‘ইউনিসেফ আমার স্বপ্নগুলোকে অনুপ্রাণিত করেছে’
|| রাইজিংবিডি.কম
চিত্রনায়িকা মৌসুমী
লিমন আহমেদ
ঢাকা, ১৮ সেপ্টেম্বর: কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবি দিয়ে ১৯৯৩ সালে বাংলা চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেন। তারপর থেকেই সারা দেশের মানুষদের কাছে জনপ্রিয়তা পান। অর্জন করে নিয়েছেন বাংলা চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ খেতাব ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তার প্রাপ্তির ঝুলিতে জমা পড়েছে সাফল্য আর তৃপ্তির অনেক পালক। বলছিলাম চিত্র নায়িকা আরিফা জামান মৌসুমীর কথা। যাকে সবাই কেবল মৌসুমী হিসেবেই জানি।
সম্প্রতি ‘শিশুদের জন্য জাদুকরী কিছু করুন’ এই আহবানে জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, চিত্রনায়িকা মৌসুমী এবং ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন ইউনিসেফ বাংলাদেশের জাতীয় শুভেচ্ছাদূত হিসেবে ঘোষণা করেছে।
এ ঘোষণা উপলক্ষ্যে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধিরা। সম্মেলন শেষে কথা হল মৌসুমীর সাথে। জানালেন নিজের ছেলেবেলায় বুকে পোষে রাখা এক গোপন স্বপ্নের কথা। যা আজ পূরণ হতে চলেছে ইউনিসেফের প্রেরণায়-
রাইজিংবিডি : ইউনিসেফের দূত হিসেবে আপনাকে বাছাই করায় আপনার অনুভূতি কেমন?
মৌসুমী : আমি অভিভূত। ইউনিসেফের মত আন্তর্জাতিক একটি সামাজিক সংগঠনের সাথে এভাবে নিজের নাম জড়ানো যে কোন মানুষের জন্যই অনেক গর্বের।
আমি চেষ্টা করব যে উদ্দেশ্যে ইউনিসেফ আমাকে এই সম্মান দিয়েছে তার যথাযোগ্য মর্যাদা বজায় রাখতে। তাছাড়া সমাজের অবহেলিত শিশুদের জন্য কিছু করতে পারব এটা ভেবেও আমি খুব তৃপ্তিবোধ করছি।
রাইজিংবিডি : আপনার সাথে আরও দুইজনকে শুভেচ্ছাদূত হিসেবে ঘোষনা করেছে ইউনিসেফ। তাদের সম্পর্কে আপনার মুল্যায়ণ কেমন?
মৌসুমী : ইউনিসেফ তারকাখ্যাতি, ইমেজের উপর নির্ভর করে শুভেচ্ছাদূত নির্বাচন করে থাকে। সে জায়গা থেকে জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ এবং ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান অনন্য এবং সঠিক নির্বাচন। তারা দু`জনেই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তারকা। তাদেরকে সাথে টিম মেম্বার হয়ে কাজ করব এটা আমার জন্য আনন্দের।
রাইজিংবিডি : শুভেচ্ছাদূত হিসেবে আপনারা মূলত কি কাজ করবেন?
মৌসুমী : ইউনিসেফ বাংলাদেশের হয়ে আমরা শিশুশ্রম, জন নিবন্ধন, বাল্যবিবাহ, শিশুদের প্রতি সহিংসতা, শিশু ও মাতৃ স্বাস্থ্য, এইচআইভি/এইডস এবং বস্তিতে বসবাস করা শিশুদের সামাজিক সুরক্ষা বিষয়ে প্রচার এবং উন্নয়নমূলক সামাজিক পরিবর্তনের জন্য কাজ করব।
রাইজিংবিডি : এই সম্মানকে আপনি ব্যক্তিগতভাবে কীভাবে মূল্যায়ণ করছেন?
মৌসুমী : দেখুন, একজন অভিনেত্রী হিসেবে আমার সারা জীবনের লক্ষ্য ছিল আমি জনপ্রিয় হব, নতুন প্রজন্মের অভিনেত্রীদের কাছে রোল মডেল হব। সে ভাবনা নিয়েই আমি অভিনয়ের পথে হেঁটেছি। কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে আমার অনেক স্বপ্নই ছিল যা সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেছে।
তার মধ্যে একটি দেশের অবহেলিত মানুষের জন্য কিছু করা, অনাথ-আশ্রয়হীন বা পথ শিশুদের জন্য কিছু করা। আমার বাবার সাথে ছোটবেলায় এ নিয়ে অনেক আগ্রহ প্রকাশ করেছি আমি। বাবাও বলেতন, বড় হয়ে যেন মানুষের জন্য কিছু করি।
যদিও চলচ্চিত্র মানুষেরই জীবনের কথা বলে তবুও বড় হয়ে জীবনের ব্যস্ততায় সেভাবে আর নিজেকে মানুষের পাশে সরাসরি দাঁড় করাতে পারিনি। ইউনিসেফ এবার আমাকে বাংলাদেশের শুভেচ্ছাদূত ঘোষনা করে সেই স্বপ্নগুলোকে অনুপ্রাণিত করেছে।
রাইজিংবিডি : নারী ও শিশুদের নিয়ে আপনার কাজের আগ্রহ আমরা আগেও দেখেছি। এই ভাবনা থেকে আপনি বেশ ক’বছর আগে ‘মৌসুমী ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’ ননামে একটি সংগঠন চালু করেছিলেন। সেটির বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাই?
মৌসুমী : চলছে ভালই। এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। সামনে আরও কিছু কার্যক্রম হাতে নেব।
রাইজিংবিডি : এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে কথা বলি। আপনার সাম্প্রতিক ব্যস্ততা নিয়ে কিছু বলুন?
মৌসুমী : আগের মত করে আর ব্যস্ততা নেই। বাংলা চলচ্চিত্রের কাজ কমে গিয়েছে। প্রযোজক বলেন আর পরিচালক বলেন দু`টোই কম। যারাও বা আছেন, তাদের বেশিরভাগই কাজকে সম্মান করতে জানেন না। চলচ্চিত্র এখন আর দর্শকদের কথা মাথায় রেখে নির্মাণ হয় না। সবাই ব্যস্ত তারকাখ্যাতি নিয়ে।
তারপরও অভিনয় যাদের রক্তে মিশে গেছে তারা কাজ করছেন। আমিও করছি টুকটাক। আসছে ঈদে দুই একটা ছবি মুক্তি পেতে পারে। সম্প্রতি মাহফুজ আহমেদ ও জয়া আহসানের সাথে একটি ছবিতে কাজ করার কথা হয়েছে। আরও কিছু ছবির প্রস্তাব পেয়েছি। চরিত্র ও গল্প বাছাই চলছে। এখন একটু বেছে কাজ করতে চাই।
এছাড়া আসছে ঈদে কিছু নাটক-টেলিফিল্মে কাজ করা হবে। সব মিলেয়ে দর্শকদের সামনে থাকা আরকি।
এর বাইরে পরিবারকে সময় দিচ্ছি। তাদের সাথে ব্যস্ত থাকছি। বেশ তো কেটে যাচ্ছে সময়।
রাইজিংবিডি/এলএ
রাইজিংবিডি.কম