নিপুণের দুর্গে ডিপজল-মিশার হানা
রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন মানেই আলোচনা-সমালোচনার পাশাপাশি চমক। শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের নির্বাচনে কাঞ্চন-নিপুণের ২১ জনের পরিষদ একাট্টা হয়ে নির্বাচনী মাঠে ছিলেন। এবার এদের অর্ধেকের বেশি সদস্য নিপুণের সঙ্গে নেই। এদের কেউ কেউ সরাসরি ডিপজল-মিশা প্যানেলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আবার অনেকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলে সর্বপ্রথম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান সংগঠনের সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন। এবার তিনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি জানান, গত নির্বাচনে একজন বড় নেতার অনুরোধে তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
এরপরে নিপুণের প্যানেলে সহ-সভাপতি প্রার্থী ছিলেন অভিনেতা ডিএ তায়েব। তিনি এবার নিপুণের প্যানেল থেকে নির্বাচন করছেন না। তিনি ডিপজল-মিশার প্যানেলে যোগ দিয়েছেন। তার ভাষ্যমতে, নিপুণ কাজ করেনি। ডিএ তায়েব বলেন, গতবার নিপুণের সঙ্গে ছিলাম। তিনি কাজ করেননি। এবার আমি ডিপজল-মিশা প্যানেলের সঙ্গে আছি। আমি মনে করি, ডিপজল ভাই চাইলে নিজেই কাজ করতে পারবেন। তাকে দিয়ে ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়ন হবে। তাই তার সঙ্গে আছি।
নিপুণের প্যানেলের সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিলেন চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক। তিনি সহ-সাধারণ সম্পাদকের পদে নির্বাচন করে জয়ী হন। তিনি সম্প্রতি ক্ষোভ ঝেড়ে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে চিঠি দেন। এদিকে তিনি নির্বাচন করছেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছে। তবে কেন নির্বাচন করবেন না তা পরিষ্কার করেননি এই নায়ক। জানা যায় অনেকটা ক্ষোভ আর অভিমান নিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
এরপরের পদ সাংগঠনিক সম্পাদক। নিপুণের প্যানেল থেকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জয়ী হন নায়িকা শাহনূর। তিনি এবার নিপুণের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ডিপজল-মিশার প্যানেলে যোগ দিয়েছেন। শাহনূর বলেন, আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত হয়েছি। অথচ সংগঠনের অনেক সিদ্ধান্ত আমাকে জানানো হতো না। মিটিংয়ের বাহিরেও অনেক সিদ্ধান্ত হতো। এ বিষয়ে কাঞ্চন ভাইয়ের করার কিছু ছিলো না। উনি সৎ মানুষ। মূলত কয়েকজন মানুষ সংগঠনের সিদ্ধান্ত নিতেন। আমি সাংগঠনিক সম্পাদক কিন্তু আমাকে কোন কাজ করতে দেয়া হয়নি। তাদের ৩-৪ জনের কথাতেই পুরো সমিতি চলতো। একজন সাধারণ সম্পাদকের উচিত সবার কথা শোনা। কিন্তু তিনি (নিপুণ) একজনের কথাতেই কাজ করতেন।
নিপুণের প্যানেলের দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক আরমান গত নির্বাচনে নিপুণের হয়ে কাজ করেছেন। এবার তিনি ডিপজল-মিশা প্যানেলে যোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক ইমনও নির্বাচন থেকে দূরে রয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
নিপুণের প্যানেলে কার্যকরী পরিষদের সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন নায়ক ফেরদৌস আহমেদ। সদ্য নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য এবারের শিল্পী সমিতির নির্বাচণে অংশ নিচ্ছেন না। নিপুণ তাকে সভাপতি পদে নির্বাচনের অনুরোধ করলে তিনি প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
নিপুণের প্যানেলে কার্যকারী সদস্য প্রার্থী ছিলেন নানা শাহ। তিনি এবার ডিপজল-মিশার প্যানেলে যোগ দিয়েছেন। তার ভাষ্য, নিপুণ কথা রাখেননি। তার প্যানেলে গিয়ে ভুল করেছিলাম।
নানা শাহ বলেন, ‘আগেরবার আমি ও ডি এ তায়েব নিপুণের সঙ্গে নির্বাচন করেছিলাম। ভালো কিছু কাজের আশা করেই তাদের সঙ্গে নির্বাচন করেছিলাম। তারা কথা দিয়েছিল সিনেমা নির্মাণ করবে। একটি কথা মনে রাখবেন, শিল্পী সমিতি সিনেমা নির্মাণ করতে পারে না। কিন্তু নিপুণ কথা দিয়েছিল ৬টি সিনেমা নির্মাণ করবে। আমি তার কথা অনুযায়ী এগিয়ে ছিলাম। দুটি সিনেমায় এন্ট্রি করেছিলাম। কিন্তু তারা আমার পাশে আসেনি। আমরা শিল্পীরা সম্মান ও ভালোবাসা চাই। এটা যখন আমরা হারিয়ে ফেলি তখন খুব কষ্ট পাই। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে— আমাদের অনেক শিল্পী এখন বেকার। তাদের জন্য শিল্পী সমিতি দুই বছরে কি করতে পেরেছে? তাই এবার আগেই ঠিক করেছি মিশা-ডিপজল প্যানেলে থাকব। যারা কিছু করতে পারবে তারাই এই প্যানেলে আছে। আগের প্যানেলে প্রযোজক ছিল না। কিন্তু এই প্যানেলে প্রযোজক-পরিচালক ও শিল্পী তিনটিই আছে।
গত নির্বাচনে নিপুণের প্যানেল থেকে নির্বাচন করেছিলেন পরীমণি, কেয়া ও শাকিল খান। এবারের নির্বাচনে তারা অংশ নিচ্ছেন না বলে জানা যায়।
এদিকে নিপুণের প্যানেলে সভাপতি কে হচ্ছেন তা এখনো পরিষ্কার নয়। তার প্যানেলে কারা থাকছেন তা এখনো জানা না গেলেও তার ২০২২-২৪ মেয়াদের প্যানেলে অধিকাংশই তার সঙ্গে থাকছেন না এটা প্রায় নিশ্চিত।
তারা//