সালমানের সঙ্গে আমিও মরে গেছি: ডন
ঢাকাই চলচ্চিত্রের আকাশচুম্বী জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ। মাত্র চার বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। এর মধ্যে ২৫টি সিনেমায় সালমানের সঙ্গে অভিনয় করেন খল অভিনেতা ডন। তাদের সঙ্গে ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকাকালীন ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় সালমান শাহর।
লাশ উদ্ধারের পর ধারণা করা হয়, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু পরিবারের দাবি, তাকে খুন করা হয়েছে। তার মৃত্যু রহস্যের জট দুই দশক পেরিয়ে গেলেও খোলেনি। অভিযোগের তীর ডনের দিকেও রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে রাইজিংবিডির প্রতিবেদক রাহাত সাইফুল’র সঙ্গে কথা বলেছেন ডন। এ আলাপচারিতার বিশেষ অংশ তুলে ধরা হলো—
রাইজিংবিডি: সালমান শাহর সঙ্গে আপনার পরিচয় কীভাবে?
ডন: সালমান শাহ তার অভিনয় জীবনে ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করেছে। এর মধ্যে ২৫টি সিনেমায় আমি কাজ করেছি। আমার সঙ্গে প্রথম পরিচয় ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে। এতে আমরা একসঙ্গে প্রথম কাজ করি। তখন দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। এই আর কি!
রাইজিংবিডি: প্রথম সিনেমার শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
ডন: আমরা প্রথম সিনেমার শুটিং করতে কক্সবাজার গিয়েছিলাম। এসময় আমি সালমান আর আমার বন্ধু মিঠু ছিল। তখন আমাদের কেউ চিনে না। মিঠু ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে কমেডি করত। ওকে সবাই চিনত। শুটিংয়ের ফাঁকে আমরা সমুদ্র সৈকতে গিয়েছিলাম। যাওয়ার পর অনেক লোকজন মিঠুর সঙ্গে ছবি তুলতে শুরু করে। এ অবস্থায় আমরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যাই। আমি আর সালমান মনে মনে একটু কষ্ট পেলাম। কারণ আমাদের কেউ চিনে না অথচ মিঠুর জন্য এত লোকের ভিড়। রুমে আসার পর মিঠু বলল, ‘দোস্ত আজ আমার জন্য এত ভিড়! এক বছর পরে ঠিক তোদের জন্য এর থেকে বেশি মানুষের ভিড় হবে। সিনেমা মুক্তির পর তোদের জন্য মানুষ দৌড়া-দৌড়ি করবে।’ এক বছর পর আমরা যখন কক্সবাজার গেলাম তখন দুই মিনিটের মধ্যে পাবলিক দৌড়া-দৌড়ি করে আমাদের চারপাশে ভিড় জমিয়েছিল। সবাই ছবি তুলে, অটোগ্রাফ নেয়। এ রকম হাজার হাজার স্মৃতি রয়েছে।
রাইজিংবিডি: আপনারা ভালো বন্ধু ছিলেন। শুটিং শেষে কীভাবে অবসর সময় কাটাতেন?
ডন: আমরা শুটিং শেষ করে অনেক সময় লং ড্রাইভে চলে যেতাম। সালমান ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসত। আমরা আউটডোরে গেলে ক্রিকেট খেলতাম। সালমান খুব মিশুক ছিল। দর্শকদের ও চরম ভালোবাসত। সালমানের অধিকাংশ পোশাক আমি ডিজাইন করতাম।
রাইজিংবিডি: সালমান শাহর মৃত্যুর পর তাকে হত্যার অভিযোগের তীর আপনার দিকেও রয়েছে…
ডন: সালমানের আম্মা সালমানের কোনো বন্ধুকে দেখতে পারতেন না। এটা ওনার ব্যক্তিগত বিষয়। তিনি মনে করতেন, সালমানের বন্ধুরা সবাই সালমানের উপর বসে বসে খাচ্ছে। এ জন্যই আমাকে ফারুকসহ অন্যদের দেখতে পারতেন না সালমানের আম্মা। সামনে গেলে খুবই আদর করতেন। কাউকে বুঝতেই দিতেন না। তিনি খুব ভালো অভিনয় করেন। এখনো তিনি অভিনয় করেন। আমাদের মামলাটা এখন পিবিআইয়ের কাছে আছে। তারা দেখছেন। আমরা ক্রিমিনাল হলে এখনো ওপেন থাকতে পারতাম না। এখনো কাজ করতে পারতাম না। আর সত্য কখনো গোপন থাকে না।
সালমান আমার কেমন বন্ধু ছিল তা চলচ্চিত্রের সবাই জানেন। ওর সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয়েছিল ১ সেপ্টেম্বর। এর পরের দিন আমি বগুড়ায় চলে যাই। কারণ আমার ভাই বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছিলেন। অতএব আমাকে শুধু শুধু দোষারোপ করা হচ্ছে। তাছাড়া এসব বিষয়ে ৫০ বারের মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জবানবন্দি দিয়েছি।
রাইজিংবিডি: আপনার সঙ্গে একটি অন্তরঙ্গ ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। এই ছবির পেছনের গল্প কী?
ডন: সাবরিনা নামে একজন নায়িকা ছিল। ওর সঙ্গে সালমান দুষ্টামি করে ছবিটা তুলেছিল। একটা রেপ সিন ছিল ওটা। এটা তুলে সালমান আমাকে বলেছিল, ‘এই ছবি দিয়ে তোকে ব্ল্যাকমেইল করব।’ এই টাইপের মজা সালমান অনেক করেছে। তখন তো আমরা জানতাম না সালমান মারা যাবে। আজ এই ছবি আমার জন্য অপমানের কারণ হয়েছে!
রাইজিংবিডি: চলচ্চিত্রে আপনাকে খুব বেশি দেখা যায় না কেন?
ডন: সালমানের মৃত্যুর পর আসলে আমি সেরকমভাবে কারো সঙ্গে মিলিয়ে কাজ করতে পারছিলাম না। তাই কম কাজ করছি। বলা যায়, সালমানের সঙ্গে আমিও মরে গেছি।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯/রাহাত/শান্ত
রাইজিংবিডি.কম