পরীকাণ্ডে পুরোনো প্রশ্ন: চলচ্চিত্রে কে বন্ধু কে শত্রু
‘হলিউড এমন এক জায়গা যেখানে একটি চুমুর জন্য হাজার ডলার পাওয়া যায়। কিন্তু হৃদয়ের কথা বলার জন্য মাত্র পঞ্চাশ সেন্ট।’ হলিউড সুপার স্টার, বিশ্বখ্যাত মডেল-অভিনেত্রী মেরিলিন মনরোর এই উক্তি এখনও অনেকেই স্মরণ করেন।
সম্প্রতি মাদক-কাণ্ডে অভিনেত্রী পরীমনি গ্রেপ্তার হন। এ ঘটনায় শিল্পী সমিতি তার সদস্যপদ স্থগিত ঘোষণা করে। সব মিলিয়ে ব্যাকফুটে এই নায়িকা। অথচ ক’দিন আগেও তাকে নিয়ে যারা সরব ছিলেন, চলচ্চিত্র অঙ্গনের তারাও আজ আশ্চর্য রকমের নীরব। প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কি পরীমনি তার চলচ্চিত্র যাত্রায় কোনো বন্ধু তৈরি করতে পারেননি?
এই প্রশ্ন উসকে দিয়েছে প্রয়াত নায়ক মান্নার একটি মন্তব্য। মান্না এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন: ‘পৃথিবীতে চলচ্চিত্র জগতের মতো স্বার্থপর কোনো জগৎ আর নেই। এখানে আমরা সবাই বাণিজ্যিক। হৃদয়, প্রেম, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, চাওয়া-পাওয়া সব মেকি। সিনেমার কেউ যদি বুকে হাত দিয়ে বলে- আমরা সবাই এক পরিবার; না, মিথ্যে। সবাই আলাদা।’
এ দিকে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক, চিত্রনায়ক জায়েদ খান গত ৭ আগস্ট পরীমনি সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলন শেষে বলেন, ‘আপনি যদি আপনার পাশে কাউকে না পান, তাহলে বুঝতে হবে এটা আপনার ব্যর্থতা। তার মানে আপনি কর্মজীবনে ভালো বন্ধু বানাতে পারেননি। কারও প্রতি আপনার ভালোবাসা ছিল না। চলচ্চিত্রে বন্ধু হয় না- এটা ভুল কথা।’
কথায় বলে বন্ধুভাগ্য সবার সমান হয় না। জীবনে ভালো বন্ধু পাওয়া সৌভাগ্যেরও বটে। এ প্রসঙ্গে চিত্রনায়ক সোহেল রানা বলেন, ‘একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়, বিপদে হয়তো পাশে দাঁড়াবে কিন্তু বন্ধুত্ব ভিন্ন বিষয়।’ চলচ্চিত্রে সোহেল রানা এবং ওয়াসিমের বন্ধুত্বের কথা অনেকেরই জানা। ‘চলচ্চিত্রে যার সঙ্গে আমার ভালো বন্ধুত্ব ছিল সে হলো ওয়াসিম। আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা একসঙ্গে পড়াশোনা করেছি। এরপর ফিল্মে একসঙ্গে কাজ করেছি। আমাদের সম্পর্ক ছিল তুই তোকারির।’ বলেন সোহেল রানা।
অর্থাৎ চলচ্চিত্রেও বন্ধুত্ব সম্ভব। সব কিছুই টাকায় বিনিময় হয় না। সোহেল রানা বলেন, ‘আমারা হৃদয় দিয়ে কাজ করতাম। এখন কাজ করে ব্রেইন দিয়ে। ব্রেইন দিয়ে যদি মনে করে ওমুকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করলে লাভ হবে তাহলে বন্ধুত্ব করে। আমরা এই অঙ্ক করতাম না। এখনকার হিরোরা বুকের মধ্যে স্থান করে নিতে পারে না।’
চিত্রপরিচালক হিসেবে কাজী হায়াৎ আলাদা একটি জায়গা দখল করে আছেন। বাংলা চলচ্চিত্রের অনেক উত্থান-পতনের সাক্ষী তিনি। ‘চলচ্চিত্রে বন্ধু হয়’ বলেই মনে করেন এই নির্মাতা। পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ হান্নান বন্ধু ছিলেন উল্লেখ করে কাজী হায়াৎ বলেন, ‘এটা ম্যান টু ম্যান ভ্যারি করে। আর্ট লাইনে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ঈর্ষাপরায়ণতা খুব বেশি। ঈর্ষা থেকে জন্ম হয় প্রতিহিংসা, প্রতিহিংসা থেকে প্রতিঘাত। এর শুরু পরশ্রীকাতরতা দিয়ে। একজনের ভালো আরেকজন দেখতে পারে না। আর্ট লাইনে এটা বেশি হয়। তাদের মধ্যেই এটা দেখা যায় না যারা এসবের উর্ধ্বে চলে যান, খ্যাতি অর্জন করেন। তখন তাদের বন্ধুত্ব অটুট থাকে।’
এ প্রসঙ্গে চিত্রনায়ক ফেরদৌসের ভাবনা ভিন্ন। তিনি মনে করেন, ‘চলচ্চিত্রে কেউ বন্ধু বানাতে আসে না। এটা প্রফেশনাল জায়গা। প্রফেশনাল সম্পর্ক হয়।’
‘চলচ্চিত্রে কাজ করতে গিয়ে একটা সুসম্পর্ক হয়। যতক্ষণ কাজ করি ততক্ষণ সম্পর্ক থাকে। যখন কারো খারাপ সময় যায়, তার পাশে দাঁড়ানোর অনেক সময় সুযোগও হয় না। তাই আমি কারো কাছ থেকে প্রত্যাশাও করি না।’ বলেন দুই বাংলায় জনপ্রিয় এই নায়ক।
কীভাবে হলো পরীমনি-রাজের রাজযোটক
ঢাকা/তারা