‘মরে গেলেও মানুষ যেন মনে রাখে’
আঞ্জুমান আরা ছোটবেলা থেকেই ভালো গান করতেন। স্বপ্ন ছিল গানে নিয়মিত হওয়ার। কিন্তু বিয়ের পর চাকরি আর সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাছাড়া স্বামীর সম্মতি না থাকায় গানকে বিদায় জানান তিনি। এজন্য স্বপ্নটা অধরাই থেকে যায়। সংসার জীবনে চার কন্যার জননী তিনি। চার মেয়ের মধ্যে জুঁই দ্বিতীয়। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীন স্কুলের এক অনুষ্ঠানে গান গেয়ে সাড়া ফেলেন জুঁই। এরপর নিজের স্বপ্ন ভর করে মেয়ের উপর। মেয়ের মধ্যে সম্ভাবনা দেখে নিজেই তাকে গান শেখাতে শুরু করেন।
জুঁই বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আম্মুর মুখে শুনে শুনে গান শেখা। প্রথমে খুব একটা আগ্রহ ছিল না। আম্মুর আগ্রহ বেশি ছিল। প্রথমবার স্টেজে উঠেই পুরস্কার পেয়েছিলাম। তারপর পাড়া-প্রতিবেশীরাও আমার প্রশংসা করতে লাগলেন। বিষয়টা আমারও ভালো লাগতে শুরু করে। এরপর এলাকার সংগীত একাডেমিতে ভর্তি হই।’
থানা পর্যায়ে শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতায় সেরা হন জুঁই। এরপরই তার জন্য রাখা হয় গানের শিক্ষক। ২০০৯ সালে জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় প্রথম হন। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। শিল্পকলা একাডেমি থেকে উচ্চাঙ্গসংগীতে চার বছরের কোর্স সম্পন্ন করেছেন। এখানে ওস্তাদ হিসেবে পান কেশব ঘোষকে।
২০১২ সালে বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলায় সারা দেশব্যাপী প্রতিযোগিতা হয়। এতেও চ্যাম্পিয়ন হন জুঁই। এরপর রিয়েলিটি শো ‘ক্ষুদে গানরাজ’-এ অংশ নেন। এ প্রতিযোগিতার এসএমএস রাউন্ড পর্যন্ত অংশ নেন। কিন্তু বোন মারা যাওয়ার কারণে প্রতিযোগিতা থেকে সরে আসেন তিনি।
জুঁই বলেন, ‘‘বোনটা মারা যাওয়ার পর আব্বু স্ট্রোক করেন। আমাদের পরিবারের সবার মানসিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এজন্য প্রতিযোগিতায় আর অংশ নেয়া হয়নি। ২০১৬ সালে লেজার ভিশন থেকে আমার একক অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। অ্যালবামটির নাম ‘তুমি বুঝলা না’। এই অ্যালবামে ‘জীবন মানে যন্ত্রণা’ শিরোনামে একটি গান আছে। গানটির কথা ও সুর করেন বাউল সালাম। এই গান গাওয়ার পর বেশ সাড়া পাই। আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক গানের প্রস্তাব আসতে থাকে।’’
নরসিংদী বারৈচা ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ঢাকায় সংগীত কলেজে ভর্তি হন জুঁই। এখন তিনি দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন। নিয়মিত গানও করছেন। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সংগীতার ব্যানারে ‘বুঝলা না’, ‘পোষা পাখি’ শিরোনামে দুটি একক গানে কণ্ঠ দেন। এরপর ‘বিধি’, ‘কী জাদু’, ‘প্রথম প্রেম’, ‘চান্দের আলো’সহ বেশকিছু গান গেয়ে আলোচিত হন।
‘ফোক গান করতেই বেশি ভালো লাগে। পড়াশোনা করছি লোকগানের উপর। ছোটবেলা থেকেই লোকগানের প্রতি একটা ভালোলাগা ছিল। যতগুলো পুরস্কার পেয়েছি তার অধিকাংশই লোকগান গেয়ে পেয়েছি। লোকগানে মা মাটির একটা গন্ধ পাই। গান নিয়ে যতদূর যাওয়া যায়, আমি আমার মতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। মরে গেলেও মানুষ যেন আমাকে মনে রাখে। সংগীতের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই। একবার একটি রিয়েলিটি শোয়ে গান করার পর বিচারক মমতাজ ম্যাডাম কমেন্টস করেছিলেন—‘আমি তোদের মাঝে বেঁচে থাকব। আমি দেখছি ফিউচার মমতাজকে। তোর জন্য অনেক অনেক দোয়া।’ আমার আইডল মমতাজ ম্যাডাম।’’ বলেন জুঁই।
গান লালন করতে গিয়ে নানারকম বিরূপ পরিবেশের মধ্য দিয়ে সময় পার করতে হয়েছে জুঁইকে। তার ভাষায়, ‘গান করতে এসে প্রত্যেকটা মুহূর্তেই প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছি। একবার একটি রিয়েলিটি শোয়ে বিচারকের সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলাম। চূড়ান্ত ফল ঘোষণার পর দেখি আমার নাম নেই। এর আগে আব্বুকে বলা হয়েছিল আমাদের সঙ্গে একটু বসেন। আপনার মেয়ে ভালো পর্যায় যাবে। সেটা করিনি বলেই আমার নাম আসেনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আম্মুকে আব্বুই গান করতে দেননি। এজন্য আম্মুর মনে অপূর্ণতা ছিল। আমি যখন গানে পুরস্কার পেতে শুরু করলাম, তখন আব্বু আমাকে সাপোর্ট দিয়েছেন।’
শাকিব খান-বুবলী অভিনীত ‘শুটার’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন জুঁই। এরপর ‘মধু হই হই বিষ খাওয়াইলা’, ‘মাতাল’, ‘অবতার’সহ বেশ কয়েকটি সিনেমায় প্লেব্যাক করেন। এছাড়া নিয়মিত স্টেজ শোয়ে অংশ নিচ্ছেন। কুমার শানু, জিত গাঙ্গুলি ও জুবিন গার্গের মতো শিল্পীদের সঙ্গে একমঞ্চে গান গেয়েছেন এই কণ্ঠশিল্পী।
ঢাকা/রাহাত সাইফুল/শান্ত/নাসিম
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন