বলিউডকে পেছনে ফেলে জনপ্রিয় হচ্ছে দক্ষিণের সিনেমা
ধানুশ, সাই পল্লবীদের ভক্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে
কয়েক বছর আগেও যদি ভারতীয় সিনেমার বিষয়ে জানতে চাওয়া হতো, বলিউডের সিনেমাগুলো নিয়েই আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকত। সালমান, শাহরুখ, আমির খানদের সিনেমা থাকত আড্ডার বিষয়।
কিন্তু সেই ধারায় পরিবর্তন আসছে। ধীরে ধীরে ভারতের দক্ষিণী সিনেমার কাছে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে বলিউড! এক সময় দক্ষিণের সিনেমা বলতে তামিল ইন্ডাস্ট্রিকে মনে করতেন সবাই। কিন্তু দক্ষিণের ইন্ডাস্ট্রি মানে তামিল, তেলেগু, মালায়ালাম কিংবা কন্নড় ভাষার সিনেমা বোঝায়— দর্শক সেই পার্থক্য এখন করতে পারেন।
রজনীকান্ত, কমল হাসান, নাগার্জুনা, পবন কল্যাণ, মোহনলালা, মামুত্তি কিংবা চিরঞ্জীবীর সিনেমার মাধ্যমেই মূলত দক্ষিণী সিনেমার সঙ্গে বাংলাদেশের দর্শকদের পরিচয়। এরপর তালিকায় যোগ হয়েছেন— ধানুশ, সুরিয়া, চিয়ান বিক্রম, থালাপতি বিজয়, রবি তেজা, বিজয় সেতুপাত্তি, বিশাল, আল্লু অর্জুন, জুনিয়র এনটিআর, রাম চরণ, মহেশ বাবু, নাগা চৈতন্য, নানি, কিচা সুদীপ, প্রভাস, যশ, বিজয় দেবরকোন্ডা, দুলকার সালমান, পৃথ্বিরাজ প্রমুখ। এদের খ্যাতির ভিড়েই যেন হারিয়ে যেতে বসেছেন শাহরুখ, সালমান, আমিরদের মতো সুপারস্টার।
সিনেমায় প্রভাস ও আনুশকা শেঠির রোমান্স দেখে মুগ্ধ হয়েছেন দর্শক
নয়নতারা, আনুশকা শেঠি, কাজল আগরওয়াল, সাই পল্লবী, সামান্থা আক্কিনেনি, কীর্তি সুরেশ, রাশমিকা মান্দানা, রাশি খান্না, পূজা হেগড়ের মতো নায়িকারা অভিনয়ের পাশাপাশি রূপের দ্যুতি দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করছেন। সেই দিক থেকে আলোচনা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছেন কারিনা কাপুর, ক্যাটরিনা কাইফ কিংবা আলিয়া ভাটের মতো অভিনেত্রীরা।
বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে বলিউডের চেয়ে বাংলাদেশের দর্শকরা বেশি আলোচনা করেছে দক্ষিণী সিনেমা নিয়ে। প্রভাসের ‘বাহুবলি’ সিনেমাটি এক্ষেত্রে মাইলফলক হিসেবে কাজ করেছে। এরপর যশ অভিনীত ‘কেজিএফ: চ্যাপটার ওয়ান’ সেই উন্মাদনার পালে নতুন করে হাওয়া দিয়েছে। তারও আগে ‘এগা’ বা ‘মাক্ষী’, রাম চরণের ‘মাগাধীরা’ কিংবা দুলকার সালমানের ‘চার্লি’ সিনেমাপ্রেমীদের জন্য সেই পথ তৈরি করে দিয়েছিল।
রাঙ্গাস্থালাম সিনেমার দৃশ্যে সামান্থা আক্কিনেনি ও রাম চরণ
বর্তমানে ধানুশ অভিনীত ‘আসুরান’ কিংবা ‘কারনান’ সিনেমাপ্রেমীদের মগজে নতুন করে ভাবনা তৈরি করছে। আলোচনায় উঠে এসেছে সুরিয়ার ‘সুরারোই পোট্রু’। মুভি ডাটাবেজ আইএমডিবি’র জরিপে সবচেয়ে বেশি রেটিং পাওয়া সিনেমার দৌড়ে তৃতীয় এটি। মহেশ বাবুর ‘মহর্ষি’, ‘ভারত আনে নেনু’র মতো সিনেমাগুলোয় সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরতে দেখে দর্শক হয়তো মনে মনে বলছেন— চলচ্চিত্র মানে যদি হয় জীবনের প্রতিচ্ছবি তাহলে দক্ষিণের সিনেমাগুলোতেই তা বেশি দেখা যায়। মালায়ালাম সিনেমাগুলোর সিনেমাটোগ্রাফি কিংবা অসাধারণ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে মুগ্ধ হচ্ছেন সিনেমাপ্রেমীরা। বলিউড যেখানে একের পর এক সিনেমা দিয়ে প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে সেখানে দক্ষিণী সিনেমাগুলো গল্প ও অভিনয় দিয়ে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে সিনেমাবোদ্ধা ও দর্শকদের। এর প্রকৃত উদাহরণ হতে পারে কয়েকদিন আগে মুক্তি পাওয়া ‘দৃশ্যম-টু’।
আরো পড়ুন: দক্ষিণে গল্পে চমক, সিক্যুয়েল রিমেকে আটকে বলিউড
এছাড়া দক্ষিণী সিনেমার রিমেক বানিয়ে বলিউডে হিট হওয়ার নজিরও রয়েছে। তেলেগু ভাষার ‘অর্জুন রেড্ডি’ সিনেমার রিমেক ‘কবির সিং’। ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি আয় করা ও আলোচিত সিনেমা ছিল এটি। এছাড়া শহিদের পরবর্তী সিনেমা ‘জার্সি’। সেটিও দক্ষিণী সিনেমার রিমেক। শোনা যাচ্ছে, সাড়া জাগানো তামিল সিনেমা ‘বিক্রম বেদা’র রিমেক হচ্ছে বলিউডে।
দুলকার সালমানের চার্লি সিনেমাটি এখনো উপভোগ করেন সিনেমাপ্রেমীরা
বর্তমানে মুক্তি প্রতীক্ষিত বেশ কয়েকটি সিনেমার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন দর্শক। এর মধ্যে রয়েছে— বাহুবলি সিনেমাখ্যাত পরিচালক এস এস রাজামৌলি পরিচালিত ‘রুদ্রম রণম রুধিরাম’। এতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করছেন রাম চরণ, জুনিয়র এনটিআর। এছাড়া চলতি বছর মুক্তি পাবে যশ অভিনীত ‘কেজিএফ: চ্যাপটার টু’। এই সিনেমা নিয়েও দর্শকের উন্মাদনার শেষ নেই। অন্যদিকে, প্রভাসের ‘রাধে শ্যাম’ সিনেমার জন্যও দিন গুণছেন ভক্তরা। তাহলে কি সত্যিই আমির, শাহরুখ, সালমানদের দিন ফুরিয়ে গেল?
ঢাকা/তারা