চুরি করা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর মাঝেও আনন্দ ছিল: জ্যোতি
আমিনুল ইসলাম শান্ত || রাইজিংবিডি.কম
‘আমার শৈশব কেটেছে গ্রামের বাড়িতে। আমি যে স্কুলে পড়াশোনা করতাম সেখানে কোনো শহিদ মিনার ছিল না। একুশে ফেব্রুয়ারির দিন সকালে মাইকে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি বাজানো হতো। এটি ভীষণ আবেগ তাড়িত করে। ভেতর থেকে নাড়া দেয়। যাই হোক, আমরা তখন গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে ফুল সংগ্রহ করতাম। এরপর স্কুলে গিয়ে ইট দিয়ে শহিদ মিনারের মতো তৈরি করে শ্রদ্ধা জানাতাম।’ — রাইজিংবিডির সঙ্গে আলাপকালে ছোটবেলায় একুশে ফেব্রুয়ারি পালনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এভাবেই কথাগুলো বলেন দুই পর্দার দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি।
চুরি হওয়ার ভয়ে গ্রামের বাড়িতে ফুল গাছের প্রতি আলাদা নজর রাখা হয়। তা জানিয়ে জ্যোতি বলেন, ‘গ্রামে বাড়ির ফুলগুলোর প্রতি সবাই নজর রাখেন, যাতে কেউ ছিঁড়ে নিতে না পারেন। কারণ গ্রামে তো ফুল কিনতে পাওয়া যায় না। ফুলের প্রতি নজর রাখাটা এক প্রকার কপট রাগ বলা যেতে পারে। কারণ ফুল দিতেও চায়, আবার অনেকে ফুল চুরি করে নিয়ে যায়; এতেও আপত্তি। যার কারণে সবাই একটু সতর্ক থাকেন। কিন্তু চুরি করা ফুল দিয়ে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর মাঝেও দারুণ আনন্দ ছিল, এটা অন্যরকম আনন্দ!’
একুশে ফেব্রুয়ারিতে স্কুলে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন জ্যোতি। তা উল্লেখ করে এ অভিনেত্রী বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারিতে স্কুলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতাম। কখনো রচনা প্রতিযোগিতা, কখনো আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতাম। তবে রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় হতাম। মনে আছে, এজন্য পুরস্কার হিসেবে প্লেট পেতাম। এসময়গুলো খুব মনে পড়ে, স্মৃতিকাতর করে তোলে।’
ঢাকায় আসার পর একুশে ফেব্রুয়ারি অন্যভাবে কাটিয়েছেন জ্যোতি। নিয়মিত বেদিতে ফুল দিতে যান। মাঝে কয়েক বছর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে যেতে পারেননি; শহিদ মিনারে না যেতে পারলে খুবই খারাপ লাগে বলেও জানান। কিন্তু যেখানে অবস্থান করেন তার আশেপাশে কোনো বেদিতে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। উত্তরায় থাকাকালে শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ে একা গিয়ে ফুল দিয়ে আসতেন জ্যোতি।
একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বহুবার শহিদ মিনারে সারা রাত কাটিয়েছেন। তা স্মরণ করে জ্যোতি বলেন, ‘কয়েক বছর ২০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত থেকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে কাটিয়েছি। আর এ সময়টাতে রাস্তায় আল্পনা এঁকেছি, কখনো গালে শহিদ মিনার কিংবা বাংলা বর্ণ এঁকেছি। এসব স্মৃতি আবেগ তাড়িত করে। এখন শিল্পকলায় দায়িত্ব পালন করছি। তাই এবার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাব। শিল্পকলা এটা প্রতি বছরই করে থাকে।’
বাংলা ভাষার প্রতি সবার আরো সচেতন হওয়া উচিত বলে মনে করেন জ্যোতি। তা জানিয়ে এ অভিনেত্রী বলেন, ‘‘শোবিজ এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেককে দেখি, তারা কথা বলতে গিয়ে বলছেন, ‘কি করতেছো’, ‘খাইছো’ শব্দ ব্যবহার করছেন। বর্তমান প্রজন্মও এসব শব্দ ব্যবহার করছে। এটা না আঞ্চলিক ভাষা, না শুদ্ধ বাংলা ভাষা। আসলে এটা আমাদের কোনো ভাষাই না। আমি ময়মনসিংহের মেয়ে, আমি আমার আঞ্চলিক ভাষা জানি। এটার আলাদা একটা মাধুর্যতা আছে। কিন্তু যখন জাতীয় বা আন্তর্জাতিক মাধ্যমে কথা বলব, তখন আমাদের শুদ্ধ বাংলা ভাষাটাই উপস্থাপন করা উচিত। ‘খাইছো’, ‘গেছো’-এর যে অনুশীলন করা হচ্ছে এটা খুবই খারাপ। আমার মনে হয়, ভাষার বিষয়ে মানুষের আরো সচেতন হওয়া উচিত।’’
‘আমাদের বাংলা ভাষার জন্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হয়েছে। এটা আমাদের অনেক গর্বের বিষয়। বাংলা ভাষাটাকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। পাশাপাশি সারা দুনিয়াতে বাংলাকে আরো ছড়িয়ে দেওয়া। আর যারা ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করছে, তাদের অবশ্যই বাংলা ভাষাটাও শেখা উচিত।’ বলেন জ্যোতিকা জ্যোতি।
ঢাকা/শান্ত