কারণ। জীবনে যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায় সেখানে প্রিয়জনদের নিয়ে হাসি-আনন্দে ঈদের দিন কাটানো তাদের কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়। নিরাপত্তাকর্মী রাকিব বলেন, ‘ঈদে এফডিসিতে এখন কোনো শিল্পী আসে না। আগে আসতো। আলমগীর সাহেব, রাজ্জাক সাহেবরা আসতেন। কাজ না থাকলেও এফডিসিতে আসতেন, সবার সঙ্গে দেখা করতেন। আগে শিল্পীদের আন্তরিকতা অনেক বেশি ছিল। এখনকার শিল্পীরা ঈদে এফডিসিতে আসে না। কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে তখন আসে। ঈদের দিন এফডিসি খালি থাকে। তাই এখন ঈদে এফডিসিতে আমাদেরও আসা হয় না।’

স্টান্টম্যান  মারুফ বলেন, ‘আমি অনেক সিনেমায় মারামারির দৃশ্যে অভিনয় করেছি। একটা সময় সিনিয়র শিল্পীরা ঈদ এলে আমাদের খোঁজখবর নিতেন। শুটিংয়ের বাইরে আমাদের সঙ্গে কথা বলতেন, আড্ডা দিতেন। ঈদের দিন শিল্পীরা একবারের জন্য হলেও এফডিসিতে আসতেন আমাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতেন। এখন ঈদের দিন এফডিসিতে মাছিও আসে না। আগের সময়গুলো খুবই ভালো ছিল। মান্না ভাই এফডিসিতে বেশি আসতেন এবং আমাদের খোঁজখবর নিতেন। তিনি ঈদের দিন এসে আমাদের সঙ্গে কোলাকুলি করতেন, কথা বলতেন। একবার তিনি আমাকে জোর করে কিছু টাকা পকেটে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। আমি নিতে চাচ্ছিলাম না। তারপরও তিনি দিয়েছেন। এখন জায়েদ খান মোটামুটি সবাইকে সম্মানী দেন। এছাড়া আর তেমন কাউকে দেখা যায় না।’

স্টান্টম্যান জামাল বলেন, ‘আগে ঈদ ঢাকায় করতাম। এখন করি না। গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ঈদ করি। ঢাকায় ঈদ করে আনন্দ পাই না। কারণ ঈদের দিন সিনেমার কাউকেই পাওয়া যায় না। কাদের সাথে ঈদ করব? আগে শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজকেরা ঈদের দিন এফডিসিতে আসতেন।তখন সবার সঙ্গে দেখা করতাম, ভালো লাগত। এখন আর এসব হয় না।’

এক্সট্রা শিল্পী কাদের বলেন, ‘আমি অনেক শিল্পীর সঙ্গে কাজ করেছি। তাদের অনেকেই এখন সিনেমায় কাজ করেন না। আবার কেউ কেউ মারা গিয়েছেন। সারা বছর অপেক্ষা করতাম ঈদের জন্য। ঈদ এলে অনেক টাকা পেতাম। সে টাকা দিয়ে পরিবারের সবার জন্য পোশাক কিনতে পারতাম। আর এখন সিনেমার কাজও কমে গেছে, বড় শিল্পীরা আমাদের খবর নেন না।’

এক্সট্রা শিল্পী নুপুর বলেন, ‘এবারের ঈদে কয়েকটা জাকাতের কাপড় পেয়েছি। আগে আমি অনেক জাকাতের কাপড় পেতাম। সারা বছর নিজে এবং পরিবারের অন্যরা পরেও সেই কাপড় শেষ করতে পারতাম না। এ ছাড়া টাকা পেতাম। এখন সিনেমার অবস্থা ভালো না। তাছাড়া আমরা এক্সট্রা শিল্পী হলেও আগে শিল্পীরা আমাদের খোঁজখবর নিতেন। ঈদ এলে টাকা দিতেন। এমনও হয়েছে বাসায় কাপড়সহ টাকা পাঠিয়ে দিতেন। এখন আর এসব হয় না। সিনেমার সঙ্গে প্রায় ১৫ বছর কাটিয়েছি।’ একই কথা বলছিলেন কল্পনা, আলেয়া বুড়ি, দিলবাহারী, বিনা, শুকুর জাহান, রাবেয়া, মর্জিনা, আলেয়া, রেবেকা, সেলিম।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সহাসচিব বদিউল আলম খোকন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ঈদের দিন আমাদের কোনো কার্যক্রম থাকে না। স্বাভাবিক কারণে আমরা এফডিসিতে আসি না। পরিবারের লোকজনরে সঙ্গে সময় কাটাই।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ জুন ২০১৯/রাহাত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়