মহেশ বাবু-নম্রতার প্রেমের অজানা গল্প
বিনোদন ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম
‘প্রিন্স অব টলিউড’খ্যাত অভিনেতা মহেশ বাবু। পর্দায় অসাধারণ অভিনয় এবং অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব গুণের কারণে অসংখ্য ভক্ত তার। এর মধ্যে নারী ভক্তের সংখ্যাও কম নয়। তবে গত দুই দশক ধরে মহেশের মনের রানি হয়ে আছেন নম্রতা শিরোদকর।
শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু করেন মহেশ। ১৯৯৯ সালে ‘রাজা কুমারাড়ু’ সিনেমায় নায়ক হিসেবে পর্দায় অভিষেক ঘটে। বক্স অফিসে সিনেমাটি হিট হয়। ক্যারিয়ারের তৃতীয় সিনেমায় এসে নম্রতার সঙ্গে মহেশের পরিচয়। ‘ভামসি’ সিনেমায় একসঙ্গে অভিনয় করেন তারা। আর এখান থেকেই তাদের প্রেমের সম্পর্কের শুরু।
মডেলিং ক্যারিয়ারে বেশ ভালো সময় পার করছিলেন নম্রতা। ১৯৯৩ সালে ‘মিস ইন্ডিয়া’ হন। এরপর ভারতের হয়ে ‘মিস ইউনিভার্স’ আসরে প্রতিনিধিত্ব করে পঞ্চম হন। তারপর বেশ কয়েকটি মডেলিং প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করেছেন। ১৯৯৮ সালে সালমান খান ও টুইঙ্কেল খান্নার সঙ্গে ‘জব প্যায়ার কিসিসে হোতা হ্যায়’ সিনেমায় প্রথম অভিনয় করেন তিনি। ‘ভামসি’ তার প্রথম তেলেগু সিনেমা। তবে এর আগে কয়েকটি হিন্দি ও দক্ষিণী সিনেমায় অভিনয় করেছেন নম্রতা।
‘ভামসি’র মহরত অনুষ্ঠানে মহেশ-নম্রতার প্রথম দেখা। খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও প্রথম দেখাতেই পরস্পরের প্রতি তাদের ভালোলাগা তৈরি হয়। কিন্তু তাদের সম্পর্কের বড় বাধা ছিল— নম্রতা মহেশের চেয়ে চার বছরের বড়। অন্যদিকে, বলিউড নির্মাতা-অভিনেতা মহেশ মাঞ্জরেকরের সঙ্গে নম্রতার প্রেমের গুঞ্জন তখন তুঙ্গে। যদিও বিষয়টি সবসময়ই অস্বীকার করেছেন এই অভিনেত্রী। তবে সকল বাধা অতিক্রম করে ধীরে ধীরে জোরালো হতে থাকে মহেশ-নম্রতার সম্পর্ক।
‘ভামসি’ সিনেমার শুটিং শুরুর পর দিন যত গড়াতে থাকে মহেশ-নম্রতার রিয়েল লাইফের সম্পর্কও গভীর হতে থাকে। দক্ষিণে নম্রতা খুব একটা পরিচিত মুখ ছিলেন না। মহেশও তখন নতুন। কিন্তু প্রেমের গুঞ্জনের কারণে সবার নজরে পড়েন দুজন।
টানা চার বছর চুপি চুপি প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যান মহেশ-নম্রতা। ২০০৪ সালে ভালোবাসার বিষয়টি প্রকাশ করেন। ২০০৫ সালে তাদের বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়। সম্পর্কের শুরুর দিকেই মহেশ নম্রতাকে জানিয়েছিলেন, বিয়ের পর স্ত্রীকে কাজ করতে দিতে চান না তিনি। এমন একজনকে জীবনসঙ্গী চান, যে তার সন্তান ও সংসারের দেখাশোনা করবেন। তাই বিয়ের আগেই নতুন সিনেমায় চুক্তি ও পুরোনো কাজগুলো একে একে শেষ করতে থাকেন নম্রতা।
জানা যায়, সম্পর্কের বিষয়টি মহেশের মা-বাবা খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেননি। শুধু এই অভিনেতার বোন মঞ্জুলা রাজি ছিলেন। যেহেতু মহেশ ও নম্রতা দুজনই কাজ নিয়ে ব্যস্ত, তাদের বিয়ের সম্পূর্ণ দায়িত্ব ছিল নম্রতার পরিবারের হাতে। মুম্বাইয়ের ম্যাট্রিয়ট হোটেলে এই জুটির বিয়ের আয়োজন করা হয়।
বিয়ের এক সপ্তাহ আগেও বাকি থাকা প্রজেক্টের কাজ করেছেন নম্রতা। অন্যদিকে ৯ ফেব্রুয়ারি রাতেও ‘আথাড়ু’ সিনেমার শুটিং শেষ করেন মহেশ। পরদিন ২০০৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বসেন বিয়ের পিঁড়িতে। বিয়েতে শুধু দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় দুজনই বেশ হাসিখুশি ছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মহেশ এক সাক্ষাৎকারে জানান, এদিন বেশ নার্ভাস ছিলেন তিনি। কারণ নম্রতার সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি সবাই কীভাবে নেবেনে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন এই অভিনেতার পরিবার।
২০০৬ সালে এই জুটির ঘর আলো করে আসে প্রথম সন্তান গৌতম কৃষ্ণা। কিন্তু এরপরই শুরু হয় সম্পর্কের টানাপোড়েন। জানা যায়, তাদের সম্পর্ক এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে, ছেলেকে নিয়ে হায়দরাবাদ ছেড়ে বাবার বাড়ি মুম্বাইয়ে থাকতে শুরু করেন নম্রতা। মহেশ মাঝে মাঝে গিয়ে স্ত্রী-পুত্রের সঙ্গে দেখা করতেন। কিছুদিন এভাবে চলার পর সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয় এবং ছেলেকে নিয়ে হায়দরাবাদে ফিরে যান নম্রতা।
এ প্রসঙ্গে ২০১৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে নম্রতা বলেন, ‘বিয়ের তিন বছর পর আমাদের সম্পর্ক ধরে রাখা অনেক কঠিন হয়ে ওঠে। অভিনয় ক্যারিয়ারে বিরতি, মা-বাবাকে হারানো, ফ্লপ সিনেমা সব মিলিয়ে সংসারে প্রভাব পড়ে। তবে ওই সময় জুটি ও ব্যক্তিগতভাবে আমাদের আরো শক্ত করেছে। এখন আমাদের ভিত্তিটা আরো মজবুত। আমার মনে হয় সেই সময়গুলো আমাদের জন্য আশীর্বাদই ছিল।’
মারুফ/তারা