ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

টুয়েলভথ ফেইল : বিসিএস পরীক্ষার্থীদেরও গল্প

মুজাহিদ বিল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০৪, ৫ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২০:০৬, ৫ জানুয়ারি ২০২৪
টুয়েলভথ ফেইল : বিসিএস পরীক্ষার্থীদেরও গল্প

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রীতিমতো ঝড় তুলেছে ভারতীয় সিনেমা ‘টুয়েলভথ ফেইল’। নানা সংগ্রামের ভেতর দিয়ে এগিয়ে গিয়ে আইপিএস অফিসার হওয়া মনোজ শার্মা সুখ এবং শোকে ভাসিয়েছেন দর্শককে। এটি শুধু সিনেমা নয়, রয়েছে বাস্তবতা। সেই বাস্তব গল্প সিনেমায় রূপ দিয়েছেন বিধু বিনোদ চোপড়া।

২০১৯ সালে প্রকাশ হয় অনুরাগ পাঠকের লেখা উপন্যাস ‘টুয়েলভথ ফেইল’। উপন্যাসের বাস্তব দুই চরিত্র ভারতের আইপিএস কর্মকর্তা মনোজ শর্মা এবং আইআরএস কর্মকর্তা শ্রদ্ধা জোশি। মনোজের গল্প উঠে এসেছে এখানে। সেই উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। 

ছোটবেলা থেকেই নানা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বড় হতে হয় মনোজ কুমার শার্মাকে। জীবনের জন্য কখনো অটো চালিয়েছেন, আবার কাজ করেছেন আটার মিলে। মাধ্যমিকে পাস করার পর দ্বাদশ শ্রেণীতে ফেল করেন মনোজ। যাকে বলা হয় ডাহা ফেল। হিন্দি ছাড়া সব বিষয়ে ফেল করেন মনোজ। মূলত এ থেকেই সিনেমাটির নামকরণ- টুয়েলভথ ফেইল। এরপর অবশ্য পাস করলেও রেজাল্ট ভালো করতে পারেননি মনোজ। 

জানা যায়, ভারতের উত্তরাঞ্চলের দুর্নীতিপ্রবণ গ্রাম চাম্বালে জন্ম মনোজ শর্মার। স্কুল কলেজে যেখানে সবাই পাস করে নকল করে। এমনকি এর সঙ্গে যুক্ত থাকেন শিক্ষকরাও। সেই গ্রামে সততা নিয়ে বাঁচতে চান মনোজের বাবা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় চাকরি হারান তিনি। পরীক্ষায় ফেল করায় গাড়ি চালাতে শুরু করেন মনোজ এবং তার ভাই। হঠাৎ মনোজের অটো আটক করেন এক অসৎ পুলিশ অফিসার। সেই অটো ছাড়িয়ে আনতে গিয়ে এক সৎ পুলিশের সাক্ষাৎ পায় মনোজ। সেখান থেকেই সে স্বপ্ন দেখতে থাকে আইপিএস অফিসার হওয়ার। 

এরপর মনোজ পাড়ি জমান গোয়ালিয়র। ছোট ছোট কাজ এবং টেম্পু চালিয়ে জীবন ধারণ করতে থাকেন। কখনো রাস্তায়, আবার কখনো ভিখারীদের সঙ্গে ঘুমাতে হতো তাকে। এরপর কাজ পান লাইব্রেরি পিয়নের। সেখান থেকেই ইচ্ছেটা আরো বেড়ে যায় তার। ফাকে ফাকে পড়ালেখা করেন মনোজ। এরপর গোয়ালিয়র থেকে দিল্লি। সেখানে অনেক সময় ধনীদের কুকুর দেখাশোনার কাজ করতে হয়েছে তাকে। এরপর তার জীবনে আলো হয়ে আসে শ্রদ্ধা।

উত্তরাখণ্ডের মেয়ে শ্রদ্ধা জোশিও দিল্লি আসেন চাকরির প্রস্তুতির জন্য। শ্রদ্ধা প্রথমবারেই আইআরএস অফিসার হলেও তিনবার ব্যর্থ হন মনোজ। চতুর্থবারের মাথায় আইপিএস অফিসার হন তিনি। গোটা ভারতে ১২১ ব়্যাঙ্ক করেছিলেন। অবশেষে ২০০৫ সালে মনোজ কুমার ও শ্রদ্ধা ঘর বাঁধেন। এই বাস্তব গল্পই তুলে ধরা হয়েছে সিনেমায়।  

২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর মুক্তি পায় সিনেমাটি। ২৯ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছে ডিজনি প্লাস হটস্টারে। এরপরই আলোচনা চারপাশে। মুভি ডাটাবেজে (আইএমডিবি) সিনেমাটির রেটিং ১০-এর মধ্যে ৯.২। 

সিনেমায় মনোজ কুমার শর্মা চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিক্রান্ত ম্যাসি। জোশির চরিত্রে আছেন মেধা শঙ্কর। দারিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা মনোজের আইপিএস অফিসার হওয়ার গল্পই মূলত সিনেমায় উঠে এসেছে। সিনেমাটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যেও। অনেকেই নিজেকে মনোজ ভাবতে শুরু করেছেন। অসংখ্য বিসিএস প্রার্থীর মাথায় গেথে গেছে এই সিনেমার নাম। অনেকে অনুপ্রেরণা মানছেন এই সিনেমাকে। সুতরাং এ কথা এখন বলাই যায়, টুয়েলভথ ফেইল এখন আর নিছক একটি সিনেমা নয়। 

তারা//


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়