ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

‘ওস্তাদজির ছাত্রী কত নাম করেছে দেখে যেতে পারেননি’

বিনোদন ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২২, ৫ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ওস্তাদজির ছাত্রী কত নাম করেছে দেখে যেতে পারেননি’

শিক্ষা জীবনে অনেক ভালো ভালো শিক্ষক পেয়েছি। একাডেমিক এবং সংগীত দুই শিক্ষার ক্ষেত্রেই। আলাদা করে কোনো শিক্ষককে নিয়ে বলতে গেলে বিরাট সমস্যা। এক্ষেত্রে আমার গানের প্রথম ওস্তাদের কথা বলতে চাই। তিনি প্রথম ওস্তাদ ছিলেন ঠিক তাও নয়, বরং ক্লাশ সেভেন-এ পড়ার সময় তার কাছে তালিম নিয়েছিলাম। ওস্তাদের নাম আখতার সাদমানি। ওস্তাদজি বাসায় এসে গান শেখাতেন। তখনই ওস্তাদজির অনেক বয়স ছিল। তারপরও কষ্ট করে আসতেন। তিনি স্কুটি চালাতেন। স্বভাবে খুবই নম্র ভাষী ও ব্যক্তিগত জীবনে খুবই ভালো মানুষ ছিলেন তিনি।

ওস্তাদজি খুব যত্ন করে গান শেখাতেন। তিনি আমাকে বিশেষ স্নেহ করতেন। কারণ আমি কখনো ফাঁকি দিতাম না। তিনি যখন যে লেসন দিয়ে যেতেন, আমি অনুশীলন করতাম। কারণ ঠিকমতো অনুশীলন করলে ওস্তাদজির প্রশংসা পেতাম। প্রশংসার জন্য সব করতাম। তখন এটা মাথায় কাজ করতো না যে, ঠিকমতো অনুশীলন করলে গান খুব ভালোমতো রপ্ত হবে। বরং ওস্তাদজি খুশি হবেন, বাহবা দিবেন শুধু এজন্য ঠিকমতো অনুশীলন করতাম।

অনেক সময় একাডেমিক পড়াশোনার চাপে যদি অনুশীলন ঠিকমতো না করতাম তবে তিনি ধরে ফেলতেন। বলতেন, ‘মা এই সপ্তাহে তুমি প্র্যাকটিস করো নাই’। আমি বলতাম, ওস্তাদজি পরীক্ষা ছিল। শুনে তিনি বলতেন, ‘তুমি যে প্র্যাকটিস করলে না এজন্য কতদিন পিছিয়ে গেলে? একদিন প্র্যাকটিস না করলে তুমি এক বছর পিছিয়ে যাবে কিন্তু একদিন প্র্যাকটিস করলে শুধু ওই দিনের প্র্যাকটিসটাই হবে’।

ওস্তাদজি ভেসপা স্কুটি নিয়ে আসতেন। ওই সময় আমরা কখনো মোটর সাইকেলে উঠিনি। প্রায়ই আমরা ভাই-বোনেরা বলতাম, ওস্তাদজি আমাদের একবার মোটর সাইকেলে নিন। ওস্তাদজির যদি মুড ভালো থাকত তবে তুলে নিতেন। একথা শুনলে কেউ বিশ্বাস করবে না। কারণ তাঁর মতো  বয়স্ক একজন মানুষ আমাদের মতো পিচ্চিদের হোন্ডায় ঘুরিয়ে এনেছেন। আমরা হোন্ডায় ওঠার জন্য উৎসুক হয়ে থাকতাম। ওস্তাদজির সঙ্গে এটা আমার মধুর স্মৃতি। এমনিতে তাঁকে ভয় পেতাম। যেদিন ওস্তাদজি আসবেন সেদিন সকাল থেকেই আমার মধ্যে ভয় ঢুকে যেতো। কারণ গত ৬ দিন যে অনুশীলন করেছি সেটা যদি ভালো না হয়!  

ওস্তাদজির ছাত্রী কতটা নাম করেছে, কতটা সফল হয়েছে সেসব কিছুই দেখে যেতে পারেননি। কারণ তার অনেক আগেই তিনি মারা গেছেন। বিশ্ব শিক্ষক দিবসে ওস্তাদজির আত্মার শান্তি কামনা করছি।

অনুলিখন: আমিনুল ইসলাম শান্ত


ঢাকা/তারা        

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়