ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

নজরুল রোজাতেও আছেন পূজাতেও আছেন: ফেরদৌস আরা

আমিনুল ইসলাম শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ২৭ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নজরুল রোজাতেও আছেন পূজাতেও আছেন: ফেরদৌস আরা

কাজী নজরুল ইসলাম কবি পরিচয়ের পাশাপাশি বহু অভিধায় পরিচিত। সাহিত্যের নানা শাখায় ছিল তাঁর বিচরণ। কবির সৃষ্টি তালিকায় রয়েছে গল্প, উপন্যাস, নাটক, শিশুসাহিত্য প্রভৃতি। তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী। বহু অপ্রচলিত রাগের সুর স্রষ্টা এই মানুষটি সংগীত পরিচালনাও করেছেন। তিনি যেখানেই গেছেন সেখানে তাঁর কণ্ঠের জাদু ছড়িয়েছেন। তাঁর শিষ্যদের তালিকাও বেশ লম্বা। বাংলাদেশের খ্যাতনামা কণ্ঠশিল্পী প্রয়াত ফিরোজা বেগমকে তিনি গান শিখিয়েছিলেন। সরাসরি নজরুলের কাছ থেকে কণ্ঠে গান তুলেছেন ধীরেন বসু, প্রতীভা বসু, আঙ্গুর বালা প্রমুখের মতো খ্যাতিমানরাও। নজরুলের গানের চর্চা আজও থেমে নেই। তাঁর গান গেয়ে খ্যাতি লাভ করেছেন এমন শিল্পীর সংখ্যাও কম নয়। তেমনি একজন ফেরদৌস আরা। এই শিল্পীর মননে নজরুল শ্রদ্ধার আসন পেতে বসে আছেন। নজরুলের গীত ও সুর তিনি ধারণ করেছেন কণ্ঠে।  তিনি দেশবরেণ্য শিল্পী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন নজরুলের গান গেয়ে। আজ নজরুল প্রয়াণ দিবসে আমিনুল ইসলাম শান্ত মুখোমুখি হয়েছিলেন বরেণ্য এই কণ্ঠশিল্পীর।

রাইজিংবিডি : গানের সঙ্গে আপনার সখ্য কীভাবে?

ফেরদৌস আরা : বাবার চাকরির সুবাদে আমরা তখন চট্টগ্রাম থাকি। সেখানে সংগীত পরিষদ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। তখন আমি ক্লাস ওয়ানে পড়ি। সেখানে আমার বড় বোনেরা গান শিখতে যেতেন। আর আমি যেতাম খেলতে। খেলার ফাঁকে যখন গানের সুর বাজতো তখন আমি জানালার গ্রিল ধরে ঝুলে থাকতাম। ওই গানগুলো আমি শুনতাম। বোনেরা গান শিখতেন ঠিকই কিন্তু আমার মনে হতো- ওদের আগে গানগুলো আমারই মুখস্থ হয়ে যেত। এ ভাবেই বেড়ে উঠতে থাকি। এক সময় বাবা বদলি হলেন রাজশাহী। সেখানে শাস্ত্রীয় সংগীত ওস্তাদ ছিলেন আব্দুল জব্বার। বোনেরা সবাই তাঁর কাছে গান শিখতেন। তিনি যখন বাসায় আসতেন তখন আমি পালিয়ে যেতাম। একদিন আমাকে ধরে বললেন, ‘সবাই এত সুন্দর গান গায় তুমি করো না কেন?’ আমি বললাম, ‘আপনি আমাকে ছোটদের গান দেন কেন? এ জন্য আমি গাই না।’ তিনি বললেন, ‘তুমি ছোট মানুষ, আমি তো তোমাকে ছোটদের গানই দিব।’ তখন আমি বললাম, ‘আমি সন্ধ্যা মুখার্জীর চেয়েও ভালো গান গাই।’ ওস্তাদজি তখন বললেন, ‘তুমি যেহেতু এত ভালো গাও তবে একটা গান আমাকে শুনিয়ে যাও।’

আমি চট করে ‘নিসা গামা পা...নি সারে গারে পাখি গা’ ভারতীয় বাংলা একটি গান শুনিয়ে দিলাম। গানটি ছিলে বেশ কঠিন। গানটি শুনে তিনি আফসোস করলেন। আমার মাথায় হাত রেখে বললেন, ‘মা, আমি বুঝিনি সত্যি তুমি এতটা বড় হয়েছো! এখন থেকে তুমি যে গান চাও আমি তোমাকে সে গানই দিব।’ তারপর থেকেই আমার গান শেখা শুরু।

এরপর ঢাকা চলে এলাম। এখানে এসে ওস্তাদ কাদের জামিলিকে পেলাম। যিনি পাক-ভারতের নামকরা গজলশিল্পী ছিলেন। তাঁর কাছেও গান শিখেছি। এরপর আরো অনেক গুণী ওস্তাদকে পেয়েছি। তবে গানের সঙ্গে আমার সখ্য হয়েছে পারিবারিকভাবে। আমার বাবা এএইচএম আব্দুল হাই উচ্চাঙ্গ সংগীত বিশারদ ছিলেন। তার কাছেই সংগীতে হাতে খড়ি। আমাদের রক্তেই ছিল গান। এটা বংশ পরম্পরায় হয়ে এসেছে।

রাইজিংবিডি : আপনার বাবা ভালো উচ্চাঙ্গ সংগীত গাইতেন বলে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান।

ফেরদৌস আরা : স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমার বাবা রাজশাহী জোনের ইঞ্জিনিয়ারিং পিডব্লিউ-এর প্রধান ছিলেন। নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা তখন ঢাকার বাড়িতে চলে আসি। এ সময় পাক বাহিনী আমার বাবাকে ধরে নিয়ে যায়। পাক বাহিনী বাবার কাছে জানতে চাইলেন, আপনার অফিসের কে কে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে, তাদের নাম বলুন? কিন্তু বাবা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। পরপর তিনবার বাবাকে তারা ধরে নিয়ে যায়। শেষবার ধরে নিয়ে গিয়ে বাবাকে ব্রাশ ফায়ারে মেরে ফেলার জন্য দাঁড় করিয়ে ছিল। এমন সময় বাবাকে দেখে পাক বাহিনীর এক লিডার এসে বললেন, এ তোমরা কাকে ধরে এনেছো? তিনি তো চমৎকার ক্লাসিক্যাল গান গায়। একজন শিল্পীকে তোমরা ধরে এনেছো? তারপর বাবাকে ওরা ছেড়ে দেয়।

রাইজিংবিডি : নজরুল সংগীতের প্রেমে কীভাবে পড়লেন?

ফেরদৌস আরা : সেই ছোট্টবেলার কথা। অবচেতন মনে তখন অনেক গান ভালো লাগতো। যে গান ভালো লাগতো সে গানই গাইতাম। বুঝতাম না এটা কী গান। আস্তে আস্তে যখন বড় হলাম, তখন রাগাশ্রয়ী গানগুলো বেশি ভালো লাগতে শুরু করে। তারপর যখন আরো বড় হলাম তখন জানতে পারলাম এ রাগাশ্রয়ী গানগুলো ছিল আসলে নজরুল সংগীত। সবকিছু বোঝার বয়স হওয়ার আগেই নজরুল সংগীতে আমি নিমজ্জিত হই। তবে আমি কিন্তু অন্য গানও গেয়েছি। আমার মন চলে যায় বাংলাদেশের/ সুদূর একটি গায়ে... এ ধরনের দেশাত্মবোধক গান, স্বাধীনতার গান, বিজয়ের গানও আমি গেয়েছি। যা অনেক জনপ্রিয় হয়েছে। তা ছাড়া আরো কিছু আধুনিক ও হারানো দিনের গানও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আমি নজরুল সংগীত গাই বলেই বোধ করি সব অঙ্গনের গানগুলো আমি সফলভাবে গাইতে পারি।

রাইজিংবিডি : সারগাম থেকে আপনার ‘আকাশের মিটি মিটি তারা’ শিরোনামে নজরুল সংগীতের ক্যাসেট প্রকাশিত হয়।  এটি সেই সময় বেস্ট সেলার ছিল। শ্রোতা আপনার গানগুলো কেন পছন্দ করল বলে মনে করেন?

ফেরদৌস আরা : এটি ১৯৮৫ সালের ঘটনা। এখন পর্যন্ত ওই ক্যাসেটটি বেস্ট সেলার হিসেবেই আছে। এতটা সফল হওয়ার কারণ আমি ঠিক বলতে পারবো না। তবে একজন শিল্পী যদি তার পরিশীলিত কণ্ঠে, শুদ্ধ বাণী ও সুরে নজরুল সংগীত গায় তা যদি শুনতে শ্রুতিমধুর হয় তাহলে সাধারণ মানুষের মনে ভালোলাগা কাজ করে। অথবা কণ্ঠের কোনো একটি ব্যাপার হয়তো আছে যা অনেকের ভালো লেগেছে।

রাইজিংবিডি : নজরুল সংগীতকে লালন করতে এসে আপনার জীবনে কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে?

ফেরদৌস আরা : জীবন বলতে যা বুঝায়। যেমন- প্রকৃতি উপভোগ করা, আড্ডা দেয়া, সিনেমা দেখে সময় কাটানো, এখানে ওখানে যাওয়া প্রভৃতি। এ ধরনের সব কিছুই ত্যাগ করতে হয়েছে নজরুলগীতির কারণে। ত্যাগের তো আর সীমা নাই। কারণ গান, গবেষণা নিয়েই তো আমি বসে আছি। এখনো গাড়িতে বসে দুই আড়াই ঘণ্টা চলে যায়। আমি এ সময় এতটুকু নষ্ট করি না। যখনই সময় পাই নজরুলের অথেনটিক গান শিখি। গবেষণালব্ধ যে গানগুলো পাওয়া গেছে, যা মানুষ জানে না। সেই গানগুলো আমার কণ্ঠে নিয়ে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছি। এই কণ্ঠ থাকতে থাকতেই গানগুলো করে যেতে চাই।

রাইজিংবিডি : দীর্ঘদিন ধরে আপনি ‘সুরসপ্তক’ নামে একটি গানের স্কুল পরিচালনা করছেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে আপনার উত্তরসূরী ঠিক কতটা তৈরি করতে পারছেন বলে মনে করেন?

ফেরদৌস আরা : ২০০০ সালে স্কুলটি শুরু করি। এখান থেকে আমি অনেক অনুপ্রেরণা পেয়েছি। সুরসপ্তকে যত শিক্ষার্থী পেয়েছি তাদেরকে নিয়ে আমি অনেক খুশি। কারণ তারা আগামী দিনে নজরুল সংগীতের ধারক, বাহক হবে। শিল্পী হবে। সবমিলিয়ে আমি আমার শিক্ষার্থীদের নিয়ে খুবই আশাবাদী।

রাইজিংবিডি : আপনি এক হাজার নজরুল সংগীত নিয়ে ধারাবাহিকভাবে সংকলন প্রকাশ করছেন। এমন উদ্যোগ কেন নিলেন?

ফেরদৌস আরা : এক হাজার নজরুল সংগীত নিয়ে ধারাবাহিকভাবে সংকলন প্রকাশ করাটাই এখন আমার কাছে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ কাজ। কারণ মানুষ তো চিরজীবন বেঁচে থাকে না। আমরা ফিরোজা আপাকে হারিয়েছি। এভাবে আমিও একদিন হারিয়ে যাব। এক সময়ের গ্রামোফোনের রেকর্ড, লং প্লে এসব এখন নেই। এমন কি সেই যন্ত্রও নেই। ক্যাসেট প্লেয়ার এখন নেই বললেই চলে। নতুন করে এলো সিডি। সিডিও হারিয়ে গেছে। উন্নত কোনো প্রযুক্তি আসবে।  নজরুল সংগীত যেভাবে রেকর্ডেড ছিল সেই রেকর্ড কিন্তু নতুন প্রজন্ম খুঁজে পাবে না। এ জন্য শুদ্ধ বাণী ও সুরে নজরুল সংগীতের গবেষণালব্ধ গানগুলো আমার একক কণ্ঠে হাজার গান নামে অর্থাৎ নজরুল সংগীত সমগ্র নামে এক ও দুই খণ্ডে প্রকাশ করেছি। বাকি কাজ আমি বেঁচে থাকা পর্যন্ত করে যাব। নতুন প্রজন্মের কাছে নজরুলের গানকে সহজলভ্যভাবে পৌঁছে দেয়াই উদ্দেশ্য।

রাইজিংবিডি : নজরুল তার কর্মজীবনে ৩ হাজারের বেশি গান রচনা করেছেন। আপনি তার কত সংখ্যক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন?

ফেরদৌস আরা : অনেক গানই তো গেয়েছি। সবগুলোর হিসেব নেই। তবে যেগুলো সিডি আকারে এসেছে, সেগুলোর সংখ্যা দুইশ। তবে পুরনো গান ছাড়া।

রাইজিংবিডি : নজরুলগীতি ১০টি ভাগে বিভক্ত। ভক্তিমূলক গান, প্রণয়গীতি, প্রকৃতি বন্দনা, দেশাত্মবোধক গান, রাগপ্রধান গান, হাসির গান, ব্যাঙ্গাত্মক গান, সমবেত সংগীত, রণসংগীত এবং বিদেশীসুরাশ্রিত গান। এর মধ্যে কোনো প্রকারের গান আপনার বেশি প্রিয়? কেন?

ফেরদৌস আরা : নজরুলের সবরকম গানই আমার পছন্দ। কারণ তার গানের বৈচিত্র্যের সীমা নাই। ধ্রুপদ, ধামা, খেয়া, গজল, ঝুমুর, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, ইসলামি, শ্যামা, কীর্তন, ভজন সব রকমের গানই আমার পছন্দ। তিনি শ্রমিক-মজুর, মেয়েদের অধিকার নিয়েও গান লিখেছেন। তাঁর বৈচিত্র্যের ভাণ্ডার এত বড় যে আপনি যেখানে যাবেন সেখানেই তাঁকে পাবেন। যখন কীর্তন গাইবেন তখন মনে হবে এ এক বিশাল ভাণ্ডার। তবে শ্যামার ক্ষেত্রে নজরুলের উপরে কেউ যেতে পারেনি। কাজী নজরুলের গানে বিশেষ দিক হলো তিনি কোনো একটি দিকে সীমাবদ্ধ নন। তিনি নিজে সৃষ্টি করেছেন রাগ, তাল, ছন্দ। এ ছাড়া বাংলা ভাষার সঙ্গে অন্য ভাষার মিশ্রন ঘটিয়ে তিনি নতুন কিছু সৃষ্টি করেছেন।

রাইজিংবিডি : নজরুলের অনেক গানে আপনি কণ্ঠ দিয়েছেন। এটা সম্ভব হয়েছে নজরুলগীতির সঙ্গে আপনার গভীর প্রেমের কারণে।

ফেরদৌস আরা : নজরুল সংগীত থেকে বের হয়ে আসা আমার পক্ষে সম্ভব না, এটা বোধ হয় কারও পক্ষেই সম্ভব না। কারণ নজরুলের গানে এত বেশি আঙ্গিক রয়েছে যে, এখান থেকে বেরিয়ে আসার কোনো দরকারই হবে না। কী নেই নজরুলের গানে? আপনি আধুনিক গান চান? যেমন গভীর নিশিতে ঘুম ভেঙে যায়/ কে যেন আমারে ডাকে সেকি তুমি...। ওরে নাইয়া ধীরে চালাও... আমারে পাড়ে নিবার ছলে নিলে মাঝ নদীতে...। এর চেয়ে আধুনিক কী হতে পারে? কোনো একজন কবি কী আছেন যিনি রোজাতেও আছেন পূজাতেও আছেন? সব শেষ কথা হচ্ছে, নজরুল মানুষের কবি, মানবতারও। তিনি  মানুষকেই সবচেয়ে বড় করে দেখেছেন। একমাত্র অসাম্প্রদায়িক কবি কাজী নজরুল।   

রাইজিংবিডি : সংগীতাঙ্গনের বর্তমান যে অবস্থা তাতে পরবর্তী প্রজন্ম নজরুল সংগীতকে হৃদয় থেকে কতটা লালন করবে বলে আপনি মনে করেন?

ফেরদৌস আরা : আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মিউজিক কলেজে অধ্যাপনা করেছি। নজরুল ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করেছি। এমনকি আমার নিজেরও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আমি সবখানে যাই। এসব জায়গায় গিয়ে আমি দেখেছি, নজরুলের প্রচুর ভক্ত রয়েছে। তারা শুধু ভক্ত নন বরং প্রত্যেকে নজরুল সংগীতশিল্পী হিসেবেও নিজেদের তৈরি করছেন।

রাইজিংবিডি : আমায় নহে গো... গানটি আপনি গেয়েছেন। নজরুলের মতো আপনি শ্রোতাদের কাছে কী প্রত্যাশা করেন?

ফেরদৌস আরা : আপনি একজন লেখক হলে পাঠকদের কাছে কখনোই আপনাকে ভালোবাসতে বলবেন না। বলবেন, আমার লেখাকে ভালোবাসুন। নজরুল এ কথাটি বৃহৎ অর্থে বলে গেছেন। আমিও আমার জায়গা থেকে আমার শ্রোতাদের কাছেও এটাই প্রত্যাশা করি।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ আগস্ট ২০১৯/শান্ত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়