ঢাকা     বুধবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৪ ১৪৩১

‘ঈদের সময় কীভাবে কাটাতাম বলে কষ্ট বাড়াতে চাই না’

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৮, ২৫ এপ্রিল ২০২৩  
‘ঈদের সময় কীভাবে কাটাতাম বলে কষ্ট বাড়াতে চাই না’

আবু মুসা দেবু

দেবব্রত সেনগুপ্ত। ওরফে আবু মুসা দেবু। বাংলা চলচ্চিত্রের প্রায় শুরুর কাল থেকে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে থাকা এক চলচ্চিত্র-কুশলী। ‘স্টপ জেনোসাইড’, ‘এ স্টেট ইজ বর্ন’, ‘লিবারেশন ফাইটার্স’, ‘ইনোসেন্ট মিলিয়নিয়ার’ তথ্যচিত্রগুলোর তিনি চিত্র সম্পাদক। ১৯৬০ সালে ‘সূর্য স্নান’ দিয়ে শুরু। এরপর  অসংখ্য সিনেমার চিত্র সম্পাদনা করেছেন। তবে এখন নেই কোনো ব্যস্ততা। চলচ্চিত্রের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয় ইতিহাসের নন্দিত এই চলচ্চিত্র সম্পাদকের সঙ্গে।

রাহাত সাইফুল : ঈদ মানেই এক সময় চলচ্চিত্র পাড়া সরগরম থাকত। আপনি সেই সোনালি সময়ের মানুষ। তখন আসলে ঈদের সময়টা কেমন কেটেছে?  

আবু মুসা দেবু : ওসব বলে আর কষ্টটা বাড়াতে চাই না। চান রাতেও আমরা কাজ করেছি। যেভাবে হোক সিনেমা রিলিজ দিতে হবে। কাজের ক্ষেত্রে আমরা কোনো কার্পণ্য করিনি, অর্থের দিকে তাকাইনি। সব সময় চেয়েছি সিনেমাটা ভালো হোক। সেই চিন্তা করে কাজ করেছি। আর এখন তো দেখি শুটিং হলেই কোনো মতে সিনেমা রিলিজ করে দেয়। মনে করে রিলিজ করলেই টাকা আসবে। আসলে দর্শক চাহিদা যদি আমরা পূরণ করতে না পারি সে সিনেমা চলবে না।

রাহাত সাইফুল : চলচ্চিত্র সম্পাদনার কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মূল্যায়ন কতটা হচ্ছে বলে মনে করেন? 

আবু মুসা দেবু : আমরা এখন এডিটিং সেকশনটাকে মূল্যায়ন করি না। কিন্তু সিনেমায় এডিটিং সেকশনটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। আপনি যত শুট করেন, আপনার ভুল সংশোধনের একমাত্র জায়গা এডিটিং। আপনি যে থিম নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করলেন সেটা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলবে এডিটিং।  
আগে পরিচালকেরা সিনেমা নির্মাণ করার সময় এডিটরের সঙ্গে বসে মিটিং করতেন। তার চাওয়া সুন্দরভাবে বলতেন। এডিটরের সঙ্গে বসে পরামর্শ করতেন। এডিটরের উপর তারা নির্ভর করতেন। একটা সিনেমা নির্মাণের আগে এডিটর, ক্যামেরাম্যান, প্রোডাকশন কন্ট্রোলার, স্ক্রিপ্ট রাইটারদের নিয়ে পরিচালক বসতেন। এখন শুট শেষ করেই এডিটরকে দেয় সম্পাদনা করতে- কোনো সমন্বয় নেই। আলোচনা নেই। পরামর্শ নেই। এ কারণেই সিনেমার বেহাল অবস্থা। এখন শিল্পী বা পরিচালক জানে না আজকের শুটিংয়ে কি সংলাপ দেবে? আগে কিন্তু শিল্পীদের এগুলো জানতে হতো। এ নিয়ে পরিচালক শিল্পী প্রয়োজনে একাধিকবার আলোচনা করতেন।  অর্থাৎ একটা টোটাল টিমওয়ার্ক। 

রাহাত সাইফুল : কিন্তু চলচ্চিত্র পরিচালকের ভাবনাই তো চূড়ান্ত। এ ক্ষেত্রে চিত্র সম্পাদকের ভাবনা প্রকাশের সুযোগ থাকে কি?

আবু মুসা দেবু : অবশ্যই থাকে। দেখা গেলে পরিচালক তার ভাবনা থেকে শুট করে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু এডিটর মনে করলেন এটা অন্যভাবেও উপস্থাপন করা যায। এবং সেটা আরো নান্দনিক বা দর্শকপ্রিয় হবে। তখন পরিচালকের সঙ্গে আলাপ করে বিষয়টিকে আরো সুন্দর করে উপস্থাপন করা যায়। এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে। দেখা গেল কিছু বাড়তি সিকোয়েন্স আছে সেগুলো ফেলে দিলে সিনেমার জন্য বেটার হয়- সেটাও করা হয়। 

রাহাত সাইফুল : ‘স্টপ জোনোসাইড’র সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হলেন?

আবু মুসা দেবু : ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে বাড়ি যাই। গিয়ে দেখি বোনেরা কেউ নেই, নিখোঁজ। বাবাকে নিয়ে বিলোনিয়া বর্ডারমুখে রওনা হই। প্রথমে আগরতলা যাই। সেখানেও ওদের কাউকে পেলাম না। না পেলে বাবাকে নিয়ে এপ্রিলের শেষের দিকে চলে গেলাম কলকাতা। সেখানে দেখা হলো প্রোডাকশন কন্ট্রোলার চিত্রবর্ধন, ফজলুল হক (ফরিদুর রেজা সাগরের পিতা), আওয়ামী লীগ নেতা মান্নান, পূর্ণিমা সিনেমা হলের মালিক আবুল খায়েরসহ অনেকের সঙ্গে। মনে হলো ঢাকাতেই আছি। একদিন চিত্রবর্ধণ দাদা জানালেন জহির রায়হান ভাই আমাকে খুঁজছেন, শিগগিরই তার সঙ্গে যেন দেখা করি। তার কথামতো জহির ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করি। একটি যুদ্ধের সিনেমার নির্মাণ করবেন আমাকে যোগাযোগ রাখতে বললেন তিনি। তার কথা মতো মানসিক প্রস্তুতি নিলাম। মানে এভাবেই জড়িয়ে পড়লাম।

রাহাত সাইফুল : সে সময় সিনেমা নির্মাণ করাটা নিশ্চয়ই সহজ ছিল না?

আবু মুসা দেবু : যুদ্ধের সময়ের ঘটনা এক ইতিহাস। তখন ইন্ডিয়াতে ছিল নকশালের অত্যাচার। নকশালের খুব বাড়াবাড়ি ছিল! আমি আর জহিরদা কাজ করতাম বেশিরভাগই রাতের বেলা। আমাদের অভ্যাস ছিল সারা রাত কাজ করে তিনটার সময় বের হতাম। ওখানকার মানুষ আমাদের নিয়ে টেনশনে থাকতো। বলতো- নকশালের সময় এত রাতে বের হন যদি কোনো কিছু হয়ে যায়। আমরা বলাতাম- আমরা তো জয় বাংলার লোক। 

তারা//


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়