ঢাকা     শনিবার   ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৬ ১৪৩১

সহজ শর্তে ঋণ, তবুও আম-ছালা হারানোর ভয় 

রাহাত সাইফুল  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৪, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৬:৩৯, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
সহজ শর্তে ঋণ, তবুও আম-ছালা হারানোর ভয় 

চলচ্চিত্রে মন্দা বাতাস বইছে। প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা দিনদিন কমছে। যেসব সিনেমা হল রয়েছে অধিকাংশেরই বেহাল দশা, জরাজীর্ণ। প্রেক্ষাগৃহের দৈন্যদশা কাটাতে নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য সরকারের পরামর্শে সহজ শর্তে মাত্র ৫ শতাংশ সুদে এক হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তহবিল গঠনের দু’বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ৫ কোটি টাকা নিয়েছে স্টার সিনেপ্লেক্স। বাকি ৯৯৫ কোটি টাকার তহবিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পড়ে আছে। সহজ শর্ত, তুলনামূলক কম সুদ ও দীর্ঘমেয়াদি হওয়ার পরও এ ঋণে আগ্রহ নেই কেন? এমন প্রশ্ন উঠেছে। 

রাজধানীর অন্যতম পুরোনো সিনেমা হল ‘মধুমিতা’। ইদানিং প্রায়ই সিনেমা হলটি বন্ধ থাকে। এই সিনেমা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘ভালো সিনেমা কই? হলে চলবে এমন সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে না। সিনেমা না চললে হল দিয়ে কি হবে? ঋণ করে সিনেমা হল বানালে আম ছালা দুটাই যাবে। সরকার সহজ শর্তে ঋণ দিচ্ছে পাশাপাশি নির্দিষ্ট টাইমও দিয়েছে। এর মধ্যে টাকা শোধ করতে হবে। কিন্তু সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে না চললে এই টাকা ফেরত দিবে কীভাবে? টাকা পরিশোধ  করতে না পারলে সিনেমা হলইতো সরকার নিয়ে যাবে। তখন আম ছালা দুই-ই যাবে। সে কারণেই ঋন নিচ্ছে না অনেকে।’

এদিকে সিনেমা দর্শক টানতে ব্যর্থ হচ্ছে উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, ‘বছরে একটা-দুটা সিনেমা ভালো যাচ্ছে। বাকি সময় সিনেমা হলে দর্শক টানছে না। তাছাড়া এখন দ্বিতীয়বার সিনেমা এনে হলে চালানো যাচ্ছে না। কারণ সিনেমা মুক্তির কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ওটিটিতে দেয়া হয়। সেকারণে হলে আর চলে না। সারা বছর মানহীন সিনেমা চলছে। দর্শক এসব দেখে না।’

তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘আমি মনে করি সিনেমা হল নির্মাণে টাকা না দিয়ে সিনেমা নির্মাণে অনুদান বাড়ানো উচিত। ভালো সিনেমা নির্মাণ হলে দর্শক হলে যাবে। তখন সিনেমা হল নির্মাণে অনেকে আগ্রহী হবেন।’

রাজধানীর ‘সনি’ সিনেমা হলের কর্ণধার ও চলচ্চিত্র প্রযোজক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘সিনেমা হল নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ঋণ না নেয়ার একমাত্র কারণ সিনেমা ভালো যাচ্ছে না। ঋণ করে সিনেমা হল নির্মাণ করবে কিন্তু সিনেমা না চললে লাভ কি? যে কারণে কেউ ঋণ নিচ্ছে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি অনেককেই বুদ্ধি দিয়েছিলাম- সিনেমা হলের পাশাপাশি মার্কেট করার। মার্কেট করে সিনেমা হল দিলে ঝুঁকি থাকে না। আমি নিজেও নতুন করে তিনটি সিনেমা হল করার উদ্যোগ নিয়েছি। এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছি।’

হল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ‘ঋণ নিতে চাচ্ছে না বিষয়টা ঠিক না। ঋণ নিতে চাচ্ছে অনেকে। কিন্তু কিছু নিয়ম-কানুনের জন্য পাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত ৫০ জন আবেদন করেছেন। আমি মনে করি নিয়ম-কানুন একটু শিথিল করা হলে ঋণ অনেকে নেবে। হল মালিকদের সুবিধার্থে নিয়ম-কানুন একটু শিথিল করার অনুরোধ করছি। যেমন ধরুন একজনের বাবার পাঁচ সন্তান থাকলে এখানে হল নির্মাণ করবেন একজন কিন্তু পাঁচ ভাইয়েরই দলিল দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া পূর্বে যার কাছ থেকে জমি কিনেছেন তারও কাগজ জমা দিতে হচ্ছে। এসব কারণে অনেকেই আগ্রহ হারাচ্ছে এবং অনেকের কাগজ জমা পরে আছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা অনুরোধ করছি, ব্যাংক যেন আমাদের সহযোগিতা করে। তাদের সহযোগিতা পেলে হল নির্মাণ ও সংস্কারে ঋণ অনেকে নেবে। ’

তহবিল গঠনের পর ঋণ নেওয়ার জন্য প্রথমে ২০২২ সালের মার্চের মধ্যে ব্যাংকগুলোকে আবেদন করতে বলা হয়। পরবর্তী সময়ে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। এরপরও সাড়া না পেয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আরেক দফা সময় বাড়ানো হয়েছে। এ দফায় আবেদনের শেষ সময় চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। 

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিনেমা হল সংস্কার ও নির্মাণে কম সুদে এক হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ তহবিল থেকে ব্যাংকগুলোকে মাত্র দেড় শতাংশ সুদে অর্থ নিয়ে বিতরণের কথা। হলের অবস্থান মেট্রোপলিটন এলাকার মধ্যে গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৫ শতাংশ। মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদ নিতে পারবে ব্যাংক। নতুন সিনেমা হল স্থাপনে সর্বোচ্চ ১০ কোটি এবং বিদ্যমান হল সংস্কারে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ৮ বছরের জন্য এখান থেকে ঋণ নেওয়া যাবে।

শান্ত//


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়