ঢাকা     বুধবার   ২০ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৫ ১৪৩১

তারায় তারায় প্রেম: নার্গিসের বিশ্বাস ভাঙেননি সুনীল

আমিনুল ইসলাম শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১৬, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ০৮:৩৯, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
তারায় তারায় প্রেম: নার্গিসের বিশ্বাস ভাঙেননি সুনীল

ভারতীয় সিনেমার উল্লেখযোগ্য অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম নার্গিস দত্ত। মূলত, বলিউড সিনেমায় অভিনয় করে মুঠো মুঠো ভালোবাসা কুড়িয়েছেন। মেধা, রূপ-লাবণ্য সমসাময়িক অন্যদের থেকে তাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ২০ বছর বয়সে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেও তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন এই অভিনেত্রী।

অভিনেতা রাজ কাপুরের সঙ্গে বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করেন নার্গিস। কাজ করতে গিয়ে সহশিল্পীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। দীর্ঘদিন সম্পর্কে থাকার পরও বিষাদের মধ্য দিয়ে ইতি টানতে হয় এই অধ্যায়ের। কিন্তু রাজ কাপুর নার্গিসকে যতটা ব্যথা দিয়ে দূরে সরে যান, সৃষ্টিকর্তা তারচেয়ে বহু গুণে বেশি সুখ দিয়ে তার কাছে পাঠান অভিনেতা সুনীল দত্তকে।

মোহন-জদ্দান দম্পতির মেয়ে নার্গিস। যার কারণে নার্গিস ও সুনীল দত্তের বেড়ে ওঠার আবহ ছিল আলাদা। কারণ সুনীলের পরিবার ছিল বেশ বৈষয়িক, তাদের প্রচুর জমিজমা ছিল। ‘দো বিঘা জমিন’ সিনেমার শুটিং সেটে প্রথম পরিচয় হয় সুনীল-নার্গিসের। প্রথম দর্শনেই সুনীল তার প্রেমে পড়েন। বলা যায়, ওয়ান সাইড লাভ। কিন্তু নার্গিস তা জানতেও পারেন না।

সুনীল যখন নার্গিসের প্রেমে পড়েন, তখন নার্গিস প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী। আর সুনীল তখনো বলিউডে নিজের পায়ের মাটি শক্ত করার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। ভালোবাসার মানুষকে না পেয়ে হতাশায় ভুগছিলেন নার্গিস। এরপর মেহবুব খানের ‘মাদার ইন্ডিয়া’ সিনেমার কাজ হাতে আসে। সুনীল জানতে পারেন সিনেমাটিতে তার সঙ্গে অভিনয় করবেন নার্গিস।

একসঙ্গে একই সিনেমায় কাজ করার সুযোগ পেয়ে খুশি হন সুনীল। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, সিনেমাটিতে মা ও ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেন নার্গিস-সুনীল। কিন্তু এ সিনেমার সেট থেকেই পরস্পরের কাছে আসেন তারা। সিনেমাটির শুটিং সেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ আগুনের বলয় থেকে নার্গিসকে কোলে করে উদ্ধার করেন সুনীল। এতে নার্গিস খুব একটা আহত না হলেও সুনীল মারাত্মকভাবে আহত হন, তাকে ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে। সুনীল যতদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, নার্গিসই দিনরাত তার দেখাশোনা করেন।

এসব ঘটনার পর সুনীলের প্রেমে পড়তে বাধ্য হন নার্গিস। তারা পরস্পরকে চিঠি লেখেন, টেলিগ্রামও পাঠাতেন। কিন্তু কাউকে খুব একটা বুঝতে দেননি। মূলত, টেলিগ্রামেই লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতেন দু’জনে। এক সাক্ষাৎকারে সুনীল জানিয়েছিলেন, তার অসুস্থ বোনকে নার্গিস হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে অস্ত্রোপচার করান এবং কাউকে কোনো রকম ঝামেলা পোহাতেও দেননি তিনি। তখনই সুনীল বোঝেন, নার্গিস তার পরিবারকেই চান।

১৯৫৮ সালে গোপনে বিয়ে করেন নার্গিস-সুনীল। পরবর্তীতে জমকালো রিসেপশনের আয়োজন করেন তারা। এক সাক্ষাৎকারে নার্গিস বলেছিলেন, ‘আমি জানতাম, সুনীল আমার সব কথাই মন দিয়ে শুনবে। আমার যত কষ্ট সব সুনীলই বুঝবে। আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না।’ নার্গিসের এই বিশ্বাস কখনো ভাঙেননি সুনীল। এক সাক্ষাৎকারে সুনীল বলেছিলেন, ‘রোমান্সের মানে আমি জানি না। তবে নার্গিস আমার জীবনে এসেছে, এটুকুই আমি বুঝতাম। ওর সততা আমার কাছে খুব জরুরি ছিল।’

সুনীল ও নার্গিস আজীবন পরস্পরের পাশে ছিলেন। এ দম্পতির সঞ্জয় দত্ত, নম্রতা দত্ত, প্রিয়া দত্ত নামে তিন সন্তান রয়েছে। নার্গিসের ক্যানসার ধরা পড়ার পর সবসময় পাশে ছিলেন সুনীল। আমেরিকায় নিয়ে স্ত্রীর চিকিৎসা করিয়েছেন তিনি। কিন্তু নার্গিস বেশিদিন লড়াই করতে পারেননি। ১৯৮১ সালের ৩ মে মারা যান নার্গিস।

২০০৫ সালের ২৫ মে মারা যান সুনীল দত্ত। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত নার্গিসকেই মনে করেছেন তিনি। নার্গিস মারা যাওয়ার পর ব্যক্তিগত জীবনে অনেকটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলেন সুনীল। এ দম্পতির কন্যা প্রিয়া বলেছিলেন, ‘মা মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি বদলে গিয়েছিলেন বাবা। মা মারা যাওয়ার আগের জীবনে ডিসিপ্লিন মেনে চলতেন। কিন্তু মায়ের মৃত্যুর পর বাবার সব বদলে যায়। মাকে নিয়ে অনেক স্মৃতিচারণ করতেন।’  


তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টাইমস, হিন্দুস্তান টাইমস

ঢাকা/শান্ত


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়