শততম জন্মবার্ষিকীতে তাদের সত্যজিৎ ভাবনা
ভারতীয় উপমহাদেশের কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়। সেলুলয়েডে তিনি জীবনের ছবি এঁকেছেন। ‘পথের পাঁচালী’ কিংবা ‘অপুর সংসার’ তাঁর হাত ধরেই সাহিত্যের পাতা থেকে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। আজ এই কিংবদন্তির শততম জন্মবার্ষিকী।
বিশেষ এই দিনটিতে সত্যজিৎ রায়কে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন চলচ্চিত্রপ্রেমীরা। বরেণ্য এই নির্মাতা আজও চিত্রপরিচালকদের অনুপ্রেরণা। এ প্রসঙ্গে নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান বলেন, ‘সত্যজিৎ রায় আমাদের আইডল। আমার ওস্তাদ ছিলেন শিবলী সাদিক। তিনি সত্যজিৎ রায়ের কাছ থেকে কাজ শিখেছেন। সত্যজিৎ রায়ের ছবি দেখেই চলচ্চিত্র নির্মাণে তিনি আগ্রহী হয়েছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের প্রভাব তার অনেক কাজে রয়েছে। যেমন মহাপ্রলয়ের পর দেখানো হচ্ছে একটা ব্যাঙ উল্টে পড়ে আছে। এই ব্যাঙ দেখে বোঝা যাবে এখানে মহাপ্রলয় বা তেমন কিছু একটা ঘটেছে। এটা সত্যজিৎ রায় শিখিয়েছেন। তিনি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতেন। হাস্যরসের মাধ্যমেও বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে পারঙ্গম ছিলেন।’
সত্যজিৎ রায়কে উপমহাদেশের ‘চলচ্চিত্রের ঋষি’ উল্লেখ করে চিত্রপরিচালক জাকির হোসেন রাজু বলেন, ‘তিনি বাণিজ্যের জন্য কাজ করেননি। করেছেন প্রাণের তাগিদে। জগৎবিখ্যাত নির্মাতা ও বোদ্ধারা তাকে নিয়ে মন্তব্য করেছেন। আমি বিশ্বাস করি, তার কাজ চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে অবশ্যই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। বিশেষ করে বিকল্প ধারার নির্মাতারা সত্যজিৎয়ের মূল প্রেরণা।’
এ সময়ের চলচ্চিত্র নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম। তিনি সত্যজিৎ স্মরণে বলেন, ‘আমি খুবই গর্ববোধ করি তিনি একজন বাঙালি। এই উপমহাদেশে মননশীল সিনেমার ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। চলচ্চিত্র একটা গুরত্বপূর্ণ শিল্পমাধ্যম এবং এর পথিকৃৎ সত্যজিৎ রায়। তার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা বলবো- সাহিত্যভিত্তিক সিনেমা করে সিনেমাকে সাহিত্যের মধ্যে আবদ্ধ রাখেননি। সিনেমা যে আলাদা এটা তিনি বারবার প্রমাণ করেছেন। তার অধিকাংশ সিনেমা লিটারেচার নির্ভর। যেগুলো তিনি সাহিত্য থেকেই নিয়েছেন, কিন্তু সাহিত্যকে অসত্য করেননি। আমি ডায়ালগ লিখতাম। কিন্তু ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ দেখার পর আমার ডায়ালগ লেখার টোন চেঞ্জ হয়ে গেছে। সেখান থেকে আমি এতোটাই অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম।’
১৯২১ সালের ২ মে কলকাতায় জন্মেছিলেন সত্যজিৎ রায়। ১৯৮৩ সালে ‘ঘরে বাইরে’ সিনেমার কাজ করার সময় হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর থেকে কাজের গতি অনেকটাই কমে যায়। ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন মহান এই চলচ্চিত্রকার। মৃত্যুর মাত্র এক সপ্তাহ আগে সত্যজিৎ রায় পান বিশ্ব চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সন্মানজনক অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড (অস্কার)। জীবদ্দশায় তিনি অর্জন করেন ৩২টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার।
ঢাকা/তারা