ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

‘শুধু পেটিকোট পরে শট দিতে হয়েছে’

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৮, ৭ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘শুধু পেটিকোট পরে শট দিতে হয়েছে’

দর্শক আর্কষণ করার মোহনীয় ক্ষমতা থাকে নায়িকাদের। মিষ্টি মুখের হাসি দিয়ে হাজারো দর্শক হৃদয় জয় করতে পারেন তারা। অনেক সময় শুধু নায়িকার নাম শুনেই প্রেক্ষাগৃহে ভিড় জমান সিনেমাপ্রেমীরা। হল মালিকগণও নায়িকার নামের উপর সিনেমা বুকিং দিয়ে থাকেন। এ তো গেল মুদ্রার এ-পিঠ। মুদ্রার অপর পিঠে নারীশিল্পী তথা নায়িকাকে অনেক দুঃখজনক পথ পাড়ি দিয়ে সুপারস্টার হতে হয়। তাদের এই নীরব যুদ্ধের গল্প ভক্তদের কান পর্যন্ত পৌঁছায় না।

চলচ্চিত্রে নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান নুপুর হোসাইন রানী। স্বপ্নে এতোটাই বিভোর ছিলেন যে, পরিচালকের ইচ্ছায় যেকোন চরিত্রে, যেকোন শট দিতে রাজি হয়েছেন। কিন্তু তারপরও পূরণ হয়নি তার স্বপ্ন। তিনি এখন মনে করছেন- তার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। যে পরিচালকের হাত ধরে তিনি নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই পরিচালককে তিনি এখন প্রতারক ভাবছেন।  

নুপুর বলেন, ‘২০১৮ সালে সহকারী পরিচালক আরিফ সিদ্দিকী আমাকে একটি শুটিংয়ে দেখেন। তিনি আমাকে হেঁটে দেখাতে বলেন। আমি হেঁটে দেখাই। দৃশ্যটি ভিডিও করে নিয়ে যান। এর দু’একদিন পরে তিনি আমাকে বলেন, ‘মায়া’ নামে একটি সিনেমা বানাচ্ছি। খুব ভালো একটা চরিত্র আছে, তোমার সঙ্গে যায়। তুমি চরিত্রটা করতে পার। আমি জানতে চাইলাম- কী রকম? তিনি বলেন, তোমার কিছু শরীরের অংশ দেখাতে হবে। সেখানে তোমার অভিনয়ের জায়গায়ও আছে। আমি তখন তাকে ‘ভেবে পরে জানাবো’ বলে চলে আসি।’

ইতোমধ্যে নুপুর বিটিভির একটি কাজে জড়িয়ে পড়েন। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের কিছু দৃশ্য ছিল। নুপুর বলেন, ‘সেই দৃশ্য দেখে পরিচালক মাসুদ পথিক আমাকে ফোন করে বলেন, তোমার ক্যামেরা ফেস ভালো! তুমি চরিত্রটা করো। আমি বললাম, আপনি যে চরিত্রের কথা বলছেন তা করতে পারব না। কারণ আমি অভিনয় করতে এসছি, বডি শো করতে পারব না। তখন তিনি বললেন, আমার গল্পে এটি আছে। দৃশ্যটি টেক করতেই হবে। এরপর যেদিন শুটিং ডেট, সেদিন আবার আমাকে ফোন দিয়ে বললেন, তুমি কাজটি করো। এত করে বলার পর পারিশ্রমিক কত হবে- এসব কিছু না ভেবেই আমি সেদিন শুটিং স্পটে চলে গিয়েছিলাম।’

নুপুর আরো বলেন, ‘সেদিন শাড়ি পরেছিলাম। আমাকে বলা হলো- ব্লাউজ খুলে শট দিতে হবে। আমি কাজপাগল, তাই কোন কিছু চিন্তা করিনি। কারণ সে আমাকে বলেছে- নায়িকা বানাবে। পরিচালকের অতীত ভালো শুনে কাজগুলো করতে রাজি হয়েছি। সেদিন শুধু পেটিকোট পরে শট দিয়েছি। ওইদিন ক্যামেরার সামনে আমাকে দিয়ে অভিনয় করানো হয়নি। এরপর পরিচালক বলল, দু’দিন পরে আবার কল দিব। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই দু’দিনের অপেক্ষা আমার শেষ হয়নি।’

এরই মধ্যে ‘মায়া’ সিনেমার পোস্টার, টিজার প্রকাশ হয়েছে। কোথাও নুপুরের নাম এমনকি তার মুখমণ্ডল ব্যবহার করা হয়নি বলে নুপুর অভিযোগ করেন। অথচ পোস্টারে নুপুরের পেটিকোট পরা ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। ধারণা করা যায়, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেই ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ সেখানে অন্য কোনো অভিনেতার ছবি নেই।

নুপুর আরো বলেন, কষ্ট লাগে আমার ছবি দিয়ে সিনেমাটির মার্কেটিং হচ্ছে। অথচ কোথাও আমার নাম নেই। আমি শুটিং করেছি স্পটের লোকজনও দেখেছে। তাছাড়া এখন আমার বডির সঙ্গে যার ফেইস লাগানো হয়েছে তার সঙ্গে মিলবে না।

এ প্রসঙ্গে মাসুদ পথিক বলেন, পাকিস্তানি একটা ক্যাম্পে ১৫ জন নির্যাতিতা নারীর দৃশ্য ধারণ করেছি। এদের একেকজনকে একেকভাবে শুট করেছি। আর এগুলো তো জুনিয়র শিল্পী (নুপুর)। এদের সঙ্গে আমি কথা বলিনি। আমার প্রধান সহকারী কথা বলেছেন। নুপুর কার দ্বারা প্ররোচিত হয়েছে আমি জানি না। এখানে তিন চারটা মেয়েকে একই মুডে শুট করেছি। পরে কোলাজ করেছি। এখানে একজনের ফেইস ইউজ করেছি, একজনের হাত ইউজ করেছি। আমি তো কাউকে কথা দেইনি তোমার ফেইস ইউজ করব না। 

চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের চিত্রকর্ম ‘নারী’ এবং কবি কামাল চৌধুরীর ‘যুদ্ধশিশু’ কবিতা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ‘মায়া’। সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন মুমতাজ সরকার (কলকাতা) ও জ্যোতিকা জ্যোতি। এছাড়াও অভিনয় করেছেন প্রাণ রায়, দেবাশীষ কায়সার, হাসান ইমাম, ঝুনা চৌধুরী প্রমুখ। সিনেমাটি এ বছরই মুক্তি পাবে বলে নির্মাতাসূত্রে জানা গেছে।


 

ঢাকা/রাহাত সাইফুল/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়