ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

এ বছর হারিয়েছি যেসব তারাদের

শাহিন শুভ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩  
এ বছর হারিয়েছি যেসব তারাদের

বাংলার শিল্প ও সংস্কৃতির উন্নয়নে অনেক গুণী ব্যক্তিত্বের অবদান রয়েছে। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও অবদানের ফল আজকে আমাদের এই সাংস্কৃতিক অঙ্গন। তাদের অনেকেই এ বছর চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে। নিয়তির এক অমোঘ নিয়মে তারা পাড়ি জমিয়েছেন না-ফেরার দেশে। মৃত্যুজনিত শূন্যতা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। তবুও চিরাচরিত এ নিয়মে ২০২৩ সালে আমরা যাদের হারিয়েছি তাদের স্মরণে এই প্রতিবেদন।

আকবার হোসেন পাঠান ফারুক
ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ও সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক চলতি বছরের ১৫ মে মারা যান। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। পাঁচ দশকের বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে অভিনয় করেছেন বহু দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্রে। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমা হলো— ‘সারেং বৌ’, ‘লাঠিয়াল’, ‘সুজন সখী’, ‘নয়নমনি’, ‘মিয়া ভাই’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সাহেব’, ‘আলোর মিছিল’, ‘দিন যায় কথা থাকে’ ইত্যাদি। ‘মিয়া ভাই’ চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর চলচ্চিত্রাঙ্গনে ‘মিয়া ভাই’ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন তিনি। তা ছাড়াও ২০১৬ সালে আজীবন সম্মাননা পান এই গুণী অভিনেতা।

সোহানুর রহমান সোহান
ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় পরিচালক ছিলেন সোহানুর রহমান সোহান। গত ১৩ সেপ্টেম্বর নিজ বাসায় ঘুমের মধ্যে মারা যান তিনি। নির্মাণ ক্যারিয়ারে বহু ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন। তার হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসেন সালমান শাহ, মৌসুমী, পপি, ইরিন জামান, শাকিব খানসহ অনেকে। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘অনন্ত ভালোবাসা’, ‘আমার জান আমার প্রাণ’, ‘কোটি টাকার প্রেম’, ‘সে আমার মন কেড়েছে’সহ বহু সিনেমার পরিচালক তিনি।

পান্না কায়সার
শহীদজায়া অধ্যাপক ও অভিনেত্রী শমী কায়সারের মা পান্না কায়সার চলতি বছরের ৪ আগস্ট মারা যান। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলা’র স্লোগানে পরিচালিত শিশু-কিশোরদের সংগঠন খেলাঘর নিয়ে আজীবন সক্রিয় ছিলেন।

শফি বিক্রমপুরী
ঢাকাই চলচ্চিত্র নির্মাতা, প্রযোজক ও পরিবেশক শফি বিক্রমপুরী গত ১৮ অক্টোবর ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। ‘রাজদুলারি’ ‘আলাদিন আলিবাবা সিন্দাবাদ’, ‘দেনমোহর’, ডাকু মনসুর’, ‘বাহাদুর’, ‘বন্দুক’, ‘সবুজ সাথীসহ বেশ কিছু সিনেমার পরিচালনা ও পরিবেশনা করেন তিনি।

হুমায়রা হিমু
চলতি বছরের ২ নভেম্বর মারা যান ছোট পর্দার অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু। ‘বাড়ি বাড়ি সারি সারি’, ‘এফএনএফ’, ‘হাউজফুল’, ‘গুলশান এভিনিউ’সহ অনেক জনপ্রিয় নাটকে অভিনয় করেন তিনি। তা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ চলচ্চিত্রে ‘অরু’ চরিত্রে অভিনয় করে দারুণ প্রশংসা কুড়ান এই অভিনেত্রী।

সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী
‘ঘুড্ডি’খ্যাত নির্মাতা সৈয়দ সালাহউদ্দীন জাকী গত ১৮ সেপ্টেম্বর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নির্মাতা পরিচয়ের বাইরেও সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী কাহিনিকার, সংলাপ রচয়িতা, চিত্রনাট্যকার ও লেখক হিসেবে পরিচিত। ১৯৮০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত নিজের প্রথম চলচ্চিত্র ‘ঘুড্ডি’ দিয়ে দর্শকদের পাশাপাশি চলচ্চিত্র সমালোচকদেরও মন জয় করেন। এই সিনেমার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এরপর ‘লাল বেনারসি’, ‘আয়না বিবির পালা’সহ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। গত শতকের নব্বই দশকের শেষ দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক হিসেবেও কর্মরত ছিলেন তিনি।

জিনাত বরকতুল্লাহ
একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী জিনাত বরকতউল্লাহ চলতি বছরের ২০ সেপ্টেম্বর নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ধারায় নৃত্যচর্চার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন জিনাত বরকতউল্লাহ।

পিয়ারী বেগম
বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর অন্যতম নারী চরিত্রে অভিনয় করা পিয়ারী বেগম গত ৩০ মে নিজ বাসায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।

এম খালেকুজ্জামান
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অভিনেতা এম খালেকুজ্জামান গত ২১ মার্চ নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অসংখ্য মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। ১৯৭৫ সালে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী হন। সেসময়ে তিনি নায়করাজ রাজ্জাক ও কবরীর সঙ্গে কামাল আহমেদ পরিচালিত ‘অনির্বাণ’ সিনেমায় অভিনয় করেন। অভিনয়জীবনের শুরুতে টিভিতে ‘তমা’, ‘বড় বাড়ি’, ‘সময় অসময়’, ‘সুবর্ণ সময়’ নাটকে অভিনয় করে বেশ প্রশংসিত হন খালেকুজ্জামান।

বুলবুল মহলানবীশ
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক ও প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী বুলবুল মহলানবীশ গত ১৪ জুলাই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৭ জুলাই রাষ্ট্রীয় সম্মান ও ফুলেল শ্রদ্ধায় শেষ বিদায় জানানো হয় তাকে।

মোহন খান
নাট্যনির্মাতা, নাট্যকার ও প্রযোজক মোহন খান গত ৩০ মে মারা যান। তার পরিচালিত প্রথম নাটক ‘আমার দুধমা’ বিটিভিতে প্রচার হয়। তার লেখা ও পরিচালিত নাটকগুলো হলো— ‘সমুদ্রে গাঙচিল’, ‘সেই আমরা’, ‘নীড়ের খোঁজে গাঙচিল’, ‘জেগে উঠো সমুদ্র’, ‘মেঘবালিকা’, ‘দূরের মানুষ’, ‘আঙ্গুর লতা’, ‘হৃদয়পুরের গল্প’ ইত্যাদি।

রাজীব আশারাফ
‘হোক কলরব ফুলগুলো সব/ লাল না হয়ে নীল হলো ক্যান’— অর্ণবের গাওয়া তুমুল জনপ্রিয় এ গানসহ আরো অনেক গীতিকবিতার রচয়িতা রাজীব আশরাফ ১ সেপ্টেম্বর মারা যান। মাত্র ৩৮ বছর বয়সে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

তারেক মাহমুদ
চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান নাট্যনির্মাতা-অভিনেতা তারেক মাহমুদ। তার ছায়ালোক মিডিয়া স্টেশন নামে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ছিল। এর ব্যানারে ‘চটপটি’ শিরোনামে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে হাত দিয়েছিলেন। যদিও তা শেষ করে যেতে পারেননি। তারেক মাহমুদের আরেক পরিচয় তিনি একজন কবি। কথাসাহিত্য, প্রবন্ধ, চলচ্চিত্র, নাটক, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি বিষয়েও তার লেখা বই প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কালার বাঁশি’ প্রকাশ হয় ১৯৯৭ সালে।

ঢাকা/শান্ত

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়