ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

এত মানুষের মধ্যে খারাপ মানুষ তো থাকবেই: নীল

আমিনুল ইসলাম শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৪৭, ২১ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এত মানুষের মধ্যে খারাপ মানুষ তো থাকবেই: নীল

উপস্থাপিকা, মডেল, অভিনেত্রী- একাধিক পরিচয়ে পরিচিত নীল হুরেজাহান। রেডিও জকি হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। এরপর একটি বেসরকারি টেলিভিশনে অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে শোবিজ জগতে পা রাখেন। ২০১৭ সালে অমিতাভ রেজা চৌধুরী পরিচালিত মেরিলের একটি বিজ্ঞাপনে প্রথম মডেল হন নীল। এরপর মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী নির্মিত ক্লোজআপের বিজ্ঞাপনে কাজ করে সাড়া ফেলে দেন তিনি। নীল সম্প্রতি নাম লিখিয়েছেন অভিনয়ে। সেখানেও রেখেছেন আপন মেধার স্বাক্ষর। তবে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু বিপিএল-এ তাকে দেখা গেছে ভিন্ন রূপে। স্পোর্টস শো উপস্থাপনা করে দারুণ প্রশংসিত হয়েছেন। রাইজিংবিডির সহ-সম্পাদক আমিনুল ইসলাম শান্তর সঙ্গে নীলের কথোপকথন তুলে ধরা হলো।  

রাইজিংবিডি: শোবিজের সঙ্গে যুক্ত হলেন কীভাবে?

নীল: ২০১৪ সালে রেডিওতে আরজে হিসেবে প্রথম কাজ করি। পাশাপাশি একটি গ্রুপের সঙ্গে ট্রাভেল করতাম। এই গ্রুপে এক বড় ভাই ছিলেন। তিনি ‘বাংলাভিশন’-এ গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতেন। তিনি একবার বললেন, টেলিভিশন শো উপস্থাপনা করতে চাই কিনা? আমি রাজি হয়ে গেলাম। অডিশনেও উৎরে গেলাম- ব্যস্‌!

রাইজিংবিডি: স্পোর্টস শো উপস্থাপনা করতে আগ্রহী হলেন কেন?

নীল: বাংলাভিশনের নিয়মিত শো উপস্থাপনা যখন করছি, তখন এনটিভি থেকে প্রস্তাব আসে। এরপর জিটিভি থেকে দ্বিতীয় প্রস্তাব আসে স্পোর্টস শো উপস্থাপনার জন্য। আমি দেখা করতে গেলাম। কথা বলে ভালো লাগল এবং কাজ শুরু করলাম। স্পোর্টস শোয়ে চ্যালেঞ্জ থাকে, এজন্য কখনো একঘেঁয়েমি আসে না। কারণ প্রতিটি ম্যাচ আলাদা। যার জন্য কথা বলাটাও আলাদা। অন্য শোগুলো করতে করতে এক সময় একঘেঁয়েমি চলে আসে। কারণ একই জিনিস বারবার করতে হয়, নতুনত্ব কম থাকে। কিন্তু স্পোর্টস শো একদম আলাদা। এজন্য আগ্রহী হয়েছি। আর স্পোর্টস আমার পছন্দ। নতুন কিছু করার ইচ্ছা, জানার ইচ্ছা থেকেই এদিকে আসা। 

রাইজিংবিডি: আপনি কি ক্রিকেট বা ফুটবল খেলতে পছন্দ করেন?

নীল: ছোটবেলায় ফুটবল, ক্রিকেট, হাডুডু খেলেছি। কিন্তু ওরকম প্রফেশনালি কিছু না।

রাইজিংবিডি: কোন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে দর্শকের কাছ থেকে বেশি সাড়া পেয়েছেন?

নীল: স্পোর্টস শো। নিউজটোয়েন্টিফোরের ‘ইটস অ্যামাজিং’ উপস্থাপনা করেও অনেক সাড়া পেয়েছি।

রাইজিংবিডি: টেলিভিশন নাটকে অনিয়মিত কেন?

নীল: বাংলাভিশনে টানা সাড়ে তিন থেকে চার বছর কাজ করেছি। তখন অনেক কাজের প্রস্তাব পেলেও বাইরে কোনো কাজ করিনি। কারণ আমার পরিকল্পনা ছিল আরো একটু প্রস্তুত হয়ে অন্য কাজে পা বাড়াব। বাংলাভিশন যখন ছাড়ি তখন এনটিভিতে একটা প্রোগ্রাম করতাম। তখন হাতে সময় ছিল। এই সময়টা ব্যবহার করার জন্য শখের বশে অভিনয়ে নাম লেখাই। যদিও উপস্থাপনা আমার মূল লক্ষ্য। তাছাড়া নাটকে কাজ করতে গেলে অনেক সময় দিতে হয়। যেটা আমার পক্ষে সম্ভব না।

রাইজিংবিডি: তাহলে অভিনয় নিয়ে কী ভাবছেন?   

নীল: অভিনয় নিয়ে আলাদা কোনো পরিকল্পনা নেই। যদি ভালো কাজের প্রস্তাব পাই করব। আবার অভিনয় করব না তেমনও না। সবকিছু মিলিয়ে হলে করব। কিন্তু আমার প্রধান গুরুত্ব উপস্থাপনা।

রাইজিংবিডি: সময়ের জনপ্রিয় বেশ কজন তারকার সঙ্গে কাজ করেছেন। এদের মধ্যে কার সঙ্গে কাজ করতে বেশি ভালো লাগে?

নীল: আসলে আমি তো নাটকের মানুষ না। এজন্য এভাবে বলাটা কঠিন। আমি প্রথম নাটক করেছি সুবর্ণা মুস্তাফা ম্যাম ও আফজাল হোসেন স্যারের সঙ্গে। খুবই ভালো অভিজ্ঞতা ছিল। বান্নাহ্ ভাইয়ের একটি নাটকে আফরান নিশো ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করেছি। সেখানেও খারাপ লাগেনি। আসলে এসব নাটকের কাজের অভিজ্ঞতা আলাদা আলাদা। স্পেসিফিক বলাটা আমার জন্য মুশকিল।  

 

 

রাইজিংবিডি: বড় পর্দায় অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েও করেননি…

নীল: হ্যাঁ, চলচ্চিত্রে অভিনয়ের অনেক প্রস্তাব পেয়েছি। এখনো আমার হাতে একটি চিত্রনাট্য রয়েছে। কিন্তু চলচ্চিত্র নিয়ে ভাবছি না। কারণ এখনো সেই সময় আসেনি। উপস্থাপনার জন্য নাটকেই সময় দিতে পারি না, সেখানে চলচ্চিত্র তো প্রশ্নই আসে না। অনেক ভালো ভালো চলচ্চিত্রের প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু আমার মনে হয়েছে আমি প্রস্তুত নই।  

রাইজিংবিডি: প্রায় ছয় বছরের ক্যারিয়ার। ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো ধরনের স্ট্রাগল ছিল কিনা?

নীল: সে ধরনের স্ট্রাগল আমাকে করতে হয়নি। তবে ভালো কাজ করার প্রবণতা ছিল, চ্যালেঞ্জ ছিল। এই চ্যালেঞ্জটা নিজের মধ্যে ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি উপস্থাপনা চালিয়ে যাচ্ছি, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়, পরিবার মেইনটেইন করতে হয়, তার মধ্যে ভালো কাজের একটা চাপ আছে। অনেক সময় ১২-১৬ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। যেহেতু পর্দায় কাজ করি, মানুষকেও ভালো লাগাতে হয়। আমি সারা রাত না ঘুমাতে পারলেও, ক্যামেরায় আমাকে ভালো দেখাতে হয়- এটা একটা চ্যালেঞ্জ বলতে পারেন। 

রাইজিংবিডি: শোবিজে কখনো অপ্রস্তুত হওয়ার মতো প্রস্তাব পেয়েছেন?

নীল: এজন্যই আমি বাইরের কাজে পা বাড়াইনি। সব সময় সম্মান, স্নেহ এবং শিক্ষার মধ্যে সময় কেটেছে। আমার পরিবারের কেউ যেহেতু মিডিয়াতে কাজ করেন না, এজন্য আমি ভয় পেতাম। কারণ মানুষ অনেক সুযোগ নিতে চায়। বাংলাভিশনে অনেক কিছু শিখেছি। আমি অনেক লাকি। কারণ যাদের সঙ্গে কাজ করেছি তাদের ৯৫ শতাংশ ভালো মানুষ। হ্যাঁ, এর মধ্যে একটা দুইটা খারাপ অভিজ্ঞতা তো হয়েছেই। এগুলো এড়িয়ে চলা যায়। কারণ পৃথিবীতে এত মানুষের মধ্যে দুই একজন খারাপ মানুষ তো থাকবেই। আমার যখন মনে হয়েছে, এদের আচরণ ভালো না। আমি এরপর তাদের সঙ্গে আর কাজ করিনি। যারাই নতুন কোনো কাজের কথা বলে আমার সঙ্গে একটু অন্যরকমভাবে কথা বলেছে, অন্যরকমভাবে মিশতে চেয়েছে, তাদের সঙ্গে কাজ করিনি, করবও না। 

রাইজিংবিডি: ক্যারিয়ার নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

নীল: উপস্থাপনায় আরো ভালো করতে চাই। প্রতিনিয়ত আমি শিখছি। আমার ইচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে উপস্থাপনা করার যোগ্যতা অর্জন করা। পাশাপাশি টিভিসি বা অন্য কোনো ভালো কাজ পেলে করব। আর ট্রাভেল করতে খুব পছন্দ করি। সময় পেলেই ঘুরতে চলে যাই।

রাইজিংবিডি: নতুন যারা উপস্থাপনায় আসতে চান তাদের জন্য কী বলবেন?

নীল: এসেই রাতারাতি কিছু হয়ে যাওয়া যায় না। এজন্য অধ্যবসায় প্রয়োজন। মানুষ অনেক কিছু বলবে কিন্তু নিজেরটা নিজেকে তৈরি করতে হবে। নিজে কতটুকু জানি, নিজে কতটা ক্যাপাবল সেটা বুঝে কাজ করতে হবে। প্রতিদিন শিখতে হবে, জানতে হবে। শেখার জন্য জানার জন্য চোখ-কান খোলা রাখতে হবে।



ঢাকা/শান্ত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়