অর্থ, খ্যাতি পেয়েও তারকারা মাদকাসক্ত হন কেন?
ক্লাবে যাতায়াত, ভাঙচুর সম্প্রতি বিতর্কে জড়িয়েছেন পরীমনি
মাদক জীবন ধ্বংস করে। সাধারণ মানুষ তো বটেই, বিভিন্ন অঙ্গনের সেলিব্রেটিদেরও মাদকাসক্ত হওয়ার বাজে উদাহরণ রয়েছে। বিশেষ করে বিশ্বের বিভিন্ন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অনেক তারকার নাম রয়েছে এই তালিকায়।
অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যার পর বলিউডের অনেক তারকার নাম প্রকাশ্যে এসেছে যারা মাদকাসক্ত। এমনকি সুশান্ত সিং নিজেও গাঁজা সেবন করতেন বলে দাবি করেছে ভারতের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই)।
বলিউড অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত, রণবীর কাপুর, মণীষা কৈরালা, ফারদিন খানের মতো তারকারা নিজেই স্বীকার করেছেন মাদকাসক্ত হওয়ার কথা। কিছুদিন আগে খোদ ‘বলিউড কুইন’ কঙ্গনা রাণৌত এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, বলিউডের ৯৯ শতাংশ তারকাই মাদকাসক্ত। হলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির চিত্র এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশের শোবিজ অঙ্গনের অনেক তারকার নামও শোনা যায়! এখন প্রশ্ন হলো- অর্থ-বৈভব, খ্যাতি পেয়েও তারকারা কেন মাদকাসক্ত হন?
সঞ্জয়-রণবীর-সুশান্ত প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই মাদকের অভিযোগ রয়েছে
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে কথা হয় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মাদকাসক্ত হওয়ার নানাবিধ কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, পিআর প্রেসার। সমবয়সীদের চাপ। সমবয়সীরা একটা সার্কেল মেনটেইন করে। এই সার্কেলের বড় একটা অংশের সদস্য যখন মাদক নেন, তখন অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাকিরা মাদক নেওয়া শুরু করে। আমরা এটাকে পিআর প্রেসার বলি। আপাতদৃষ্টিতে যাদেরকে সফল, বিত্তবান মনে করি, তাদের মনোজগতের বিষয়ে কিন্তু আমরা জানি না। তাদের মনোজগতের কোথাও একটা ঘাটতি বা অভাব রয়েছে। সেই অভাব পূরণ করতে তারা অনেক সময় মাদকের আশ্রয় নিয়ে থাকে, যেটা একটা ভুল আশ্রয়। আর যারা তারকা, তারা অনেক সময় নিজেকেই নিজে পরাজিত করতে চান। তাদের পারফরম্যান্স অ্যাংজাইটি থাকে। তারা নিজেদের ছাপিয়ে যেতে চান। কখনো নিজেকে ছাপিয়ে যেতে অপারগ হলে, তারা মাদক বা এই ধরনের অযাচিত বিষয়ের আশ্রয় নেন।’
তারকা বা শিল্পমনস্ক মানুষ নিজের একটি জগতে থাকার জন্য মাদকের আশ্রয় নিয়ে থাকেন—এমন কথা কেউ কেউ বলেন। কিন্তু এটি সঠিক নয় দাবি করে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘যারা মাদক গ্রহণ করেন, তারা সমাজ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েন। কিন্তু শোবিজ জগতের মানুষেরা সমাজের মধ্যেই থাকতে চান। তারা সমাজের ভালোবাসা-সমর্থন চান। তাদের ভক্ত বাড়ুক সেটা চান। এই জায়গায় যখন ঘাটতি তৈরি হয়, তখন তারা এই ঘাটতি পূরণের জন্য মাদকের আশ্রয় নেন।’
কঙ্গনা রাণৌত এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, বলিউডের ৯৯ শতাংশ তারকাই মাদকাসক্ত
মানসিক এই সংকট থেকে পরিত্রাণের পথ বাতলে দিয়েছেন হেলাল উদ্দিন আহমেদ। পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘শোবিজ অঙ্গন বা অন্য যে কোনো অঙ্গনের তারকাদের তারকাখ্যাতি মাথায় রেখেই গণমানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে। তারা অনেক সময় গণমানুষ বা সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। যা তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। যারা শোবিজ তারকা আছেন তাদের বলব, আপনারা দর্শক বা ভক্তের জন্যই তারকা। সুতরাং দর্শক বা ভক্তের কাছাকাছি নেমে এসে যদি সাধারণ মানুষের কাতারে অবস্থান নিতে পারেন, তখন আর মাদকের আশ্রয় নিতে হবে না।’
ঢাকা/তারা